ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

যত সংকট হিলি পরিবার-পরিকল্পনা কার্যালয়ে 

মোসলেম উদ্দিন, হিলি (দিনাজপুর) || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ৩০ অক্টোবর ২০২০  
যত সংকট হিলি পরিবার-পরিকল্পনা কার্যালয়ে 

লোকবল সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম।

ফলে এখানকার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জনবলের অভাবে মাঠপর্যায়ে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি মুখথুবড়ে পড়ে আছে। অন‌্যদিকে, মাঠ পর্যায়ে এই বিভাগের স্বাস্থ‌্যকর্মীদের কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, হাকিমপুর (হিলি) উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ২১ হাজার ৪৪৭ জনের মাঝে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির সেবা দিয়ে আসছে পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগ। পিল সেবন করছেন ১৭ হাজার ৬৬৮ জন নারী, কনডম ব্যবহার করছেন ১৮৯৭ জন পুরুষ।  ইনজেকশন দ্বারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ করছেন ২ হাজার ৩১ জন নারী। স্থায়ী বন্ধ‌্যাত্ব করেছেন পুরুষ ১৯৬৪ জন, নারী ১২৪৬ জন। কাঠি দ্বারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বন্ধ‌্যাত্ব করেছেন ১২৯১ জন।

পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের মূল কাজ করে থাকেন নারী মাঠকর্মীরা। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিকল্পিত পরিবার সম্পর্কে নারীদের পরামর্শ ও উদ্বুদ্ধ করেন। গ্রামীণ গর্ভবতী নারীদের প্রসবকালে সহায়তা করেন পরিবার-পরিকল্পনাকর্মীরা। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কার্যক্রমের সফলতা-ব্যর্থতা মূলত পরিবার কল্যাণ সহকারীদের ওপরই নির্ভরশীল। এই উপজেলায় ৪৯ জন স্টাফ থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু এখানে কাজ করছেন মাত্র ২৯ জন। ২০ জন কর্মী না থাকার কারণে এই উপজেলা সেবা কার্যক্রম সুষ্ঠভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয় না।

ফলে এই উপজেলার গ্রামীণ জনপদে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের হার আশংকাজনকভাবে কমে গেছে।  বাড়ছে না দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণের হার। পদ দীর্ঘদিন খালি থাকলেও পূরণের কোনো উদ্যোগ নেই।

এছাড়া, মাঠ পর্যায়ে এই উপজেলার স্বাস্থ‌্যকর্মীদের কার্যক্রম নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ অনেক। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, উপজেলায় পরিবার-পরিকল্পনার কার্যক্রম শতভাগ সফল হয়নি। অপারেশনের মাধ্যমে স্থায়ী বন্ধ‌্যাত্বকরণে পুরুষ ও নারীকে দেওয়া হচ্ছে ২৩০০ টাকা। আবার নারীদের কাঠি দ্বারা বন্ধ‌্যাত্বকরণে তাদের দেওয়া হচ্ছে ১৭৩ টাকা। 

তারা অভিযোগ করে জানান, কাঠি দ্বারা বন্ধ‌্যাত্বকরণে অনেক নারীকে এই টাকা দেওয়া হচ্ছে না।  আবার সপ্তাহে মাত্র দুইদিন মাঠ পরিদর্শনে যান মাঠ কর্মীরা। 

এ বিষয়ে কথা হলে উপজেলার জালালপুর গ্রামের শ্রীমতি রত্না দাস রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনেক আগে আমি কাঠি দ্বারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছি। কিন্তু আমি কোনো টাকা পাইনি। আমার মতো এই গ্রামের আরও অনেকে এই টাকা পাননি।’

ওই গ্রামের নতুন বিয়ে হওয়া নারী জমিলা কুলসুম বলেন, সপ্তাহে মাত্র দুই দিন আসেন মাঠকর্মী আপা। এ সময় অনেকে ভিড় করেন। আবার কোনো কারণে তার সঙ্গে দেখা না হলে পরে আর পাওয়া যায় না। এজন‌্য অনেক সময় জরুরি সেবা মিস হয়ে যায়।

হাকিমপুর উপজেলা পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমরা শতভাগ পরিবার-পরিকল্পনার কার্যক্রম সফল করতে পারিনি, তবে ৮০ শতাংশ সফল হতে পেরেছি।’ 

এ সময় কাঠি দ্বারা বন্ধ‌্যাত্বকরণের টাকা কেন দেওয়া হয় না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকেই টাকা দিয়ে আসছি।’

মামুনুর রশিদ আরও বলেন, ‘আমাদের জনবল সংকট রয়েছে। যেখানে ৪৯ জন স্টাফ থাকার কথা সেখানে মাত্র ২৯ জন রয়েছে। ২০ জন কর্মী না থাকার কারণে আমাদের কার্যক্রম শতভাগ সফল করতে পারছি না।’

এ বিষয়ে হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান রাইজিংবিডিকে বলেন, শতভাগ কার্যক্রম সফল হয়নি এবং কাঠি দ্বারা বন্ধ‌্যাত্বকরণের টাকা দেওয়া হয় না, বিষয়টি অবগত ছিলাম না। আপনার মাধ্যমে জানলাম, জনবল সংকটের বিষয়টি বিষয়টি নিয়ে ওই কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করবো। এ ব্যাপারটি আমরা অনেক আগেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।

হিলি (দিনাজপুর)/বুলাকী

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়