ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সবারই রেডিও শোনার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত

এমএ রহিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০০, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সবারই রেডিও শোনার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত

ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে বসে আছেন প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি নূর আলম-রেডিও হাতে

এমএ রহিম, বেনাপোল : কালের আবর্তে প্রযুক্তির প্রসারে পিছনের দিকে চলে যাওয়া এক শখ হলো রেডিও শোনা। এক সময় রেডিও ডিএক্সইং ছিল আধুনিক ছেলে মেয়দের প্যাশন। আজ তা অতীতের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া এক ইতিহাস।

 

তবে যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারণে এখনো টিকে আছে তেমনই একটি সংগঠন। ১৯৯৩ সালের জানুয়ারি মাসে ইনটারন্যাশনাল রেডিও ফ্রেন্ডস ক্লাব অ্যান্ড লাইব্রেরি- আইআরএফসিএল আত্ম প্রকাশ করে। এটি একটি অরাজনৈতিক রেডিও ডিএক্সইং, সাহিত্য, বিজ্ঞান চর্চা ও সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন। প্রথমে এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ডিএক্সারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও সু সম্পর্ক গড়ে তোলা। বিভিন্ন দেশে রেডিওতে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান শোনা ও সেগুলো শুনতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা। পরে এর সঙ্গে যোগ হয় লাইব্রেরি ও সমাজকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজকর্ম।    

 

সময়ের সাথে তালমিলিয়ে এই রেডিও লিসনার্স ক্লাবের সদস্য সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলে। সে সময় যারা এটির উদ্যোক্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা তারা সে সময় সবে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এখন লেখাপড়া শেষে নানা যায়গায় চাকরিতেরত। কেউবা ব্যবসা করেন। তবে সবার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালোই আছে। সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা এক সময় ৬০-৭০ জনে গড়ায়। ২২ বছর পরেও তারা ধরে রেখেছন তাদের সংগঠনের নানা কাজকর্ম।

 

 

রহিম : প্রযুক্তির এই উন্নয়নের যুগে রেডিওকে কিভাবে ধরে রেখেছেন?

নূর আলম : আধুনিক এবং ডিজিটাল যুগে রেডিওর কদর কমে গেলেও আমরা রেডিওর শ্রোতা বাড়ানোর মাধ্যমে হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সমাজে রেডিও কোনো কুপ্রভাব ফেলে না। আজ পরিবারের সকলের উপস্থিতিতে টেলিভিশন দেখাই অনেক দুরূহ হয়ে পড়েছে। রুচিশীল শ্রোতারা রেডিওকে আজো পছন্দ করেন। নিয়মিত খবর শোনেন।

 

রহিম : আধুনিকতার এ যুগে রেডিওর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন?

নূর আলম : এখনও রেডিও আমাদের দুঃসময়ে বন্ধুর কাজ করে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সময় বিদ্যুৎ থাকে না। তখন রেডিওর মাধ্যমে আমরা সকল খবরাখবর পেয়ে থাকি। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী রেডিও হাটে মাটে ঘাটে, পথে প্রান্তরে শোনা যায়। রেডিওর সংবাদ বিভিন্ন শ্রেণি পেশা বা সব বয়েসের মানুষের কাছেই গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে।

 

রহিম : রেডিওর ভালবাসা তৈরি হলো কীভাবে?

নূর আলম : ছোট বেলায় বাবা, দাদা, ভাই ও চাচারা সবাই মিলে জোটবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ বেতার, বিবিসি বাংলা, ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও তেহরান, দয়েচেভেলে জার্মান বেতার তরঙ্গ, রেডিও বেইজিং ও আকাশ বানির নিয়মিত সংবাদ শুনতেন। এ থেকেই আমার ভাল লাগা শুরু হয়। নিভৃতে বালিশের পাশে রেখে গান ও খবর শুনতে রেডিওর বিকল্প নেই। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের খবরাখবর রাখতে রেডিওর বিকল্প ছিল না। সেখান থেকেই গ্রামাঞ্চলের মানুষের রেডিওর প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। যা আজো পরম্পরা হয়ে আছে।

 

রহিম : প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের কয়েকজনের নাম বলুন-

নূর আলম : আমি ছাড়া আর যারা ছিল, তাদের মধ্যে অনেকেরেই নাম মনে আছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগও আছে। এদের মধ্যে ক্লাবের সেক্রেটারি সনি, সহ সভাপতি খাইরুলসহ রশিদ, সোহেল, শহীদ, সুমন, অপু, আসাদুজ্জামান আসাদ, আনোয়ার, মিঠু, রফিকুল, শাওন, শিমুল, বাদল প্রমুখের নাম মনে আছে। অনেকেই তো এখনো নাভারণেই আছেন। এদের মধ্যে চাকরিজীবী থেকে শুরু করে কলেজ শিক্ষক এমনকি দোকানদারও আছেন। সমাজের প্রতিটি স্তরে এবং সব শ্রেণি পেশার মানুষের মধ্যে রেডিও শোনার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।

 

 

রহিম : রেডিও নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?

নূর আলম : যশোরের শার্শার নাভারণ এলাকায় এখনো রেডিওর কদর কমেনি। মানুষ রেডিওতে সংবাদ ও গান শোনে। টিভি দেখার অনেক ঝামেলা। রেডিওর কোনো ঝামেলা নেই। সহজেই বহন করা যায়। সব খানে সব মুহূর্তে শোনা যায়। নেটওয়ার্কও লাগে না। আর এখন তো মোবাইলেই রেডিও শোনা যায়। এজন্য এই সহজলভ্য যন্ত্রটি সবার নির্মল বিনোদনের মাধ্যম হয়ে উঠুক। নাভারণ রেডিও লিসনার্স ক্লাবের পরিধি বাড়ুক। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আইআরএফসিএলের সদস্যরা জনকল্যামূলক কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে সেবা ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে পরিণত করবে এমনটাই স্বপ্ন দেখি।

 

 

 

রাইজিংবিডি/বেনাপোল/২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫/রহিম/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়