ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধাবোধ বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি: রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২০ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১১:১৩, ২০ এপ্রিল ২০২৪
বন্ধুত্ব ও শ্রদ্ধাবোধ বাংলাদেশ-রাশিয়া সম্পর্কের প্রধান ভিত্তি: রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. আন্দ্রেই ইউরেভিচ রুদেনকো বলেছেন, রাশিয়া ও বাংলাদেশ মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তি হলো সমতা, বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের সংবর্ধনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

মস্কোতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের ৫৩তম বার্ষিকী উপলক্ষে মস্কোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় ফোর সিজনস হোটেলে এক সংবর্ধনা সভার আয়োজন করে।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই ইউরেভিচ রুদেনকো। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী কর্নেল জেনারেল মি. আলেকজান্ডার ফোমিন এবং মস্কো সিটি গভর্নমেন্টের মন্ত্রী মি. সের্গেই চেরেমিন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মস্কোতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডসহ ষাটের অধিক দেশের রাষ্ট্রদূত, স্টেট ডুমার সদস্য, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যোগ দেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. আন্দ্রেই ইউরেভিচ রুদেনকো বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশেষ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তি ছিল বন্ধুত্ব, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সমতা। যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি ১৯৭২-৭৪ সময়কালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের মাইন অপসারণ ও ডুবে থাকা জাহাজ উত্তোলনে তৎকালীন সোভিয়েত নৌবাহিনী যে সফল অভিযান পরিচালনা করে, এ বছর তার ৫০ বছর পূর্তিতে বিশেষ আয়োজনের মাধ্যমে উদযাপিত হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

মি. রুদেনকো ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাডিমির পুতিন ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রথম পারমানবিক জ্বালানি হস্তান্তর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের কথা স্মরণ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর করার ব্যাপারে একযোগে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন।

দুই দেশের মধ্যে চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। আগামীতে এর আকার ও পরিধি আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া তথা আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায়ও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ-রাশিয়া উভয়েই জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং বহুপাক্ষিক বিশ্ব ব্যবস্থা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় দুই দেশই একসঙ্গে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সংবর্ধনা সভায় রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আবারো উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারায় ফিরে এসেছে এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দৃপ্ত পদক্ষেপে এগিয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রীর ‘ভিশন ২০৪১’ অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্মার্ট ও উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাবে।

করোনা পূর্ববর্তী সময় প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, সাম্প্রতিককালে রপ্তানি এবং রেমিটেন্স প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরায় শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের বলিষ্ঠ ও টেকসই নীতি ও পরিকল্পনার ফলেই এসব অর্জন সম্ভব হচ্ছে।

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর প্রথম সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরের মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কের যে ভীত রচিত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ২০১৩ সালের সফরের মাধ্যমে তা আরও সুদৃঢ় হয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মি. সার্গেই লাভরভের গত বছরের বাংলাদেশ সফর দুই দেশের সম্পর্ক সুদৃঢ়করণে রাশিয়ার অঙ্গীকারেরই সাক্ষ্য দেয়।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উন্নয়ন, মেগা প্রকল্প, বিনিয়োগ, পর্যটন ইত্যাদি বিষয়ক তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্থানীয় ও বাংলাদেশি বিভিন্ন খাবার দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়। পবিত্র রমজান মাসের কারণে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি ঈদের পরে আয়োজন করা হয়। এর আগে চলতি বছরে ৩০ মার্চ সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাশিয়ান ফেডারেশনে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের অংশগ্রহণে আরও একটি সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়।

পারভেজ/কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়