ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে নষ্ট হচ্ছে মামলার আলামত

ফরহাদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২২ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
লক্ষ্মীপুরে নষ্ট হচ্ছে মামলার আলামত

লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা: ‘লতাপাতা আর আবর্জনার স্তুপে বিভিন্ন যানবাহনের কোনটির হেডলাইট, আবার কোনটির ব্রেক-শো, কোনটির বা ব্যাকলাইট দেখা যাচ্ছে- এর সবই বিভিন্ন অপরাধে জব্দকৃত মামলার আলামত।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ লাইন্স, থানায় ও আদালত পাড়ায় বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে এভাবেই ফেলে রাখা হয়েছে প্রায় দুই হাজারের বেশি যানবাহন। যথাযথ রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলার আলামত।

এদের মধ্যে অন্যান্য যানবাহনের তুলনায় মোটরসাইকেলের সংখ্যাই বেশি। এসব যানবাহন সংরক্ষণে যথাযথ কোন উদ্যোগ নেই! অন্যদিকে আইনি জটিলতার কারণে নিলাম না হওয়ায় কোটি টাকার মালামাল নষ্ট হচ্ছে, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরে ২টি মালখানায় জব্দকৃত যানবাহন রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও  ৫টি থানায় রাখা হচ্ছে জব্ধকৃত মোটরসাইকেল। বিভিন্ন অপরাধে জব্দকৃত যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ২ হাজারেও বেশি। এদের মধ্যে মামলার আলামত, চোরাইকৃত ও কাগজপত্র বিহীন মোট তিন স্তরের যানবাহন রয়েছে। আইনি জটিলতার কারণে অনেক মালিকই ছাড়িয়ে নিতে পারেন না সে গাড়ি। তাই দিনের পর দিন এভাবে জমে উঠেছে গাড়ির স্তুপ। আবার আইনি জটিলতায় অকশনেও দেওয়া যাচ্ছে না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,  লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ অফিসের সামনে আদালত পাড়ায় ও পুলিশ লাইন্সের ভিতরে সরকারি মালখানায়, ভবনের সামনে খোলা আকাশের নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জব্দকৃত যানবাহন ও মামলার আলামত। দুই চাকার মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে প্রাইভেটকার ও সিএনজিও আছে এখানে। স্থান সঙ্কটের কারণে এসব আলামত (যানবাহন) খোলা স্থানে পরিত্যক্ত অবস্থায় স্তুপ করে রাখা হয়েছে। স্তুপে রাখা গাড়িগুলোর মধ্যে নামী-দামী ব্র্যান্ডের গাড়িও রয়েছে।  রোদ-বৃষ্টি আর ধুলার আস্তরনে বোঝার উপায় নেই কোনটা সচল আর কোনটা অচল।
 


সরকারী মালখালায় বছরের পর বছর অযত্নে পড়ে থাকায় কিছু গাড়ির কাঠামো বা চেসিস ছাড়া অবশিষ্ট্ নেই কিছুই। নিরাপত্তার অভাবে যানবাহনগুলোর বিভিন্ন পার্সও চুরি হয়ে যাচ্ছে। স্থান সংকট ও রক্ষণাবেক্ষণ না করায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাসিবুর রহমান হাসিব বলেন, ‘বিচারিক কার্যক্রম সমাপ্ত হতে বিলম্ব হওয়ায় গাড়িগুলো নিলামে তোলা যাচ্ছে না, অন্যদিকে মালিকদের নিকটও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। ফলে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে গাড়িগুলো। এতে ক্ষতিগস্ত হচ্ছে গাড়ির মালিক ও রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্র।’

জেলা মালখানার ইনচার্জ মোহাম্মদ গফফার খান বলেন, ‘জব্দকৃত গাড়িগুলোর মামলা নিস্পত্তি না হওয়ায় নিলামে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাই দীর্ঘদিন রোদ-বৃষ্টির মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে রয়েছে গাড়িগুলো।’

পুলিশ সুপার আসম মাহাতাব উদ্দিন জানান, বিভিন্ন অপরাধে এসব যানবাহন জব্ধ করা হয়েছে। কাগজ-পত্র না থাকায় সঠিক মালিকের কাছেও হস্তান্তর করা যাচ্ছে না।  সঠিক রক্ষনাবেক্ষণ প্রয়োজন বলে তিনিও মনে করেন কিন্তু জায়গা সংকুলানের জন্য তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

জেলা বিআরটিএ সহকারি পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এসব জব্ধকৃত যানবাহন আইনি প্রক্রিয়ার পর ইনস্পেকশন চাওয়া হয়। ওই ক্ষেত্রে জব্ধকৃত যানবাহন রেজিস্ট্রেশনের যোগ্য না হলে নিলামে বিক্রি করা হয়। কিন্তু এর আগেই আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়।  তাই যানবাহনগুলো রেজিস্ট্রেশনের যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলে।’




রাইজিংবিডি/লক্ষ্মীপুর /২২ জুলাই ২০১৮ /ফরহাদ হোসেন/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়