ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই প্রদর্শনী সম্ভব হয়েছে’

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘দেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই প্রদর্শনী সম্ভব হয়েছে’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই আজ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্য ও পর্যটন প্রদর্শনীর আয়োজন সম্ভব হয়েছে।’

আমির হোসেন আমু বলেন, ‘আমরা যখন পরাধীন ছিলাম, তখন পূর্ব পাকিস্তানে একজনও বাঙালি শিল্পপতি ছিল না। শিল্প মালিকরা সবাই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি। এমনকি শিল্প কারখানার ব্যবস্থাপনায়ও বাঙালিদের কোনো অবস্থান ছিল না। বাঙালিরা ছিল শ্রমিক, বড়জোর করণিক। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ায় আজ আমরা কেউ শিল্পপতি, কেউ ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, আমলা কিংবা রাজনীতিবিদ।’

মঙ্গলবার রাজধানীর বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আন্তর্জাতিক আয়োজক সংস্থা সেমস্ গ্লোবাল আয়োজিত ১১তম এশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ট্যুরিজম এক্সপো-২০১৭ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে বাঙালি শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম ১৯৫৭ সালের ১৩ ও ১৪ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন আইন, ১৯৫৭ উপস্থাপন করেন এবং ২১ মে, ১৯৫৭ সালে আইনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। এর ফলে তদানীন্তন ইপসিক এর জন্ম হয়।’

‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই ইপসিকই বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) হিসেবে কাজ শুরু করে সারা দেশে শিল্পায়নের ভিত্তি তৈরি করেছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় বিসিকের মাধ্যমে ইতোমধ্যে দেশে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পখাতে মজবুত ভিত্তি গড়ে ওঠেছে। বিসিকের ব্যবস্থাপনায় এখন দেশের জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অঞ্চলে ৭৬টি শিল্পনগরী পরিচালিত হচ্ছে। শিল্পনগরীগুলোতে ইতোমধ্যে ৫ হাজার ৮৩০টি শিল্প কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানার সংখ্যা ৯৪৬টি। শিল্পনগরীগুলোতে প্রায় ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩১৯ জন লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসব শিল্প কারখানার উৎপাদন থেকে ৫৫ হাজার ২৬২ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে।’

‘এ ছাড়া, একই অর্থবছরে রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো থেকে ২৫ হাজার ৫২৮ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। বিসিক শিল্পনগরীগুলো বিগত অর্থবছরে সরকারি কোষাগারে ৩ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছে এবং বিসিকের পৃষ্ঠপোষকতায় শিল্পনগরীর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৯ লাখ ৩০ হাজার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গড়ে ওঠেছে। এর ফলে আরো প্রায় ৩৬ লাখ ১৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বিসিক শিল্পনগরীগুলোতে স্থাপিত অনেক ক্ষুদ্র শিল্প উৎপাদনশীলতা এবং বিনিয়োগ বাড়িয়ে পর্যায়ক্রমে মাঝারি শিল্পে পরিণত হয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্প থেকে মাঝারি শিল্পে রূপান্তরের এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে,’ বলেন মন্ত্রী।

আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়নে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জনগণের মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান শতকরা ৩২ ও কৃষিখাতের অবদান শতকরা ১৫ এবং সেবাখাতের অবদান শতকরা ৫৩ ভাগে উন্নীত হয়েছে। ক্রয়ক্ষমতার বিবেচনায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর মূল্যায়নে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়।’

আমু বলেন, ‘জনগণের আর্থিক সক্ষমতা জোরদারের পাশাপাশি সরকার সড়ক, নৌ, রেল ও আকাশ পথের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। যোগাযোগ অবকাঠামোর উন্নয়নে বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ চার লেনের রাস্তা সম্প্রসারণ, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ, রাজধানীতে মেট্রো রেল চালু, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার, রামু-মিয়ানমারের কাছে ঘুনধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক স্থাপন, রাজধানীসহ সারা দেশে ফ্লাইওভার নির্মাণ ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।’

‘আমরা বিশ্বমন্দার মাঝেও জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বে এমডিজি অর্জনে সফল হয়েছি। এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে। বেশ কিছু সূচকে আমরা প্রতিবেশি রাষ্ট্র ভারতকেও ছাড়িয়ে গেছি। শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার হ্রাস, স্যানিটেশন, পরিবেশ সুরক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্য গোটা বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমি এ অভিযাত্রায় ব্যবসায়ী, শিল্প উদ্যোক্তাসহ সবাইকে সামিল হবার আহ্বান জানাই।’

এ উদ্যোগ ক্রেতা-ভোক্তা ও উৎপাদকদের মধ্যে কার্যকর সেতুবন্ধনে একটি সময়োপযোগী প্লাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। এখানে আগত দর্শনার্থীরা নতুন পণ্য ও প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হবার সুযোগ পাবেন। এর ফলে তাদের মধ্যে পণ্যের গুণগত মান ও বৈচিত্র্যতা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়বে। একই সঙ্গে প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া উদ্যোক্তা বাংলাদেশি ভোক্তাদের রুচি ও পছন্দ সম্পর্কে ধারণা পাবেন। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশে পণ্যের চাহিদা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারবেন।’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের উদীয়মান শিল্পখাতে সরাসরি কিংবা যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে বলেও আশা প্রকাশ করেন শিল্পমন্ত্রী।

চার দিনব্যাপী এই প্রদর্শনীতে থাইল্যান্ড,  চীন,  ভারত,  পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১২০টি দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। প্রদর্শনীতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও পণ্য, নিরাপদ খাদ্য ও পানীয়, বিউটি অ্যান্ড লাইফস্টাইল, গৃহসজ্জা সামগ্রী, কারু ও হস্তশিল্প, খেলনা ও রকমারি পণ্য প্রদর্শন করা হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ ডিসেম্বর ২০১৭/নাসির/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়