ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিদায়ের গল্পে বিষাদ স্মৃতি

সানজিদা জান্নাত পিংকি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৭, ৪ জুন ২০২৩   আপডেট: ২২:২৯, ৪ জুন ২০২৩
বিদায়ের গল্পে বিষাদ স্মৃতি

হাসিবুল শান্ত, অন্নপূর্ণা দেবনাথ রিয়া, সালমান শাহ, আয়েশা বিশ্বাস (ঘড়ির কাটার দিকে)

গণ বিশ্ববিদ্যালয়; যেখানে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে প্রতিটি পরতে পরতে মিশে যায় প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রাণ। এই প্রাঞ্জল ক্যাম্পাসের মূল ফটক থেকে শুরু করে বাদামতলা, হিটলার চত্বর, ট্রান্সপোর্ট চত্বর কিংবা নানীর টং- সর্বত্রই বিচরণ করে তারা। প্রতিবছর যেমনি শত আশা-প্রত্যাশা নিয়ে তরুণ প্রাণের আগমণ ঘটে এই ক্যাম্পাসের চৌকাঠে। ঠিক তেমনি কিছু তরুণ প্রাণ পূর্ণতা পেয়ে অশ্রুসজল চোখে ছাড়ে এই ৩২ একরের বাড়ি। যে বাড়িতে তারা রেখে যায় হাজারো স্মৃতি।

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের বিদায়কালে অনুভূতি ও চাওয়া-পাওয়ার গল্প লিখেছেন সানজিদা জান্নাত পিংকি

‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় আমৃত্যু বহন করবো’
একটি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি জাতির জন্য জ্ঞান অর্জনের গুদামঘর নয়। বিশ্ববিদ্যালয় একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণ কাজে সহায়তা করে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ৪ টা বছর কাটানো হয়েছে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে, এখানে অগণিত স্মৃতিময় মুহূর্ত।
আমার ক্যাম্পাস আমার নিকট আবেগ, ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধার অপর নাম। ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী’ পরিচয়টি আমি আমৃত্যু বহন করবো। এই বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো দেওয়া। একাডেমিক শিক্ষার বাহিরে এখানে আমি কিছু মানুষ পেয়েছি যাদের মানবিকতা আমাকে অনুপ্রাণিত ও উচ্ছ্বসিত করেছে। যা জীবনের জন্য অনেক বড় এক প্রাপ্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি কোনো অভিমান নেই তবে অভিযোগ আছে অসংখ্য, সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে বলবো, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এখনো বহুক্রোশ পিছিয়ে আছে। আধুনিকায়নের যুগে আমরা এখনো আদিমযুগের মনোভাব নিয়ে চলি যা দুঃখজনক। যার উন্নয়ন করা জরুরি। আমি গণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের মূলনীতিকে শ্রদ্ধা করি, যা নিজ জীবনে প্রয়োগের ব্যাপক আগ্রহ পোষণ করি। তাই ভবিষ্যতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছে আছে।
- হাসিবুল শান্ত, ৭ম ব্যাচ, বিএমবি বিভাগ।

‘সার্টিফিকেটই একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়’
জীবনের একটা বড় সময় কেটেছে প্রিয় ক্যাম্পাসে। ভালো-মন্দ নিয়েই মানব জীবনের গতিময়তার সূত্র ধরে ক্যাম্পাস জীবনে রয়েছে অনেক স্মৃতি। প্রথমবর্ষের স্মৃতিই প্রবল, যেন এক নতুন অধ্যায়ের শুরু। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে কর্মজীবনে পা রাখতে হবে, তখন মনে পড়বে ছাত্রজীবন। ভালোবাসার ক্যাম্পাসে আক্ষেপের ডায়েরির পাতায় আছে মহামারির সময়। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশ পড়তে ভালোবাসে না, জানার অনাগ্রহ প্রবল। যেন সার্টিফিকেট লাভ একমাত্র উদ্দেশ্য। আমি মনে করি, এই মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে আরো জানার জন্য এবং শেখার জন্য আগ্রহী করে তুলতে হবে। একাডেমিয়ার বাইরেও ভাবতে হবে। ক্যাম্পাস জীবিনে অনেক জ্ঞানী এবং গুণী ব্যক্তিদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে, তাদের থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা, জীবনে কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো। আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছা নিজের পরিবর্তনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশের জন্য কিছু করার। এ জন্য আমি আগে নিজেকে পরিবর্তন করতে চাই এবং একজন ভালো মানুষ হতে চাই।
- অন্নপূর্ণা দেবনাথ রিয়া, ২৬তম ব্যাচ, ইংরেজি বিভাগ।

‘এই ক্যাম্পাস সত্যিকারের মানুষ হতে শিখিয়েছে’
ক্যাম্পাসের স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো আজীবন স্মৃতির মণিকোঠায় রয়ে যাবে। স্মৃতির আকাশে উঁকি দিবে সেই নানা রঙের, ভালোবাসাময় দিনগুলো। ক্যাম্পাস থেকে বিদায় নিলেও এই দিনগুলো ভুলতে পারবোনা। স্নেহ, বন্ধুত্ব, সম্মান, ভালোবাসা, আন্তরিকতা, বন্ধুসুলভ শিক্ষকদের ভালোবাসা শব্দগুলোর একই সূত্রে গাঁথা এই বিদ্যাপীঠ। দেশের ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে আগত ভিন্ন মানসিকতা, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ধর্মের ছেলেমেয়েগুলোর সঙ্গে মিশতে পেরেছি এখানেই। যাদের সঙ্গে তৈরি হয়েছে আত্মার সম্পর্ক। এই বন্ধুত্ব জাতি, ধর্ম, বর্ণ সব কিছুর ঊর্ধ্বে। যা আমাকে শিখিয়েছে সহমর্মী, সমব্যথী, বিনয়ী ও দূরদর্শী হতে। বন্ধু ছাড়া ক্যাম্পাস যেন এক মরুভূমি। নিবিড় প্রয়োজনে এখানে বন্ধুরাই অবতীর্ণ হয় মা, বাবা, ভাইয়ের ভূমিকায়। তাই বন্ধুদের কাছে আজীবন রয়ে যায় বন্ধুত্বের ঋণ। এই ক্যাম্পাস শিখিয়েছে সত্যিকারের মানুষ হতে, মানুষকে আপন করে নিতে। শত-সহস্র স্মৃতিতে ঘেরা আমাদের ৩২ একরের ক্যাম্পাসটি। এই বিদ্যাপীঠ মানবিক মানুষ হতে শিখিয়েছে, তাই ভবিষ্যতে নিজ সাধ্যমতো অসহায়ের সেবা করবো।
- সালমান শাহ, ২৮তম ব্যাচ, কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিন হোক’
বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে আনন্দঘন সময়টা কেটেছে বন্ধুদের সঙ্গে। তার মাঝে শীতের সকালে বন্ধুরা মিলে মাঠে বসে চা-আড্ডা দেয়াটা সবচেয়ে প্রিয়। স্কুল লাইফের পর সবচেয়ে বেশি সময় কেটেছে এই ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাস হলো আমার কাছে আরেকটি পরিবারের মতো। যেখানে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়া যায়। বাদামতলার আড্ডাগুলো মনে পড়বে আজীবন। আমি একটি ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় চলার সুযোগ পেয়েছি, যেখানে সবাইকে সমান সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। আমি মনে করি, গণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া এই শিক্ষাটাই সকলের ব্যক্তিজীবনে বেশি কাজে লাগবে। প্রিয় বিদ্যাপীঠ থেকে শেষকালে একটা সুন্দর সমাবর্তন কাম্য। এই চমৎকার ক্যাম্পাসের একটি বিষয় বারবার ভাবিয়ে তোলে, সেটা হলো ক্যান্টিন। এমন কোনো ছাত্র হয়তো পাওয়া যাবে না যার এই প্রসঙ্গে ক্ষোভ নেই। বিদায়ী শিক্ষার্থী হিসেবে একটি সুসজ্জিত-স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিন চাই।
- আয়েশা বিশ্বাস, ৩৬তম ব্যাচ, ফার্মেসি বিভাগ।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

/ফিরোজ/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়