ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত রিপন আরেক মাস্টারমাইন্ড!

তানজিমুল হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৪, ২৯ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত রিপন আরেক মাস্টারমাইন্ড!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী : বগুড়ার শেরপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন তাদের একজন নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার রাজশাহী’র মাস্টারমাইন্ড আবু ইব্রাহীম ওরফে তারেক ওরফে রিপন (২৫)।

 

এছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। এই রিপনকেই খুঁজছিল রাজশাহী মেট্রোপলিটন এবং জেলা পুলিশ।

 

বগুড়ার শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এরফান আলী জানান, বন্দুকযুদ্ধে দুই জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় সোমবার রাত ৮টার দিকে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এবাদ আলী বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। এজাহারে রিপনের পুরো নাম লেখা হয়েছে, আবু ইব্রাহীম ওরফে তারেক ওরফে রিপন। রিপন রাবি শিক্ষক হত্যা মামলার আসামি। তাই তার ব্যাপারে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী নগর পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিককে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে রিপন ‘আনসার রাজশাহী’র মাস্টারমাইন্ড কী-না তা তিনি জানেন না।

 

গত ১৬ আগস্ট রাজশাহীর বাগমারায় জঙ্গি সংগঠন ‘আনসার রাজশাহী’র সন্ধান পায় পুলিশ। ওই দিন সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মোয়াজ্জেম হোসেন জানিয়েছিলেন, সংগঠনটির মাস্টারমাইন্ডের নাম আবু ইব্রাহীম ওরফে তারেক ওরফে রিপন। এই নামটি শেরপুরে নিহত জঙ্গি রিপনের নামের সঙ্গে পুরোটিই মিলে গেছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিপন রাজশাহী মহানগরীর পাঠানপাড়া মহল্লায় নিজের বাসায় থাকতেন। গত তিন মাস ধরে তিনি ‘নিখোঁজ’। রাজশাহীতে রিপন ‘তান’ নামে পরিচিত ছিলেন। তার নিখোঁজ থাকার ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে গত ১৯ মে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।

 

রিপনের বাবার নাম গোলাম সবুর ওরফে বাবলা। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করতেন। প্রতিবেশীরা জানান, রিপন ও তার বোন সামিনা ফেরদৌস ওরফে তিন্না যখন ছোট ছিলেন তখন তাদের বাবা মারা যান। তারপর তাদের মা দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যান। রিপনের দাদি তাদের লালন-পালন করেন। উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমিতে তার দাদি তাদের তিনতলা একটি বাড়ি তৈরি করে দেন। পাঠানপাড়া মহল্লার এই বাসার হোল্ডিং নাম্বার ১৬৯। রিপন থাকতেন নিচতলায়। দ্বিতীয় তলায় তার চাচা পরিবার নিয়ে থাকেন। তৃতীয় তলার মালিক ছিলেন রিপন। সেটি তিনি ভাড়া দিয়েছেন।

 

প্রতিবেশীরা আরো জানান, রিপন বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর সোমবার বিকেলে পুলিশ এই বাসায় অভিযান চালায়। বাসার দ্বিতীয় তলা থেকে ইব্রাহিমের চাচা আবদুস সালাম, চাচাত ভাই ইউসুফ আলী ও বোন সামিনা ফেরদৌসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

জানতে চাইলে রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের নিয়ে আসা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাতেই তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

 

নিহত জঙ্গি রিপনের প্রতিবেশীরা জানান, ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ায় এবং মা অন্যত্র বিয়ে করে চলে যাওয়ার কারণে রিপনকে ঠিকমতো গড়ে তোলার মতো কোনো অভিভাবক ছিলেন না। তারা দুই ভাই-বোন দাদির কাছে বড় হয়েছেন। রিপন এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। বাজারে তার পৈতৃক দুটি দোকান রয়েছে। সেখান থেকে ভাড়া পেতেন।

 

এছাড়াও বাড়ির তৃতীয় তলার ভাড়াও রিপন পেতেন। ফলে তার চলাচলের কোনো সমস্যা ছিল না। নগরীর দরগাপাড়া এলাকায় বোনের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে রিপন নিজে বিয়ে করেননি। মুখে দাড়ি ছিল। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতেন। মাস তিনেক আগে তিনি বাড়ি থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর তার বোন তিন্না নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি জিডি করেন।

 

গত ১৬ আগস্ট রাজশাহীর বাগমারায় ‘আনসার রাজশাহী’ নামে নতুন জঙ্গি সংগঠনের খোঁজ পায় পুলিশ। ওই দিন আমিনুল ইসলাম ওরফে রুমি (২৩) ও এনামুল হক ওরফে সবুজ (২২) নামে সংগঠনটির দুই সদস্যকেও গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওই দিন সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহীর এসপি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আটক দুজন রাবির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. সিদ্দিকী হত্যা মামলার আসামি জেএমবি সদস্য শরিফুল ইসলামের ফুপাতো ভাই। পলাতক থাকা অবস্থায় জেএমবি সদস্য শরিফুল ‘আনসার রাজশাহী’ গড়ে তুলেছে। দেশের সংখ্যালঘু চিকিৎসক ও মুক্তমনা মানুষকে হত্যার মিশন সংগঠনটির সদস্যরা কাজ করছিল।

 

 

রাইজিংবিডি/রাজশাহী/২৯ আগস্ট ২০১৬/তানজিমুল হক/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়