ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

যে কারণে রমজানের পবিত্রতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে

প্রকাশিত: ১৪:১৩, ৩০ মার্চ ২০২৩  
যে কারণে রমজানের পবিত্রতা অবশ্যই রক্ষা করতে হবে

রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সওগাত নিয়ে প্রতি বছর আসে সাধনা ও আত্মশুদ্ধির মাস রমজান। এই মাস কোরআন নাজিলের মাস। কাম, ক্রোধ, মোহ ও রিপু দমন করার মাস। আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য্য ও খোদাভীতি অর্জনের মাস। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে সমাজের হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষুধার যন্ত্রণা গভীরভাবে উপলব্ধি করার মাস। সাধনা সহানুভূতি সর্বোপরি মহান রাব্বুল আলামিনের ক্ষমা ও নৈকট্য অর্জনের মাস।

মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণী, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর; যাতে তোমরা খোদাভীতি অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৩)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সাওয়াব অর্জনের আশায় সিয়াম আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)

দয়াময় আল্লাহ পবিত্র মাহে রমজানে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন নাজিল করে এ মাসকে সকল মাসের উপর মর্যাদাবান করেছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে কোরআন নাজিল করা হয়েছে; যা মানুষের হিদায়াত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্যকারী। (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫)

কোরআন-হাদীস গবেষণা করলে জানা যায় যে, শুধু কোরআনই নয়; বরং প্রায় সকল আসমানী গ্রন্থ রমজান মাসে অবতীর্ণ হয়েছে। মুসনাদে আহমদ গ্রন্থে হযরত ওয়াসিলা ইব্নে আসকা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল, কোরআন এবং হযরত ইবরাহিম (আ.)-এর সহিফা রমজান মাসেই নাজিল হয়েছে।

হযরত জিবরাঈল (আ.) প্রত্যেক রমজান মাসে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে কোরআন পাঠ করে শোনাতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকেও কোরআন শুনতেন।

রমজান শব্দের অর্থ জ্বালিয়ে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি। যেহেতু এ মাসে দয়াময় আল্লাহ রোজাদার বান্দাদের গুনাহসমূহ জ্বালিয়ে দেন তাই এ মাসকে রমজান বলে নামকরণ করা হয়েছে। 

মহান আল্লাহ এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেন। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করেন।  শয়তানকে আবদ্ধ করে রাখেন এবং দিনে-রাতে প্রতিনিয়ত অগণন মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন।

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয় এবং শয়তানকে আবদ্ধ করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, (মাহে রমযানে) প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা করেন এবং প্রত্যেক মুসলমানের দোয়া কবুল করেন। (মুসনাদে আহমদ)

আল্লাহ তায়ালা মাহে রমজানে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রজনী ‘লাইলাতুল কদর’ দান করে এ মাসকে আরো মহিমান্বিত করেছেন এবং তিনি পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘কদরের রজনী’ হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। (সূরা কদর, আয়াত-০৩)

হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কদরের রজনীতে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় ইবাদতের জন্য দন্ডায়মান হয়, তার পিছনের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (বুখারী, মুসলিম)

এ মাসে দয়াময় আল্লাহর রহমতের সাগরে জোয়ার আসে। তাঁর অফুরন্ত নেয়ামতরাজি বৃষ্টির ন্যায় অবিরাম বর্ষিত হয়। ক্ষমার দরজা সকলের জন্য অবারিত করা হয় এবং অভিশপ্ত শয়তানকে শৃংখলিত করা হয়। আর মাসজুড়ে মুমিনদের মাঝে শুরু হয় স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের এক মহা আয়োজন। 

দয়াময় প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এই সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এ মাসে নিজের ভুলত্রুটি ও গুনাহসমূহ ক্ষমা করাতে পারলো না, তার চেয়ে হতভাগা এ জগতে আর কেউ নেই।

তাই আসুন! গুনাহমুক্ত জীবন গঠন ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের প্রত্যয়ে পবিত্র মাহে রমজানকে বরণ করুন। মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করুন। খাদ্যে ভেজাল, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, প্রতারণা, মুনাফাখোরি ও মজুতদারিসহ সকল অপরাধকে ‘না’ বলুন। জুলুম, মিথ্যা, গীবত, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা, হিংসা, অহঙ্কারসহ সকল প্রকার অন্যায় ও অশ্লীলতা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। ইসলাম, সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকুন। সমাজের উপেক্ষিত, অসচ্ছল ও অভাবী মানুষের পাশে দাঁড়ান। বিশেষ করে মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত মহান মালিকের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের প্রয়াসে ব্যয় করুন। মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাওফিক দান করুন।

লেখক: মুফাসসিরে কুরআন ও ইসলামী গবেষক

শাহেদ//

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়