ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘রহস্যময় শেহেরজাদের’ মালিক কি পুতিন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৫, ১১ মার্চ ২০২২   আপডেট: ০২:৫৯, ১১ মার্চ ২০২২
‘রহস্যময় শেহেরজাদের’ মালিক কি পুতিন?

প্রমোদতরী শেহেরজাদে। ছবি: সংগৃহীত

শেহেরজাদে। আরব্য রজনীতে এক রানির নাম। যিনি এক হাজার এক আরব্য রজনীতে একটি করে গল্প শুনিয়েছিলেন সম্রাটকে। শেহেরজাদে একটি সুরেরও নাম। রাশিয়ান সুর। খ্যাতনামী এক রুশ সুরকার তৈরি করেছিলেন। যা আজও জনপ্রিয় রাশিয়ায়। তবে এই আলোচনার বিষয় শেহেরজাদে রানি নন, সুরও নয়। যাকে ঘিরে ইটালির উপকূলে ক্রমে গাঢ় হচ্ছে রহস্য, সেটি একটি প্রমোদতরী বা ‘সুপার ইয়ট’।

আরো পড়ুন:

দৈর্ঘ্যে দুনিয়ার সেরা এবং বড় প্রমোদতরীর প্রায় সমান। দাম কম করেও ৭০ কোটি ডলার। আর ইটালির উপকূলের জাহাজকর্মীদের ফিসফাসে কান পাতলে শোনা যায়, এটির মালিক স্বয়ং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

গত এক বছরের কিছু বেশি সময় ধরে এই প্রমোদতরীটি ইটালির মারিনা ডি কারারা উপকূলে রয়েছে। মেরামতির কাজ চলছে। কিন্তু যারা সেই কাজ করছেন, তারা খুব অবাক হয়েছেন প্রমোদতরীটির মাত্রা ছাড়া গোপনীয়তায়।

ইটালির উপকূলে মেরামতের কাজে প্রায়শই বহু জাহাজ, প্রমোদতরী আসে। তবে শেহেরজাদেই একমাত্র, যাকে সাধারণের নজর থেকে আড়ালে রাখতে টানা হয়েছে ধাতব পর্দা।

এমনকি শেহেরজাদের নাম গোপনে রাখারও যাবতীয় চেষ্টা করা হয়েছিল। জাহাজকর্মীদের কথা মানলে, কোনো জাহাজ বা প্রমোদতরীর নিরাপত্তার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব, তার পুরোটাই করা হয়েছে শেহেরজাদের জন্য।

প্রমোদতরীর সমস্ত কর্মীই রুশ। তবে চালক গাই বেনেট পিয়ার্স ইউরোপের মানুষ। প্রমোদতরীর মালিকের খোঁজে কিছু ইটালীয় তদন্তকারী গিয়েছিলেন পিয়ার্সের কাছে। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শেহেরজাদের মালিকানা কি রুশ প্রেসিডেন্টের?

কী বলেছিলেন তিনি? পিয়ার্স তার স্পষ্ট কোনো জবাব দেননি। তদন্তকারীদের বলেছেন, তিনি নিজে অন্তত কখনও পুতিনকে এই প্রমোদতরীর সওয়ারি হতে দেখেননি।

কিন্তু শেহেরজাদের মালিক কে? তা-ও কি জানেন না পিয়ার্স? সেটা কি সম্ভব? জবাবে পিয়ার্স বলেছেন, তার কিছু বাধ্যবাধকতা আছে। নাম বলা হয়তো তার পক্ষে সম্ভব নয়।

তবে পিয়ার্স এটুকু বলতে পেরেছেন যে, মালিক এমন কেউ নন; যার বিরুদ্ধে কোনো রকম আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকেই পুতিনের এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আমেরিকাসহ পশ্চিমের দেশগুলো। যার জেরে ইটালিসহ বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যেই রুশ জাহাজ এবং প্রমোদতরীর দখল নিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকার। ফ্রান্সে রুশ প্রমোদতরী আমোরে ভেরো’র দখলও নিয়েছে ফ্রান্সের সরকার। তবে কাকতালীয়ভাবে আমোরে ভেরো যে সংস্থার তৈরি, সেই ইম্পেরিয়ালই শেহেরজাদে’কেও তৈরি করেছে।

ইটালির তদন্তকারীরা তাই শেহেরজাদের পরিচয় জানতে ইম্পেরিয়ালের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল। তারা জানিয়েছে, শুধু আমোরে ভেরো বা শেহেরজাদে কেন, রাশিয়ার অধিকাংশ প্রমোদতরীরই নির্মাতা তারাই।

তবে কাদের জন্য সেই সব সুপার ইয়ট তৈরি করা হয়েছে, সে ব্যাপারে তারা ব্যবহারকারীর জন্য মন্ত্রগুপ্তির শর্ত মেনে চলে।

পুতিনের পাশাপাশি রাশিয়ার ধনকুবেরদের উপরেও জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তালিকায় রয়েছে ধনকুবের ওলিগার্সের সংস্থা, রয়েছেন রুশ ইস্পাত শিল্পের প্রভাবশালী শিল্পপতি অ্যালেক্সেই মর্দাশভ, পুতিনের বন্ধু কোটিপতি তেল ব্যবসায়ী গেনাডি টিমচেনকো। এদের প্রত্যেকেরই প্রমোদতরীর দখল নিয়েছে ইটালির সরকার। বাকি শুধু শেহেরজাদে। কিন্তু তার পরিচয় নিয়ে সংশয় কিছুতেই কাটছে না।

পুতিনের ইয়ট প্রেম সুবিদিত। পুতিনের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকের সময় সুযোগ হলে তা সাধারণত কোনো ইয়টেই আয়োজন করেন রাষ্ট্রপ্রধানেরা।

এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফরে মোদির সঙ্গে পুতিনের বৈঠকও হয়েছিল ইয়টেই।

সেই ইয়টপ্রেমী রাজনীতিবিদের নিজের ইয়ট নেই! তা কী হতে পারে? পুতিন নিজে অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি ঠিক ততটা ধনী রাষ্ট্রপ্রধান নন। তার সম্পত্তি মেরে কেটে দেড় লাখ ডলারের। তাহলে ইয়ট কোথা থেকে আসবে?

যদিও পুতিনের উপর যারা সব সময় নজর পেতে বসে আছেন তাদের দাবি, পুতিন অন্তত ১০ হাজার কোটি ডলারের সম্পত্তির মালিক। আর তার অন্তত একটি প্রমোদতরী তো আছেই।

পুতিন নজরদারদের কথা মতো পুতিনের ছোট প্রমোদতরীটির নাম ‘গ্রেসফুল।’ তবে তার সংগ্রহের সংখ্যা একাধিক হলে তার মধ্যে একটি ‘শেহেরজাদা’ও হবে কি-না, তা অবশ্য জানা যায়নি।

ইটালির জাহাজ কর্মীরা জানিয়েছেন, জাহাজের ভিতরে ঢোকার অনুমতি নেই কারও। শেহেরজাদা’র অন্দরসজ্জা কেমন তা-ও জানার উপায় নেই।

যদিও সুপার ইয়ট বিশেষজ্ঞ একটি সংস্থা জানিয়েছে, প্রমোদতরীটির মূল্য কম করেও ৭০ কোটি ডলার। 

সূত্র: আনন্দবাজার

/এনএইচ/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়