ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

টাঙ্গাইলে পুলিশের গুলিতে নিহত ৩ : চলছে মাতম

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
টাঙ্গাইলে পুলিশের গুলিতে নিহত ৩ : চলছে মাতম

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : জেলার কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে নিহত ফারুক, শামীম মিয়া ও শ্যামল দাসের বাড়িতে মাতম চলছে।

কালিহাতী পৌর এলাকার কুষ্টিয়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত ফারুকের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সেখানে প্রতিবেশীদের ভিড়। ফারুকের বড় ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী আসিফকে (৮) নিয়ে আহাজারি করে যাচ্ছেন মা শ্যামলা বেগম। পাশেই তিন বছরের ছোট মেয়ে ফাতেমাকে নিয়ে বাকরুদ্ধ ফারুকের স্ত্রী আসিয়া বেগম।

ভ্যানচালক ফারুক ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। স্থানীয় এক নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় শুক্রবার দোষীদের বিচারের দাবিতে সেখানে গিয়েছিলেন ফারুক। কিন্তু পুলিশের গুলিতে আহত হন। কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।

একই অবস্থা ঘাটাইল উপজেলার কালিয়া গ্রামের শামীম মিয়ার (৩৫) বাড়িতে। ঘটনার দিন জুমার নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন শামীম। কিন্তু নামাজ শেষে আর বাড়ি ফেরা হয়নি তার। আসন্ন ঈদের পরে তার সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল তার। এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা জমা দিয়েছেন তিনি।

শামীম মিয়া হত্যার বিচার চান তার মা আমেনা খাতুন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে তো মিছিল মিটিংয়ে যায়নি। তবে কেন তাকে পুলিশ গুলি করল। তার দুটি ছোট ছোট ছেলে রয়েছে। এই সন্তানগুলোকে এখন কে বড় করবে? কে আমাদের পরিবারের জন্য রোজগার করবে?’

স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন স্ত্রী বিথি। আদরের দুই সন্তান বাদল (৮) ও দেড় বছরের মীনকে নিয়ে স্বামীর লাশের পথ চেয়ে আছেন তিনি।

এদিকে শামীম মিয়ার বাড়িতে আসা এলাকাবাসী জানান, এলাকায় শামীম পরিচিত ছিলেন অন্যায়ের প্রতিবাদকারী যুবক হিসেবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা তার স্বভাবসুলভ আচরণ ছিল। তাকে হত্যার সঙ্গে জড়িতদের উপযুক্ত বিচার দাবি করেন এলাকাবাসী।  

একই অবস্থা আরেক নিহত কালিহাতী উপজেলার সালেঙ্গা গ্রামের শ্যামল দাশের বাড়িতে। স্থানীয় একটি সেলুনের কর্মী শ্যামল সেদিন গিয়েছিলেন শ্লীলতাহানির ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে। তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুত্রশোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন বাবা রবি দাশ। আপনজনদের ধরে বিলাপ করছেন মা ভারতী রানী। তিন ভাইয়ের মধ্যে শ্যামল ছিলেন সবার বড়। এই পরিবারের স্বজন হারানোর বিচার দাবি করেছে এলাকাবাসী।

 


এদিকে সকাল থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড ও হামিদপুর এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ।

অপরদিকে কালিহাতী থানায় পুলিশের ওপর হামলা ও তাদের কাজে বাধা দেওয়ায় সাধারণ জনগণকে আসামি করে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তবে এই ব্যাপারে মিডিয়ার সামনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদুল ইসলাম।

ঘাটাইল থানার অফিসার ইনচার্জ মোখলেছুর রহমান জানান, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে। সড়কে যানবাহন চলাচল করছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ সতর্ক রয়েছে।

ঘটনার পর কালিহাতীজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা রয়েছেন উদ্বেগের মধ্যে। ঈদের সামনে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার জের ধরে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির আশঙ্কা করছেন।

লাশ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হবে।

উল্লেখ্য, কালিহাতী উপজেলা সদরের সাতুটিয়া এলাকার মোজাফফর হোসেনের ছেলে রফিকুল ইসলাম ওরফে রোমার স্ত্রী হোসনে আরার সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ঘাটাইল উপজেলার শ্রমজীবী আলামিনের (১৭) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কয়েক মাস আগে আলামিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় হোসনে আরা। পরে তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর আবারো আলামিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় হোসনে আরা। ১৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার দিকে রোমা ও তার পরিবারের সদস্যরা আলোচনার কথা বলে আলামিন, তার মা ও হোসনে আরাকে রোমাদের বাড়িতে ডেকে আনে। পরে বাড়ির উঠানে আলামিনকে বিবস্ত্র করে রোমা ও তার ভগ্নিপতি হাফিজ। এ সময় আলামিনের মাকেও বিবস্ত্র করা হয়। মারধরের পাশাপাশি আলামিনের মাকে ঘরে নিয়ে রোমা ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এই ঘটনার বিচারের দাবিতে শুক্রবার স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা মিছিল বের করে। তারা সড়ক অবরোধ করায় পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে লাঠিপেটা করে, প্রায় ৬০ রাউন্ড গুলি, রাবার বুলেট ও  টিয়ার গ্যাস শেল ছোড়ে। এতে এক নারীসহ ছয় ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়। এ ছাড়াও প্রায় ৫০ জন আহত হয়। গুলিবিদ্ধ ছয়জনের মধ্যে পরে তিনজন মারা যায়।

 

 

 


রাইজিংবিডি/টাঙ্গাইল/১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫/শাহরিয়ার সিফাত/দিলারা/এএন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ