জামালপুর-২ আসনে ১৩ প্রার্থী মাঠে
|| রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ফটো
আবদুল লতিফ লায়ন
জামালপুর, ৭ অক্টোবর : ১২টি ইউনিয়ন ১টি পৌরসভাসহ ২৩০টি গ্রাম নিয়ে গঠিত জামালপুর-২ (ইসলামপুর) আসন। এ এলাকায় ৮৫টি ভোট কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৯৫ হাজার ৬ শ’ ১।
এ আসনে বিএনপির দুইজন, আওয়ামী লীগের আট জন, সিবিবি, জামায়াত, জাসদ (ইনু) ও স্বতন্ত্র একজন করে প্রার্থীসহ মোট ১৩ জনের লড়াইয়ের কথা জোরেসোরেই শোনা যাচ্ছে। তবে মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে।
এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিরা হলেন বর্তমান এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল, সেক্টর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার শহীদ খালেদ মোশাররফ (বীরোত্তম) এর কন্যা মাহজাবিন খালেদ বেবী, প্রয়াত ভূমি প্রতিমন্ত্রী রাশেদ মোশারফের বড় ছেলে জাবেদ মোশারফ রূপক, ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও বিমান বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান আলী মন্ডল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র জিয়াউল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অবঃ) আনোয়ারুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বর্ষিয়ান নেতা মরহুম ডাঃ খোরশেদুজ্জামান মিশ্রি মিয়ার ছেলে এড. আব্দুল নাসের বাবুল।
১৯৭০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সবগুলো নির্বাচনেই এ আসনটি দখলে রাখে আওয়ামীলীগ। সাবেক পৌর মেয়র জিয়াউল হক জিয়া ও তৎকালীন কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ সভাপতি রাশেদ মোশারফের নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ। জিয়াউল হক জিয়ার সাথে যোগ হন জাতীয় পার্টির সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি ফরিদুল হক খান দুলাল। কোন্দলের কালো থাবা কেড়ে নেয় দলের এক নেতার জীবন।
২০০১ সালের নির্বাচনে রাশেদ মোশারফের প্রতিপক্ষ হয়ে দলের মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন ফরিদুল হক খান দুলাল। ওই নির্বাচনে দলের ছয় বারের এমপি ও প্রতিমন্ত্রী বর্ষীয়ান কৃষকলীগ নেতা রাশেদ মোশারফকে হারিয়ে বিএনপি’র তরুণ নেতা সুলতান মাহমুদ বাবু সর্বপ্রথম জাতীয়তাবাদী দলের এমপি নিবার্চিত হন।
এরপর জিয়াউল হক জিয়া সভাপতি ও ফরিদুল হক খান দুলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। রাশেদ মোশারফ দলের রাজনীতি থেকে এক প্রকার ছিটকে পড়েন। এক সময় তিনি জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য পদও হারান।
শুরু হয় ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দূর্দিন। দলের দূর্দিনে কান্ডারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হন জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য শাহ্জাহান আলী মন্ডল। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব শাহজাহান আলী মন্ডল ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়ান।
উপজেলাবাসীর কাছের মানুষে পরিনত হন। আগামী নির্বাচনে তিনি দলের র্শীষ মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান ফরিদুল হক খান দুলালকে।
দুলালের নৌকার বিরুদ্ধে উড়োজাহাজ প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নিবার্চনে লড়েন রাশেদ মোশারফের বড় ছেলে জাবেদ মোশারফ রূপক। রূপক বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও এমপি নির্বাচিত হন ফরিদুল হক খান দুলাল।
আগামী নির্বাচনে এমপি’র বিপক্ষে দলের অত্যান্ত ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র জিয়াউল হক জিয়া শক্তিশালী প্রতিপক্ষ।
অন্যদিকে এ আসনে দলের প্রকাশ্য কোন্দলে হতাশ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। সঠিক প্রার্থী নির্বাচনেই আসনটি পুনরুদ্ধার সম্ভব বলে মনে করেন তারা। দীর্ঘ সাড়ে চার বছর ধরে চলছে সাবেক এমপি ও সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিবের মধ্যকার রাজনৈতিক কোন্দল। ফলে উপজেলা বিএনপি দু’টি ধারায় বিভক্ত।
এবারের নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী দুই জন। একজন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জামালপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাবেক এমপি আলহাজ সুলতান মাহমুদ বাবু। অপরজন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ইসলামপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব এএসএম আব্দুল হালিম।
সুলতান মাহমুদ বাবু এলাকায় গণসংযোগ এবং দলীয় সব কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। বাবু এই আসনে দুই বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। উপজেলাবাসী তাকে ইসলামপুরের ‘উন্নয়নের রূপকার’ হিসেবেই জানেন।
এখানে এএসএম আব্দুল হালিম বিএনপিতে যোগদানের পর থেকে কোন্দল শুরু হয় স্থানীয় বিএনপিতে। এক পর্যায়ে মূল দল থেকে শুরু করে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে বিশেষ করে দু’টি গ্রুপে পরিণত হয়। একটি ‘বাবু গ্রুপ’ অপরটি ‘হালিম গ্রুপ’ নামে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে।
একাধিক সূত্র মতে, কেন্দ্রীয়ভাবে আব্দুল হালিমের অবস্থান কিছুটা মজবুত থাকলেও উপজেলায় জনপ্রিয় হওয়ায় মাঠ রয়েছে ‘উন্নয়নের রূপকার’ উপাধিতে ভূষিত সাবেক এমপি সুলতান মাহমুদ বাবুর পক্ষে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খানের বাড়ি এই নির্বাচনী আসনে। তাই প্রতিটি সংসদ নিবার্চনে এখানে সিপিবি’র মনোনিত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে থাকেন। মহাজোটের শরীক দল জাসদ (ইনু) মহাজোট থেকে এবার মনোনয়ন চাইবেন এ আসনে। উপজেলা সভাপতি লুৎফর রহমান জাসদের মনোনয়ন প্রার্থী।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা স্থানীয় আমেনা মমিন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা রাশিয়া ফেরত তরুণ ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান লুইসের নাম আলোচনায় এসেছে। লুইস এ আসনে নতুন মুখ। নির্বাচনে নতুন হলেও ইসলামপুরে তার বহুল পরিচিতি রয়েছে।
চার দলীয় জোট গঠনের আগে এ আসনে জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ ছামিউল হক ফারুকী দুই বার সংসদ নিবার্চনে অংশ নিলেও এমপি হওয়ার মতো অবস্থান সৃষ্টি করতে পারেননি। এবার তিনি ১৮ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় সেটি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।
জাতীয় পার্টির টিকেট নিয়ে এ আসন থেকে আশরাফুদ্দৌলা পাহলোয়ান ফেক্কু মিয়া একবার এমপি নির্বাচিত হন। বর্তমানে এ আসনে জাতীয় পার্টির চরম নেতৃত্বশূন্যতা রয়েছে। জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করলে কর্ণেল (অবঃ) রেজাউল করিমের কোনো বিকল্প নেই এ আসনে।
এ দিকে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের অত্যান্ত ঘনিষ্ঠ মোশারফ পরিবারের আরেক সদস্য সেক্টর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার শহীদ খালেদ মোশাররফ (বীরোত্তম) এর কন্যা মাহজাবিন খালেদ বেবী নিবাচনী মাঠে আসায় হিসেব-নিকেশ অনেকটা পাল্টে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে তিনি অঘোষিত সকরারি প্রটোকল নিয়ে দু’দফা নির্বাচনী এলাকা সফর করে গেছেন। তার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী তাকে এ আসনে মনোনয়ন নিশ্চিত করেই পাঠিয়েছেন। স্থানীয় নেতাকর্মী ও সূধী সমাজের লোক জনের সাথে কয়েক দফা মতবিনিময়ও করেছেন বেবী।
রাইজিংবিডি/শামটি
রাইজিংবিডি.কম