ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

আজও তাদের চোখে জল

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ২৪ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আজও তাদের চোখে জল

আহমদ নূর, সাভার থেকে : সাভারের রানা প্লাজা ধসের ঘটনা পাঁচ বছরে পড়ল আজ সোমবার।

এদিন সকাল থেকে সাভারের রানা প্লাজার সামনে ভিড় জমাতে শুরু করে নিখোঁজ ও স্বজনহারা পরিবারগুলো। বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা সেখানে অবস্থান নেয়। অকালে হারানো স্বজনদের স্মৃতি স্মরণ করে তারা কান্নায় ভেঙে পড়ে।

এর আগে দিনের প্রথম কর্মসূচি হিসেবে রোববার দিবাগত রাত ১২টায় রানা প্লাজার সামনে তৈরি স্মৃতিস্তম্ভে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন করা হয়। সকালে সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের স্মরণে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও স্বজনহারা পরিবারগুলো স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

রানা প্লাজায় মেয়ে রোজিনাকে খুঁজতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা মো. আব্দুল আওয়াল। পাবনার সাথিয়া থেকে রোববার রাতে এসেছেন তিনি। রানা প্লাজা ধসের পর তিনি তার নিহত মেয়ের লাশ বুঝে পাননি। অঝোরে কাঁদছেন আর মেয়ের সন্ধান চাইছেন সবার কাছে।

যদিও চার বছরে আব্দুল আওয়াল অনুভব করেছেন যে, তিনি আর তার মেয়ের লাশ পাবেন না। তবুও মেয়ের প্রতি ভালবাসা তাকে পাবনা থেকে এখানে নিয়ে এসেছে।


তিনি বলেন, ‘সাভারের ঘটনার দিন আমি আমার মেয়েকে সব জায়গায় খুঁজেছি। ঘটনার ১৫ দিন পর তাকে কোথাও খুঁজে না পেলে আমার ডিএনএ টেস্ট করা হয়। তিন মাস পরে ডিএনএর ফলাফল দেওয়া হয়। পরে জানানো হয় আমার মেয়েকে গণকবরে দাফন করা হয়েছে।’

মেয়ের স্মৃতিচারণ করে আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘মেয়েই আমাকে দেখেশুনে রাখত। তার রোজগারে আমাদের সংসার চলত। এখন সে না থাকায় আমি অসহায় হয়ে পড়েছি।’

এই প্লাজায় একটি কারখানায় ফিনিশিং হেলপার হিসেবে কাজ করতেন রংপুরের মুরশেদা বেগম। ঘটনার দিন তিনি গুরুতর আহত হন। আজ নিহত সহকর্মীদের স্মরণে তিনি এখানে এসেছেন। জানালেন সেই দিনের নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা।

‘সকালে হঠাৎ করে ভবন ধসে পড়ে। সেই সময় আমি কারখানায় মাত্র প্রবেশ করেছি। ঘটনার কিছু পরে আমি বের হতে পারলেও আমার অন্যান্য সহকর্মীরা মারা যায়। এ ঘটনায় আমার কোমর ভেঙে যায়। এখনো সেটি ঠিক হয়নি। এখনো আমি কাজ করতে পারি না,’ বলেন তিনি।


২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে অবস্থিত রানা প্লাজা ধসের ঘটনা ঘটে। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় সরকারি হিসাবে প্রাণ হারায় ১ হাজার ১৩৬ শ্রমিক। আহত অবস্থায় ধ্বংসস্তুপ থেকে উদ্ধার করা হয় ২ হাজার ৪৩৮ জনকে।

আগের দিন ফাটল চিহ্নিত হওয়ায় ২৪ এপ্রিল সকালে কাজে যোগ দিতে চাননি রানা প্লাজার পাঁচটি কারখানার শ্রমিকরা। কিন্তু ভবন মালিক ও যুবলীগ নেতা সোহেল রানার চাপেই তারা কাজে যোগ দিতে বাধ্য হন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটে স্মরণকালের ভয়াবহ প্রাণহানির ঘটনা।

ভবনটি ধসে পড়ার পর সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, র‌্যাব, পুলিশসহ সাধারণ জনগণ উদ্ধার তৎপরতায় নামেন। ধীরে ধীরে দীর্ঘ হয় উদ্ধার অভিযান। প্রথমবারের মতো এত বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হন উদ্ধার কর্মীরা। টানা ২০ দিন ধরে চলে উদ্ধার তৎপরতা। সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়নে একে একে ভবন থেকে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় বের করে আনা হয় লাশ। সাভার পৌর এলাকা লাশের নগরীতে পরিণত হয়। ১৭তম দিনে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় রেশমা নামের এক নারী শ্রমিককে।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৪ এপ্রিল ২০১৭/নূর/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ