ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

তিন প্রার্থীর মধ্যে শক্ত লড়াই হবে

নজরুল মৃধা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ২০ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
তিন প্রার্থীর মধ্যে শক্ত লড়াই হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর : আগামীকাল ২১ ডিসেম্বর রংপুরের নগর পিতার ভাগ্য নির্ধারণ হবে। একই সঙ্গে নির্বাচিত হবেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরা। 

এ নিয়ে বড় তিন দলই নিজেদের জয়ের বিষয়ে সব কৌশল প্রয়োগ করছে।  শেষ মুহূর্তে জাতীয় পার্টির (জাপা) নির্বাচনী রিমোট কন্ট্রোল দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের বাসভবন পল্লী নিবাসে এসে স্থির হয়েছে। ফলে জাতীয় পার্টির প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। আওয়ামী লীগ ঘর গুছিয়ে নিলেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মুখোমুখি হবেন। ধারণা করা হচ্ছে, মূল লড়াই হবে ‘নৌকা’ ‘লাঙ্গল’র মধ্যে। তবে বিএনপিও বসে নেই। তাদের দাবি মূল ভোট যুদ্ধ হবে ‘লাঙ্গল’ ‘ধানের শীষ’র মধ্যে। আওয়ামী লীগ থাকবে তৃতীয় স্থানে।

মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে প্রার্থীদের প্রচারণা শেষ হয়েছে। বড় তিন দলে চলছে ভোটের হিসাব নিকেশ।

গত ৫ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ৪ ডিসেম্বর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২১১ জন এবং সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন মোট ২৮৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

মেয়র প্রার্থীরা হলেন- আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে কাওসার জামান বাবলা, জাপার বিদ্রোহী প্রাথী হাতি প্রতীকে আসিফ শাহরিয়ার, ইসলামী আন্দোলনের হাতপাখা মার্কায় গোলাম মোস্তফা বাবু, বাসদের মই মার্কা প্রতীকে আব্দুল কুদ্দুছ এবং এনপিপির আম প্রতীকে সেলিম আক্তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতীক পাওয়ার পরপরই মেয়র প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেন। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসতে শুরু করলে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন ঘটতে থাকে রংপুরে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন রংপুরে এসে নিজ নিজ দলের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

নিজের দলের মেয়র প্রার্থীকে জেতাতে জাপা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, তার ছোট ভাই জি এম কাদেরসহ নেতা-কর্মীরা রংপুরের বাসা পল্লী নিবাসে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ভোটের কৌশল নির্ধারণ করছেন। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিচ্ছেন নেতা-কর্মীদের। ফলে নেতা-কমীদের মাঝে চাঙ্গাভাব লক্ষ্যে করা গেছে। গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এইচ এম এরশাদ তার দলের প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত দাবি করে বলেছেন, ‘‘আমি রংপুরে প্রচারণা চালাতে নয়, ভোট দিতে এসেছি।’’ 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসাইন, কেন্দ্রীয় নেতা বিশ্বনাথ মহন্ত বিটু দলবল নিয়ে রংপুরে অবস্থান করছেন। তারা নেতা-কর্মীদের নির্বাচনী নির্দেশনা দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রচারণায় যুবলীগের চেয়ারম্যন ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু প্রচারণা চালান।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রংপুরে অবস্থান করে ধানের শীষ প্রতীককে জেতাতে দফায় দফায় পরামর্শ করছেন। বিএনপির একাধিক সূত্র দাবি করেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের শরিকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। শরিকরা ধানের শীষে ভোট দেবে এবং শরিক দলের অন্যতম জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনী প্রচারণায় কাজ করছে। ফলে ধানের শীষের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। বিএনপি প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা বলেন, ‘‘নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।’’

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ভোট চেয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তারা রংপুরে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন। ‘নৌকা’ বা ‘লাঙ্গল’র এই দুই প্রার্থীর একজন মেয়র নির্বাচিত হতে পারেন বলে অনেক ভোটার মনে করছেন।

আওয়ামী লীগের বেশকজন সর্মথক জানান, প্রচারণায় জাতীয় পার্টি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের তুলনায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের আগমন কম। আওয়ামী লীগের কোনো জনপ্রিয় নেতা প্রচারণায় অংশ নেননি। জনপ্রিয় নেতাদের অধিকাংশ মন্ত্রী, এমপি হওয়ার কারণে তাদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিধিনিষেধ আছে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতারা রংপুরে না আসায় ভোটে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মণ্ডল বলেন, ‘‘দলে কোনো বিভেদ নেই।’’ এরশাদের রংপুরে অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘জাপা চেয়ারম্যান নিজ বাসভবন থেকে যদি নির্বাচন পরিচালনা করেন, তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা।’’ 

মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নগরীর কয়েকটি এলাকায় প্রচারণা চালান। তিনি বলেন, ‘‘জনগণের মাঝে সরকারবিরোধী মনোভাব রয়েছে। ভোট চুরি না হলে ধানের শীষের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।’’ 

মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির শরিক দল জামায়াতে ইসলামী  ধানের শীষের প্রচারণায় অংশ নিয়েছে। জোটের ভোট ধানের শীষের পক্ষে হিসাব করে নির্বাচনে নিজেদের শক্ত অবস্থানের কথা ভাবছে বিএনপি।

বিগত ২০১২ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর থেকে সাড়ে ২৮ হাজার ভোট বেশি পেয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। ঝন্টুর পেয়েছিলেন ১ লাখ ৬ হাজার ২৫৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছিলেন ৭৭ হাজার ৮০৫ ভোট। বিএনপি নেতা কাওসার জামান বাবলা পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২৩৫ ভোট। ইসলামী আন্দোলনের গোলাম মোস্তফা পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ৬৮১ ভোট। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিয়ার রহমান শফি পেয়েছিলেন ৪ হাজার ৯৫৪ ভোট। ভোট দিয়েছিলেন ৭৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভোটার। 

গত নির্বাচনের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সরফুদ্দিন ঝন্টু আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারলে জয়ী হতে পারেন। তবে সিটি করপোরেশনের বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডের সুবিধাবঞ্চিত প্রায় দেড় লাখ ভোটারই মেয়র প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সিটি করপোরেশনে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯৬ হাজার, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন। মোট ১৯৩টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/রংপুর/২০ ডিসেম্বর ২০১৭/নজরুল মৃধা/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ