ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

মাতৃভাষার মাধুর্য রক্ষায় আমাদের করণীয়

সিয়াম মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ২২:৪৬, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
মাতৃভাষার মাধুর্য রক্ষায় আমাদের করণীয়

দেশভাগের পর ৪৭ থেকে ৫২ অবধি ছাত্র-শিক্ষকসহ সকল পেশার মানুষের প্রতিবাদ, আন্দোলন ও নানা কর্মসূচির ফলে বাংলা ভাষা আজ আমাদের মুখের বুলিতে চূড়ান্ত রূপ পেয়েছে। মায়ের ভাষা পাকিস্তানি দোসররা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাংলা মায়ের বীর সন্তানেরা তা হতে দেয়নি। এদেশের অকুতোভয় সন্তানরা মায়ের ভাষাকে রক্ষার জন্য বুলেটের আঘাতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছে। হাজারো সন্তান সহ্য করেছে জেল, জুলুম, অত্যাচার আর নির্যাতন। 

আজ স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে গেলেও মায়ের ভাষার মাধুর্যতা রক্ষা পায়নি। স্বাধীনতার ৫১ বছরে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত হচ্ছি। কিন্তু মায়ের ভাষার প্রতি আমরা কতটুকু আধুনিক হয়েছি? বাংলা মায়ের ভাষার মাধুর্যতা কতটুকু রক্ষা করতে পেরেছি?

দেশের ৬৪টি জেলায় ভাষার ৬৪ রকম ব্যবহার, এটি আঞ্চলিকতা। এ ভাষায় প্রতিটি জেলার নিজস্ব সংস্কৃতি ও স্বকীয়তা বজায় থাকে। কিন্তু আমাদের বর্তমান চলাচল, বাচন ভঙ্গিমায় কতটুকু বাংলা সংস্কৃতিকে ধারণ করতে পেরেছি? বর্তমান নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা বাংলা ভাষার এক ভিন্ন রূপ দেখতে পাই। যে ভাষায় নেই কোনো রুচিবোধ, নেই সামাজিকতা, আছে শুধু অকথ্য অশ্রাব্য ভাষায় কথোপকথন ও গালিগালাজ। এতে করে ভাষার হাজার বছরের ঐতিহ্য ও নিজস্ব স্বকীয়তা হারাচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে বসে রুচিসম্মতভাবে এসব নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখার বা শোনার উপায় নেই। এভাবে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ভাষার অরুচিকর ব্যবহার। ফলে, বিশ্ববাসীর কাছে ইন্টারনেটে থাকা এসব নাটক, সিনেমা ও কনটেন্টগুলো থেকে বাংলা ভাষার প্রতি বিদ্রুপ মনোভাব তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া আমরা (বিশেষ করে- টিনএজ ছেলেমেয়েরা) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলিশ ভাষার ব্যবহার করে দিন দিন নিজেরা মায়ের ভাষায় লেখাটাও ভুলে যাচ্ছি। 

নিজের মায়ের ভাষার মাধুর্যতা রক্ষায় আমাদের কী কোনো দায়বদ্ধতা নেই? মায়ের ভাষাকে রক্ষার জন্য আমাদেরকে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন।

পারিবারিক শিক্ষা: শিশুর ভাষা শিক্ষার প্রথম মাধ্যম তার পরিবার। কোথায় কাকে, কোন পরিবেশে কেমন আচরণ করতে হয়, কীভাবে কথা বলতে হয়, সেটি আমরা পরিবার থেকে শিক্ষা পাই। তাই, পরিবারের সকল সদস্যের উচিত পরিবারের নতুন শিশুটিকে ভাষার সঠিক প্রয়োগ ভালোভাবে শেখানো।

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলো মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আমরা ভাষার ইতিহাস, সংস্কৃতি, প্রয়োগ ও ব্যবহারের নিয়মকানুন জানতে পারি। শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদেরকে শুদ্ধ বাংলা ভাষা শেখানো ও শুদ্ধ বাংলা ভাষায় কথা বলতে উদ্বুদ্ধ করা। 

ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার ও প্রয়োগ: ভাষার মাধুর্যতা রক্ষায় আমাদেরকে ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ করতে হবে। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে যোগাযোগ এর আরেকটি মাধ্যম হলো ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম’। তাই অফলাইনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও স্ট্যাটাস লিখা ও মেসেজ করার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষায় লিখা ও শুদ্ধ ভাষার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।  

সামাজিকতা রক্ষা: মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ চলতে পারে না। সমাজে চলার ক্ষেত্রে কিছু আদব-কায়দা, নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। তাই সমাজে চলাচলের ক্ষেত্রে বড়ছোট ভেদে ভাষার ব্যবহার ভিন্ন হয়, যাকে শালীন আচরণ বলা হয়। চলাচলের ক্ষেত্রে আচরণের শালীনতা মেনে চললে শুদ্ধ ভাষার প্রয়োগ ও ব্যবহার বজায় থাকে। এতে, ভাষার মাধুর্যতা রক্ষা পায়। 

নাটক-সিনেমায় ভাষার নীতিমালা: নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজ কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় কন্টেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ যেন বজায় থাকে, সে বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অথবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা উচিত। নাটক, সিনেমায় আঞ্চলিকতা তুলে ধরতে কোনো সমস্যা নেই, এতে বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি ফুটে উঠে। কিন্তু অশ্রাব্য ভাষার ব্যবহার হাজার বছরের সংস্কৃতিকে বিলুপ্তির দিকে ধাবিত করে। তাই, ভাষার সংস্কৃতি ও মাধুর্যতা রক্ষায় নাটক সিনেমায় ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ ও ব্যবহার করতে নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। 

স্বাধীনতার ৫১ বছর পেরিয়ে যেন আমরা আমাদের মায়ের ভাষার ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মাধুর্যতা ভুলে না যাই। এরজন্য সকলের প্রচেষ্টা ও সামাজিক জাগরণ প্রয়োজন। 

লেখক: শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা। 

/ফিরোজ/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়