‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে’
পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন এনপিসিবিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাসান। শনিবার পাবনার পাকশীতে।
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনপিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জায়েদুল হাসান বলেছেন, “রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের শক্তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি একটি নির্ভরযোগ্য ও কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ উৎস হিসেবে কাজ করবে। এটি বিশ্বের অন্যতম নিরাপদ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সময় কোনো তাপ বা কার্বন নিঃসরণ ঘটে না। ফলে কৃষি, মৎস্যসহ পরিবেশের কোনো ক্ষতি হবে না।”
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) এনপিসিবিএল-এর উদ্যোগে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঙ্গে প্রকল্পের সম্পৃক্ততা জোরদারের লক্ষ্যে পাকশী সড়ক ও জনপথ বিভাগের পরিদর্শন বাংলো চত্বরে এ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় প্রায় তিন শতাধিক স্থানীয় কৃষক, মৎস্যজীবী, শিক্ষক, মসজিদের ইমাম ও মন্দিরের পুরোহিত অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা পর্বের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের তথ্যচিত্র প্রদর্শন, মুক্ত আলোচনা, প্রশ্নোত্তর পর্ব, কুইজ প্রতিযোগিতা ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
কুলিং টাওয়ার থেকে নির্গত জলীয় বাষ্প পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয় উল্লেখ করে জায়েদুল হাসান বলেন, “দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রূপপুর প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও সেফগার্ডকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্পের ফিজিক্যাল স্টার্টআপের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
মতবিনিময় সভায় জানানো হয়, পাবনার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশ বান্ধব একটি প্রকল্প। কারণ এটি কয়লা, তেল ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ছাড়াই বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে এবং ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত করে না। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহায়ক ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বায়ু দূষণ হ্রাসে কার্যকর অবদান রাখবে।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর নির্দেশনা অনুসরণ এবং আধুনিক ভিভিইআর–১২০০ প্রযুক্তির রিঅ্যাক্টর ব্যবহারের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। ফলে কৃষি, মৎস্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশের কোনো ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইতোমধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় জনগণ তাদের জীবনযাত্রায় এর ইতিবাচক প্রভাব অনুভব করছেন এবং প্রকল্পের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পেরেছেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ড. খালেকুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঈশ্বরদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রণব কুমার, প্রকল্পের চিফ সুপারিনটেন্ডেন্ট মুশফিকা আহমেদ এবং ডেপুটি চিফ সুপারিনটেন্ডেন্ট ও ভৌত সুরক্ষা বিভাগের প্রধান এস এম মাহমুদ আরাফাত। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রবিউল হাসান।
সভা শেষে ঈশ্বরদী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মুফতি ওলিউল্লাহ বলেন, “বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হলে অতিরিক্ত তাপে এলাকায় বসবাস করা যাবে না এমন আশঙ্কা ছিল। আজ এই সভার মাধ্যমে আমাদের সেই ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়েছে। এখন আমরা নিরাপদ বোধ করছি। এ ধরনের সচেতনতামূলক সভা আরো বেশি আয়োজনের প্রয়োজন রয়েছে।”
রূপপুর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আমিরুল ইসলাম বলেন, “প্রকল্প চালু হলে এলাকায় বসবাস করা যাবে না—এমন ধারণা অনেকের মধ্যেই ছিল। আজকের আলোচনার মাধ্যমে সেই ভুল ধারণা থেকে মুক্ত হতে পেরে স্বস্তি পাচ্ছি। স্থানীয় জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করে এ ধরনের মতবিনিময় সভা নিয়মিত আয়োজন করা প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইতোমধ্যেই এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।”
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ