ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ফুটফুটে মেয়েটি শরীরে টিউমার নিয়ে বিপদে

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৪ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফুটফুটে মেয়েটি শরীরে টিউমার নিয়ে বিপদে

নুরনাহার

পাবনা প্রতিনিধি : পাবনার বেড়া উপজেলার মাত্র ৯ বছর বয়সের মেয়েটি জন্ম থেকেই শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে টিউমারের বোঝা। যতই বড় হচ্ছে সে, টিউমারটিও বেড়ে উঠছে ততই। ক্রমেই যেন অজানা বিপদ গ্রাস করে চলেছে তাকে।

ফুটফুটে মেয়েটির নাম নুরনাহার। একটি টিউমার কেড়ে নিয়েছে তার উচ্ছলতা। সমবয়সিরাও কেউ তার খেলার সঙ্গী হতে চায় না। কাছে গেলেও অন্যরা ভয়ে পালিয়ে যায়। এ অবস্থায় হাসিখুশি হারিয়ে গেছে ওর বাবা-মায়েরও। কী করবে ভেবে পাচ্ছেন না। দরিদ্র বাবা-মা। চিকিৎসা করানোর সামর্থ্যও নেই তাদের। কোনো বিত্তবান সহানুভূতির হাত বাড়ালেই তাদের সন্তানের চিকিৎসা করানো সম্ভব। টিউমারটি যে অবস্থা দ্রুত অপারেশন না করা গেলে হয়তো জীবন-মরণ সমস্যা হয়ে উঠবে।

টিউমারটির অবস্থান নুরনাহারের কোমরের নিচে পেছনের অংশে। বেশ বড় আকৃতির। এ কারণে কখনো বসতে পারে না সে। না পারে দৌড়াতে, না পারে ঘুমাতে। সে স্থানীয় সিন্দুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

বেড়া উপজেলার আমিনপুর থানার কাপাসডাঙ্গা মন্ডলপাড়া গ্রামে বাসরত নুরনাহারের বাবা সিদ্দিক মন্ডল দিনমজুর। বাড়িটুকুই তার সম্বল। অন্যের জমিতে শ্রম বিক্রি করে চলে তার পাঁচ সদস্যের সংসার। মেয়ের চিন্তায় ঘুম আসে না দরিদ্র বাবা-মায়ের। আরো দুটি কন্যাসন্তান রয়েছে তাদের। একটির বয়স ছয়, আর সবার ছোট মেয়েটির বয়স দেড় বছর। 

আলাপকালে সিদ্দিক মন্ডল বলেন, ‘নুরনাহারের জন্মের পর থেকে তার নিতম্বে ছোট টিউমার ধরা পড়ে। দিন যত যাচ্ছে, মেয়ে বড় হওয়ার সাথে টিউমারও বড় হচ্ছে। কাশিনাথপুরের স্থানীয় ডাক্তাররা বলছেন, এই টিউমার অপারেশন করা যাবে না, করলে মেয়ে বাঁচবে না। একজন ঢাকায় নেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু আমার আর্থিক অবস্থা তেমন না যে ঢাকায় নিয়ে যাব চিকিৎসা করাতে। দিনমজুরি করে যা পাই, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার খরচ চালাই। তাই ছয় বছর ধরে এই অবস্থায় আছি। মেয়েকে আর ঢাকায় নিয়ে যেতে পারি নাই।’

নুরনাহারের মা বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে মেয়ে বড় হচ্ছে, টিউমারও বড় হচ্ছে। সমাজে অন্যরাও ভালো চোখে দেখে না। মেয়েটা সবার সাথে হাসিখুশিতে মিশতেও পারে না। নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হয়। মেয়েটাকে নিয়ে কী করব ভেবে পাচ্ছি না। আমার স্বামীর যে সামর্থ্যও নেই। সমাজের কেউ যদি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে মেয়েটাকে ঢাকায় নিয়ে অপারেশনের ব্যবস্থা করে তাহলে খুব খুশি হব আমরা।’

গত ২২ জানুয়ারি স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর সহযোগিতায় নুরনাহারকে নিয়ে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. সিরাজুল ইসলামের শরণাপন্ন হন নুরনাহারের বাবা ও চাচা। নুরনাহারকে ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।

ডাক্তার জানান, নুরনাহারের টিউমারটি জন্মগত। মেডিকেলের ভাষায় এ ধরনের টিউমারকে ‘সেক্রো কক্সিজিয়াল টেরাটোমা’ বলা হয়। মেরুদন্ডের নার্ভের সাথে সংযোগ থাকতে পারে টিউমারের, তাই অপারেশনে একটু ঝুঁকি আছে। তারপরও অপারেশন করা সম্ভব এবং রোগী সুস্থ হবে।

ডা. সিরাজুল আরো জানান, এই অপারেশন যেকোনো সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে করা যাবে, সেখানে অপারেশনের জন্য কোনো খরচ হবে না, শুধু ওষুধপত্র কিনতে হবে। আর বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ সার্জন দিয়ে অপারেশন করালে এক লাখ টাকার মতো খরচ হবে।

কিন্তু এই টাকাও জোগাড় করার ক্ষমতা নেই দিনমজুর বাবার। তিনি মেয়ের সুস্থতার জন্য সমাজের হৃদয়বানদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। নুরনাহারের ব্যাপারে আরো জানতে যোগাযোগ: করতে পারেন তার মামা হাসমতের মোবাইল ০১৭৮০-৪৫১৪৮০ নম্বরে (বাবার মোবাইল নেই)। নম্বরটি বিকাশ করা রয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল নম্বরটির শেষে ৮ যোগ করে সাহায্য পাঠাতে পারেন ডাচ্-বাংলা-রকেটের মাধ্যমেও।

সবার ভালোবাসায় ও সহযোগিতায় হাসি ফুটতে পারে ছোট্ট নুরনাহার ও তার স্বজনদের মুখে।



রাইজিংবিডি/ পাবনা/২৪ জানুয়ারি ২০১৭/শাহীন রহমান/টিপু/ এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়