ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শাওনের স্বীকারোক্তি : পাওনা টাকা না দিতেই নারীর ফাঁদ

রেজাউল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৪, ১৬ আগস্ট ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শাওনের স্বীকারোক্তি : পাওনা টাকা না দিতেই নারীর ফাঁদ

গ্রেফতারের পর স্ত্রীর সঙ্গে ঘাতক শাওন পাশে শ্যালিকা পদ্ম (ছবি : রেজাউল)

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম : ব্যবসায়ীক সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে পাওনা টাকা না দিতেই নারীর ফাঁদে ফেলে চট্টগ্রামের গার্মেন্টস ও শেয়ার ব্যবসায়ী সাইদুল আলম লিটুকে (৩২) খুন করা হয়েছে।

 

রোববার ঘাতক আমজাদ হোসেন শাওন (২৭) লিটুকে রাঙ্গামাটিতে নিয়ে হোটেল রুমে একাই খুন করেছে বলে স্বীকারোক্তি দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

 

গত বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) রাতের কোনো এক সময় রাঙ্গামাটি শহরের প্রবেশমুখ কলেজ গেট এলাকার ‘মোটেল জর্জ’-এ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী লিটুকে হত্যা করে লাশ বাথরুমে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক শাওন ও তার স্ত্রী মৌ (২০) এবং শ্যালিকা পদ্ম (১৭)। পালিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে মাঝপথ থেকেই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

 

নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সাইদুল আলম লিটু হালিশহর এলাকার গ্রিন ভিউ আবাসিক এলাকার আপন নিবাস নামক একটি ভাড়া বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করতেন। লিটু তার শ্বশুরের মালিকানাধীন নগরীর সদরঘাট এলাকার কিষাণ গার্মেন্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ ছাড়া তিনি যুক্ত ছিলেন শেয়ার ব্যবসার সঙ্গেও। সম্প্রতি লিটুর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে কুমিল্লার বাসিন্দা আমজাদ হোসেন শাওনের। লিটুর কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা ধার নেন শাওন। এ ছাড়া লিটুর সঙ্গে পার্টনারশিপে ব্যবসা করার চেষ্টা করছিলেন শাওন। আর এই চেষ্টার অংশ হিসেবে সুন্দরী স্ত্রী এবং শ্যালিকাকে নিয়ে নারী সঙ্গের ফাঁদ পাতেন শাওন।

 

বৃহস্পতিবার ঘাতক শাওন তার স্ত্রী ও শ্যালিকাকে নিয়ে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম আসেন। এরপর ব্যবসায়ী লিটুকে নিয়ে তার গাড়িতে করে চারজন মিলে  রাঙ্গামাটি যান। বৃহস্পতিবার রাতেই তারা রাঙ্গামাটি জর্জ মোটেলে দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে অবস্থান করেন। কিন্তু যে লোভ দেখিয়ে লিটুকে রাঙ্গামাটি আনা হয়েছিল, প্রথম রাতেই সেখানে বিপত্তি ঘটে।

 

শ্যালিকার লোভ দেখিয়ে লিটুকে রাঙ্গামাটি আনা হয়। তবে হোটেলে অবস্থানকালে শাওনের স্ত্রী ও শ্যালিকাকে এক রুমে থাকতে দিয়ে লিটু ও শাওন অপর রুমে থাকার আয়োজন করেন। এতেই প্রথম বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরপর পাওনা টাকা নিয়ে লিটুর সঙ্গে শাওনের তর্ক বিতর্ক শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে শাওন লিটুকে ভারি বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এক পর্যায়ে ডিস সংযোগের তার দিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করা হয় লিটুকে।

 

পরে হাত পা বেঁধে, মুখে স্কচ টেপ লাগিয়ে এবং বিছানার চাদর মুড়িয়ে লিটুর লাশ বাথরুমে ফেলে রাখা হয়। পরদিন শুক্রবার সকালে শাওন, তার স্ত্রী এবং শ্যালিকা লিটুর প্রাইভেট কার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।

 

রাঙ্গামাটি কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবদুর রশিদ রাইজিংবিডিকে জানান, আমজাদ হোসেন শাওন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী লিটুকে হোটেল রুমে খুন করার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। মূলত লিটু শাওনের কাছে মোটা অংকের টাকা পেতো। এ ছাড়া লিটুর সঙ্গে পার্টনারশিপে ব্যবসা করার চেষ্টাও করছিল। তাই ব্যবসায়ীক সুবিধা নিতে এবং পাওনা টাকা পরিশোধ না করতে নারী সঙ্গের ফাঁদে ফেলে লিটুকে চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে এক পর্যায়ে লিটুর সঙ্গে শাওনের বিরোধ এবং তর্ক বিতর্কের ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে রাতেই লিটুকে হত্যা করে শাওন। স্বীকারোক্তিতে শাওন বলেছে সে একাই লিটুকে খুন করেছে। এর সঙ্গে তার স্ত্রী এবং শ্যালিকা সম্পৃক্ত নয়।

 

এদিকে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রামের হালিশহরে লিটুর বাড়িতে আহাজারি থামছে না। নিহত লিটুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হাজী আবদুল মজিদ মিয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমার ছেলের সঙ্গে কখনো কারো শত্রুতা ছিলো বলে আমাদের জানা নেই। আমরা বহু বছর ধরেই এই এলাকায় বসবাস করছি। কিন্তু বিনা অপরাধে আমার ছেলেকে রাঙ্গামাটিতে নিয়ে খুন করা হয়েছে।’

 

উল্লেখ্য ব্যবসায়ী লিটু ছয় বছর বয়সী এক ছেলে সন্তানের জনক। এই ছেলের জন্মের পর লিটুর স্ত্রী পুষ্প ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গত ৮ মাস আগে লিটু দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ওই স্ত্রী বর্তমানে অন্তঃস্বত্ত্বা বলে জানা গেছে।

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/১৬ আগস্ট ২০১৫/রেজাউল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়