ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পাহাড়ে পারিবারিক মিলনমেলায় হঠাৎ অতিথি

ফেরদৌস জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ১২ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাহাড়ে পারিবারিক মিলনমেলায় হঠাৎ অতিথি

ফেরদৌস জামান : দেশের সর্বোচ্চ দশ শৃঙ্গের অন্যতম ‘রামজং’ অভিযানে যাওয়ার পথে একটি দৃষ্টিনন্দন বসতি অতিক্রম করতে হয়েছিল। সমৃদ্ধ বসতি, প্রচুর তেঁতুল ও কাঁঠাল গাছ রয়েছে। বসতির সমৃদ্ধি যে নতুন নয়, তা ঐ গাছগুলো দেখেই অনুমান করা যায়। একেকটি গাছের বয়স ৪০-৫০ বা তারও বেশি। পার্বত্য অঞ্চলের প্রকৃতির ধরন অনুযায়ী সেখানে আম, কাঁঠাল বা তেঁতুল জাতিয় গাছ জন্মে না বললেই চলে। অথচ, সেখানে এসব গাছের সংখ্যা কম নয়। তার অর্থ হলো বহু আগেই বাসিন্দারা সমতলের এসব ফলমূলের গুরুত্ব অনুধাবন করেছিল। যার ফলে কষ্ট করে দূর-সমতল থেকে চারা বয়ে এনে রোপণ করেছিল।

 

যাই হোক, অতি বর্ষণের ফলে আমাদের লক্ষ (রামজং) এর কাছাকাছি গিয়ে দুই দিন অপেক্ষার পরও ব্যর্থ হতে হল। অপেক্ষার সেই দুই দিন বসে বসে পরিকল্পনা এঁটেছিলাম দৃষ্টিনন্দন বসতিটাতে অন্তত একটা দিন হলেও অবস্থান করব। তাতে করে ব্যর্থতার কষ্ট খানিকটা হলেও পুষে যাবে। কারণ নতুন জায়গা, নতুন মানুষ মানেই নতুন কিছু শেখা বা জানা। ব্যর্থ অভিযানকে অন্য দিক দিয়ে সফল করে তুলতে এ আর কম কি? প্রবল বর্ষণে পাহাড়ি পথে চলাচল করা ভীষণ ঝুকিপূর্ণ। বিশেষ করে পাহাড়ের খাঁড়া দেয়ালের পাশ দিয়ে বা ওপর দিয়ে। পথটা ঠিক তেমই, বেশ কয়েকটা পয়েন্টে তার প্রমাণও পাওয়া গেল। বৃষ্টির পানি গড়িয়ে পরায় সরু নালাগুলো ক্রমেই বড় হয়ে ধসে ফেলে দিচ্ছে পাহাড়ের প্রাচীর।

 

মনে ধরে যাওয়া পাড়াটি রুয়াংছড়ি উপজেলার ৩৪১ নং  মৌজার হেডম্যান (পাহাড়ি ভূমি ব্যবস্থায় মৌজা প্রধান) পাড়া। বম জাতির বসবাস। স্বভাবে তারা নম্র ও ভদ্র হয়ে থাকে। সুতরাং, থাকার একটা ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়ে যাবে। পথের উচ্চতা গড়ে ১৫০০ থেকে ১৭০০ ফুট হবে। দূরে উভয় পাশে বাংলাদেশের প্রমিনেন্ট দুটি পর্বত রেঞ্জ, পশ্চিমে চিম্বুক এবং পূর্বে কেওক্রাডাং। উভয় রেঞ্জ তাদের আপন আপন বাহু প্রসারিত করে বসে রয়েছে আর বৃষ্টির জলে সিক্ত হচ্ছে। বৃষ্টি এই আসছে তো এই যাচ্ছে। মেঘ এসে যেন আমাদের চলার পথে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। এত কম উচ্চতায় মেঘ আগে কখনও দেখিনি। কেটে কেটে এগিয়ে যাচ্ছি ঘন মেঘের আস্তরণ। সাধারণত ইন্ডিয়ার গোর্খাল্যান্ডে ৭-৮ হাজার ফুট উচ্চতার পাহাড়ে এমন মেঘ পাওয়া যায়। চারিদিকে কোন মানুষ নেই, সমস্তা পথে শুধুই আমরা তিনজন। পাশের জুম ঘরগুলো কোন চিত্রকরের তুলিতে আঁকা মেঘের মাঝে দাঁড়ানো একেকটি ছবি যেন। উঁচু থেকে শুরু হয়ে বসতিটা নিচ দিকে নেমে এসেছে। প্রবেশ মুখের আগেই অতিক্রম করতে হল একটি দীর্ঘ সেগুন বাগিচা। বাগিচার মাঝ দিয়ে দূরের ঝরনা থেকে পানি সরবরাহের জন্য পাইপ টেনে আনা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিশুদ্ধ পানির চমৎকার ব্যবস্থা। পাইপই আমাদেরকে বসতির মুখে পৌঁছে দিল।

 

 

তাদেরকে আশ্বস্ত করা হল, আগে ঢাকায় যাই, বন্ধুদের সাথে আলোচনা করি। রাজি থাকলে তাদের পাহাড় টপকানোর বিদ্যাটাও দেই। তারপর সকলের সুবিধা মত দিন তারিখ ঠিক করা যাবে। সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে দেখি আত্মীয়-স্বজন এসে ভরে গেছে। পাখুনের ভাই-বোন এবং তাদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। মানুষ হিসেবে তারা প্রত্যেকেই মিশুক এবং আন্তরিক। খাবার পরিবেশিত হল। খাবার শেষে গল্পগুজবে কেটে গেল অনেকটা সময়। কিছুক্ষণ পরপর পরিবেশিত হল রং চা। ভিন্ন স্বাদের চা। এমনিতেই পাহাড়িরা চিনি ছাড়া রং চায়ে অভ্যস্ত। তার ওপর বোধহয় বিশেষ কোন উপকরণ মেশানো হয়েছে, যার কারণে চায়ে চুমুক দেয়ার আগেই তার ঘ্রাণে আলাদা এক স্বাদ অনুভূত হয়। গল্পের মাঝে এতক্ষণে জানতে পারলাম, পরিবারের সকলকে নিয়ে এক বেলা খাওয়ার আয়োজনটা ছিল পূর্ব নির্ধারিত। তবে তা যে ঠিক সেদিনই হবে তেমন নয়। অর্থাৎ দিনটি ছিল অনির্ধারিত। কাকতালীয়ভাবে তিন পরিব্রাজকের আগমনের ফলে উক্ত দিনকেই পরিবারের মিলনমেলার দিন হিসেবে ধার্য করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে শুধু আতিথেয়তাই নয় আমরা অর্জন করলাম একটি বম পরিবারের সাথে এক অকৃত্রিম বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরম সুযোগ।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ আগস্ট ২০১৬/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়