ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

১৭ ক্রয় প্রস্তাবে ব্যয় ১,৫৩৮ কোটি টাকা

হাসনাত/সনি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ১১ মে ২০২২  
১৭ ক্রয় প্রস্তাবে ব্যয় ১,৫৩৮ কোটি টাকা

ফাইল ছবি

দেশের ৮টি বিভাগের ভূমি ডিজিটাইড হচ্ছে। এরফলে ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতা কমবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ সংক্রান্ত ১০ প্রস্তাবসহ ১,৫৩৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৭টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

বুধবার (১১ মে) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে অনুমোদিত ক্রয় প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

সভা শেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র ১৫তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কমিটির অনুমোদনের জন্য (টেবিলে দুটিসহ) মোট ১৮টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়েছে। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ১০টি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২টি, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১টি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ১টি প্রস্তাব ছিল। এরমধ্যে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কমিটির অনুমোদিত ১৭টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১,৫৩৮ কোটি ৭৪ লাখ ৪০ হাজার ৮৬ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি হতে ব্যয় হবে ১,০৪১ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ৯০১ টাকা এবং দেশীয় ব্যাংক ও বৈদেশিক ঋণ ৪৯৭ কোটি ৬২ লাখ ৩১ হাজার ১৮৫ টাকা। অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত জানাবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী।’

সভা শেষে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড (টিএসপিসিএল)-এর জন্য ২৫ হাজার মেট্রিক টন (+১০%) রক ফসফেট আমদানির অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। টিএসপি সার উৎপাদনের কাঁচামাল রক ফসফেট বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ২৫ হাজার মেট্রিকটন (+১০%) রক ফসফেট আমদানির জন্য আন্তর্জাতিক উম্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্রে অংশ নিয়ে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনপুট, ঢাকা (প্রধান সরবরাহকারী: মেসার্স উইলসন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং পিভিটি লি. সিঙ্গাপুর) তা সরবরাহ করবে। এজন্য ব্যয় হবে ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮১ কোটি ৭৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। প্রতি মেট্রিকটন রক ফসফেট এর দাম ৩৮০ মার্কিন ডলার।’

সভায় রাষ্ট্রীয় চুক্তির মাধ্যমে কাতার থেকে ১৬তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির মাধ্যমে ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কাতারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে প্রতি মেট্রিক টন ৮৫৫ মার্কিন ডলার হিসেবে ১৬তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন (১০%+) বাল্ক প্রিল্ড (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২১ কোটি ২৩ লক্ষ ১২ হাজার ৫০০ টাকা।

তিনি বলেন, ‘কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ এর কাছ থেকে ১৭তম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার কেনার একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাফকো, বাংলাদেশ থেকে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কেনার সংশোধিত চুক্তি করা হয়। সে অনুযায়ী প্রাইস অফার পাঠানোর অনুরোধ করা হলে কাফকো, বাংলাদেশ প্রাইস অফার পাঠায়। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের দাম নির্ধারণ করে। প্রতি মেট্রিক টন ৮৭৬.৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া কিনতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ২২৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫০ টাকা।’

সভায় ‘বরিশাল জেলার সদর উপজেলায় কীর্তনখোলা নদীর ভাঙন থেকে চরবাড়িয়া এলাকা রক্ষা’ প্রকল্পের পূর্ত কাজের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৩.৩৬৬ কিলোমিটার নদী তীর সংরক্ষণ, ৯৪.৫৩ মিটার এন্ড টার্মিনেশন এবং ৫.৬ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের পূর্ত কাজ খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড-এর কাছ থেকে ২০৯ কোটি ৬২ লাখ ৫৮ হাজার ২০৮ টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর তারিখের সিসিজিপি সভায় অনুমোদিত হয়। চুক্তি অনুসারে কাজ চলমান অবস্থায় নকশা পরিবর্তনজনিত কারণে টেন্ডারভুক্ত/টেন্ডার বহির্ভুত আইটেম হ্রাস/বৃদ্ধি হওয়ায় ভেরিয়েশন বাবদ ১৮ কোটি ৬৬ লাখ ৭৩ হাজার ৫৯৩ টাকা ব্যয় হ্রাস করে সংশোধিত ১৯০ কোটি ৯৫ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬১৪ টাকার ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের গ্রিন সিটি আবাসিক কমপ্লেক্স-এ ২৫তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রত্যাহার করে নেওয়ায় এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’

সভায় ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প: জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল- এলেঙ্গা সড়ক ৪-লেন মহাসড়কে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ভেরিয়েশন প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সিসিজিপি সভার অনুমোদনক্রমে প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কুনওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনসাল্টিং কোম্পানি, কোরিয়া; কোরিয়া কনসালট্যান্টস ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি; ইন্টারন্যাশনাল কনসালট্যান্টস অ্যান্ড টেকনোক্রাটস প্রাইভেট লি. ভারত এবং ডেভেলপমেন্ট ডিজাইন কনসালট্যান্টস লি. বাংলাদেশকে ১০৪ কোটি ৪৯ লাখ ৫১ হাজার ২৫০ টাকায় নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রকল্পের নির্মাণ চুক্তির মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর কারণে ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ৪৯ কোটি ৫৯ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩৫ ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও সভায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশের ৮টি বিভাগের ‘মৌজা ও প্লট ভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্প’-এর আওতায় মৌজা ম্যাপ ডিজিটাইজকরণ এবং প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগসহ মোট ১০টি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে রংপুর বিভাগের ১৩৩০টি মৌজাম্যাপ ডিজিটাইজ করতে ব্যয় হবে ১২,৯৯,৮২,৬৭০ টাকা, রাজশাহী বিভাগের ১৭,৬৪১টি মৌজা ম্যাপের জন্য ব্যয় হবে ১৭,০১,৫০,৯৯৪ টাকা, ময়মনসিংহ বিভাগের ১১,৮৯৮টি মৌজা ম্যাপের জন্য ব্যয় হবে ১৩,৪০,১২,৮৯৭ টাকা, সিলেট বিভাগের ১০,২০৪টি মৌজা ম্যাপে ব্যয় হবে ১৪,২৩,৪৩,৩৪০ টাকা, ঢাকা বিভাগের ১৮,৭৭৯টি মৌজা ম্যাপে ব্যয় হবে ১৭,৮০,১১,৫০৫ টাকা, খুলনা বিভাগের ৪২,১৭১টি মৌজা ম্যাপে ব্যয় হবে ২৭,৯৪,২৭,১৩০ টাকা, বরিশাল বিভাগের ৮,৭৯৩টি মৌজা ম্যাপের জন্য ব্যয় হবে ১২,৩৯,০১৩৯২ টাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫,৬২২টি মৌজা ম্যাপ ডিজিটাইড করতে ব্যয় হবে ২৩,০৯,৭০,৪৪৪ টাকা। অর্থাৎ দেশের ৮টি বিভাগের ১,৩৮,৪১২টি মৌজা ম্যাপ ডিজিটাইড করতে মোট ব্যয় হবে ১৩৮,৮৮,০০৩,৩৭২ টাকা।

তিনি বলেন, ‘সভায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের ‘মৌজা ও প্লট ভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভূমি জোনিং প্রকল্পের’ ওয়েব ম্যাপিংয়ের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়ছে। প্রকল্পের আওতায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং এবং সিনেসিস আইটি লিমিটেড নিয়োগ পেয়েছে। সংস্থাটির কাছ থেকে এ সংক্রান্ত সেবা নিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৭ লক্ষ ৭৮ হাজার ৪০৯ টাকা।’

একই মন্ত্রণালয়ের ‘মৌজা ও প্লট ভিত্তিক জাতীয় ডিজিটাল ভ’মি জোনিং প্রকল্প’-এর আওতায় স্যাটেলাইট ইমেজ ও ল্যান্ডইউজ ক্লাসিফিকেশন সেবা ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে অতিরিক্ত সচিব জানান। একক উৎস হিসেবে সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস) নামের প্রতিষ্ঠানটি এই সেবা দিবে। এতে ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ৬৪ লক্ষ ৪৮ হাজার ৬ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘সভায় টেবিলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সার আমদানির দুটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সৌদি আরব থেকে ৩য় লটে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানির প্রস্তাব রয়েছে। প্রতি মেট্রিক টন সারের দাম ১০০৮.৫০ ডলার হিসেবে বাংলাদেশী মুদ্রায় ব্যয় হবে ৩৪৮ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার টাকা।’

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় তিউনিসিয়া থেকে ২৫ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার সার আমদানির অপর একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৯৮৯ ডলার হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ব্যয় হবে ২১৩ কোটি ৮৭ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা।

বিশেষ প্রতিবেদক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়