ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

পৌর নির্বাচনে বিএনপির শর্ত

রেজা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৭ নভেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পৌর নির্বাচনে বিএনপির শর্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা এবং জনগণের ভোটাধিকারের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ‘শর্ত সাপেক্ষে’ বিএনপি পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

নির্বাচনে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপির শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, নতুন তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন ১৫ দিন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি, যৌথ বাহিনীর নামে গণগ্রেফতার বন্ধ এবং নেতা-কর্মীদের মুক্তি, নির্বাচনের আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বদলি, ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক না বানানো, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির অপেক্ষায় থাকা ৫০ লাখ ভোটারের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া।

 

শুক্রবার সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেন দলটির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন।

 

দেশের ২৩৬ পৌরসভায় ৩০ ডিসেম্বর ভোটের তারিখ রেখে গত মঙ্গলবার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

 

সিইসি জানান, আগ্রহী প্রার্থীরা ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র বাছাই চলবে ৫ ও ৬ ডিসেম্বর। বৈধ প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৩ ডিসেম্বর। প্রার্থীদের নিয়ে ভোট হবে ৩০ ডিসেম্বর।

 

এই প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌরসভায় নির্বাচন হচ্ছে। এক্ষেত্রে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের সুযোগ রাখা হলেও কাউন্সিলর পদে স্বতন্ত্রভাবে আগের নিয়মে হবে।

 

সংবাদ সম্মেলনে রিপন বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতাদের মতামত নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন সেগুলো বিশ্লেষণ করেছেন এবং বোঝার চেষ্টা করেছেন। কর্মীদের আকাঙ্ক্ষা, প্রত্যাশা প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করে বৃহস্পতিবার রাতে এই সিদ্ধান্ত তুলে ধরে বলেছেন যে, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং অবাধ নির্বাচনের পরিবেশ থাকলে সকল স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আসছে। সুতরাং বিএনপি শর্ত সাপেক্ষে পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

 

প্রায় ৫০ লাখ নতুন ভোটার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির ঠিক দু’দিন আগে পৌর নির্বাচনের আয়োজনকে ‘অবিবেচনাপ্রসূত’ বলে অভিহিত করেন বিএনপির মুখপাত্র।

 

তিনি বলেন, দেশের প্রায় ৫০ লাখ নতুন ভোটার ২০১৬ সালের জানুয়ারির ২ তারিখ ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবেন। নির্বাচনের ঠিক দুন আগে তারা ভোটার তালিকায় সংযোজন হবেন। এমনকি প্রয়োজন হল যে, এই বিপুল সংখ্যক ভোটারদের বঞ্চিত রেখে পৌর ভোটের আয়োজন করতে হবে? এটিকে সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত বলে বিএনপি মনে করে না। তাদের জীবনের প্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া উচিত। সে কারণে নির্বাচনের সময়সীমা অন্তত ১৫ দিন বাড়িয়ে দেওয়ার প্রয়োজন বলে বিএনপি দাবি করছে।

 

নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রিপন বলেন, ‘জনগণ মনে করে, একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশন জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষায় ন্যূনতম স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে পারেনি। তবুও অবরুদ্ধ ও নির্বাসিত গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করেছে।’

 

‘নির্বাচন অবাধ, স্বচ্ছ এবং সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আবশ্যক। অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কমিশনের বিষয়টি সুবিবেচনায় নেওয়া উচিত’, বলেন তিনি।

 

সরকার যৌথবাহিনীর অভিযানের নামে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ থেকেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির এই নেতা।

 

রিপন বলেন, ‘সম্প্রতি সরকার বিরোধী মত দমনের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। সারাদেশে হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থী ও দলীয় কর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়ে পড়েছে। সারাদেশ কারাগারে পরিণত হয়েছে। এহেন অবস্থায় দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বাস্তবে নেই। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা এখন পর্যন্ত পরিলক্ষিত নয়।’

 

নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে ‘কার্যকর ভূমিকা’ নিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

 

রিপন বলেন, ‘আমরা মনে করি, বিরোধী দলের প্রার্থীদের নির্বাচনী অংশগ্রহণ থেকে দূরে রাখাই হচ্ছে এর মূল লক্ষ্য। এই ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ, গ্রেফতারকৃতদের নামে হওয়া মামলা প্রত্যাহার এবং তাদের মুক্তি দেওয়া না হলে পৌর নির্বাচন অবাধ হওয়ার সুযোগ নেই।’

 

প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার তার অনুগত লোক বসিয়েছে দাবি করে রিপন বলেন, ‘বর্তমান সরকার প্রশাসনের সব পর্যায়ে, বিশেষ করে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনে দলীয় লোকদের নিয়োগ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) স্থানীয় সাংসদদের চাহিদা মতো পদায়ন করা হচ্ছে। এ সকল কর্মকর্তা নির্বাচনকালীন সময়ে স্বপদে বহাল থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই যে সকল এলাকায় পৌর নির্বাচন হবে সেই এলাকা থেকে তাদের বদলি করার দাবি জানাচ্ছি।’

 

পৌর নির্বাচনে ভুঁইফোড় কোনো সংগঠনকে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব না দেওয়ারও আহ্বান জানান আসাদুজ্জামানর রিপন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এএসএম আবদুল হালিম, সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, আসাদুল করিম শাহীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ নভেম্বর ২০১৫/রেজা/দিলারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ