ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

নিরাপদ ভেবে খাটের নিচে রেখেছিলেন স্বর্ণ, সেখান থেকেই চুরি

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৩, ২৬ এপ্রিল ২০২৪  
নিরাপদ ভেবে খাটের নিচে রেখেছিলেন স্বর্ণ, সেখান থেকেই চুরি

কারাগারে নেওয়ার পথে নাসিমা

চোর-ডাকাতরা বাসায় চুরি-ডাকাতি করতে গেলে সবার আগে আলমারি-ওয়ারড্রবে মূল্যবান জিনিস খোঁজে। অন্যান্য জায়গায় তারা তেমন হাতড়ায় না। এমন ভাবনা থেকে ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার একটি পুটলিতে ভরে নিজেদের শোয়ার ঘরের খাটের নিচে রেখেছিলেন গৃহকর্ত্রী। সেখান থেকেই চুরি হয়েছে এসব স্বর্ণ।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন তল্লাবাগ এলাকায় শামীমা সুলতানের বাসা থেকে এসব স্বর্ণ চুরি হয়। এ অভিযোগে গত ২০ এপ্রিল গৃহপরিচারিকা নাসিমা খাতুনকে আসামি করে মামলা করা হয়। মামলা দায়েরের পর ২২ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয় গৃহপরিচারিকাকে। পরদিন তার এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, মামলার ঘটনার বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে আসামি। তবে, চুরির কথা সে অস্বীকার করেছে। মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে জানা যাবে প্রকৃত রহস্য। এদিকে, রিমান্ড শেষে ২৪ এপ্রিল নাসিমাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

মামলার বাদী শামীমা সুলতানা বলেছেন, মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকায় আমাদের নিজস্ব ফ্ল্যাট আছে। সেখান থেকে বড় ছেলের কোচিংয়ে যেতে-আসতে তিন ঘণ্টা সময় ব্যয় হয়। এ কারণে তল্লাবাগ এলাকায় ভাড়া বাসায় উঠি। ফেব্রুয়ারি মাসে ছেলের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। ছেলেকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যেতাম। সকালে যেতাম আর দুপুরে আসতাম। বাসায় ৯ ভরির মতো স্বর্ণ ছিল। এর মধ্যে আমি কিছু ব্যবহার করছি। অনেকে বলেছে, সহজ জায়গায় রাখলে গহনা চুরি হয় কম। এজন্য গহনাগুলো একটা পুটলিতে করে খাটের নিচে একটা কালো ব্যাগের মধ্যে রাখি। আমার গলায় একটা চিকন চেইন ছিল। ছেলের পরীক্ষা চলাকালে ওইখান থেকে একটা ভারী চেইন নিয়ে পরি। মার্চের ২০ তারিখ পর্যন্ত গহনাগুলো দেখেছি। এর মাঝে তো রোজা, তারপর ঈদ চলে এলো। ঈদের দুই দিন আগে ৯ এপ্রিল নাসিমাকে বলি, সবগুলো রুম পরিষ্কার করে দিতে। সে পরিষ্কার করে দেয়। স্বর্ণ যে খাটের নিচে ছিল, সেখানেও পরিষ্কার করে। তাকে আট দিনের ছুটি দিই। ১৬ এপ্রিল সে ঢাকায় আসে। ওই দিন ঘুমোতে গিয়ে দেখি, খাটে ঠিকমতো শোয়া যাচ্ছে না। পরে নিচে উঁকি দিয়ে দেখি, খাটের নিচের কিছু কাঠ সরে গেছে। তখন হঠাৎ করে গহনার কথা মনে পড়ে। দেখি পোটলাটা নেই। আমার স্বামীকে বলি, দেখো তো, পোটলাটা আছে কি না। ঘরের সব জায়গায় তল্লাশি করি। কিন্তু কোথাও পাই না।

তিনি বলেন, ১৭ এপ্রিল নাসিমা আমার বাসায় কাজ করতে এলে তাকে বলি, আমার বাসা থেকে একটা জিনিস হারিয়ে গেছে। তুমি পেয়েছ কি না। সে বলে, কিছু পাইনি। ওই দিন সে কাজ করে চলে যায়। আমি বলি, বিকেলে ফোন দিলে এসে রুটি বানিয়ে দিয়ে যেও। সে বলে, ঠিক আছে। সে বিকেলে আসে। তাকে বলি, তুমিই তো বাসায় কাজ করো। আর কে পাবে। সে না না বলে। রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত অনেকভাবে তাকে বলি, কিন্তু সে স্বীকার করে না। জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি রেখে তাকে ছেড়ে দিই। পরদিন তাকে কাজে আসতে বলি। বললো, আসবে। এর পর তার ফোন বন্ধ পাই। ও যেখানে থাকে, খবর নিয়ে জানতে পারি, সেখান থেকে চলে গেছে। পরে ওর স্বামী ফোন দিয়ে বলেন, নাসিমাকে কাজে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এর মাঝে ওর ফোন খোলা পাই। তাকে জিজ্ঞাসা করি, কাজে আসলে না কেন? সে বলে, বাড়িতে চলে এসেছি। ওদিকে, নাসিমার স্বামী বলে, সে যাত্রাবাড়ীতে তার কাছে এসেছে। দুজনের দুই রকম কথা। আমার ধারণা, নাসিমাই আমার গহনাগুলো নিয়েছে। আর কেউ বাসায় আসেনি। আর আমরাও কোথাও যাইনি।  

তবে, নাসিমার স্বামী মোশাররফ হোসেন বলেছেন, নাসিমা এরকম কাজ করতেই পারে না। ওর এ ধরনের কোনো লোভ নেই।, নাসিমা ছোটা বুয়ার কাজ করে। ৬-৭টি বাসায় কাজ করে। ওই বাসায় সাত মাস যাবৎ কাজ করেছে। ঝগড়া-বিবাদ নেই। তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক।  ২৮ রোজায় ৮ দিনের ছুটি দেয়। ও বাড়িতে যায়। পাঁচ দিন ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় আসে। শামীমার বাসায় কাজে যায়। দেখে, খাট ভাঙা। সবকিছু এলোমেলো। তিনটা কাজ দেড় ঘণ্টা লাগে। আড়াইটায় ওই বাসা থেকে বের হয়। বিকেলে ফোন দিলে রুটি বানিয়ে দিয়ে আসত। ওই দিন নাসিমাকে ফোন দেয় শামীমা। ওয়াসরুমে থাকায় ধরতে পারেনি। পরে কল ব্যাক করে। নাসিমা তার বাসায় কাজে যায়। পরে নাসিমাকে আমি ফোন দিই। সে বলে, বিজি আছি। আবার ফোন দিলে একই কথা বলে। পরে এ ঘটনার কথা আমাকে বলে। নাসিমাকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়েছে। আঘাত করতে গেছে। গরম পানির ছ্যাকা দিতে চেয়েছে। আমাকে ফোন দিয়ে এনআইডি কার্ড চেয়েছে শামীমার পরিবার। আমি পাঠিয়ে দিই। 

তিনি বলেন, নাসিমা পরের দিন কাজে যেতে চায়। আমি বারণ করি। বাড়ি পাঠিয়ে দিই। পুলিশ ২০ এপ্রিল ফোন দেয়। ২১ তারিখ দেখা করতে বলে। আমি যে স্যারের আন্ডারে কাজ করি, উনি পুলিশের সাথে কথা বলেন। ২২ তারিখ আমাদের যেতে বলে। ২২ তারিখ আমরা থানার উদ্দেশে রওনা দিই। ওখানে গেলে নাসিমাকে গ্রেপ্তার করে। যে এসআই আমাদের দেখা করতে বলেছিলেন, তাকে ফোন দিই। উনি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় আছি। 

মোশাররফ বলেন, এত টাকার গহনা কেউ খাটের নিচে রাখে। দুই মাস ধরে নাকি সেখানে ছিল। আমাদের দাবি, সত্য উদঘাটন হোক। অপরাধ করলে শাস্তি হোক। বিনা অপরাধে শাস্তি পেলে বলার কিছু নেই। গরিব হতে পারি, কিন্তু ছোটলোক না।

তিনি বলেন, গ্রামে ব্যবসা করছিলাম। কিন্তু, ব্যবসায় লোকসান হয়। শহরে এসেছিলাম ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে। এখন বড় বিপদে পড়ে গেলাম। ছোট ছোট দুইটা ছেলে ওর নানির কাছে থাকে। ফোন দেয় মায়ের সাথে কথা বলতে। ভুল-ভাল বোঝাচ্ছি ওদের। আল্লাহ জানে, আমাদের কপালে কী আছে?

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শেরেবাংলা নগর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান বলেন, নাসিমা নামের মেয়েটি বাসায় কাজ করত। সেই বাসা থেকে কয়েক লাখ টাকা স্বর্ণালঙ্কার চুরি হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়। নাসিমাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তেমন কিছু বলেনি। চুরির বিষয় সে অস্বীকার করেছে। তারপরও যে তথ্য পেয়েছি, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এদিকে মামলার এজাহার অনুযায়ী চুরি হওয়া স্বর্ণগুলোর মধ্যে আছে—দেড় ভরি ওজনের লকেটসহ স্বর্ণের চেইন, যার দাম দেড় লাখ টাকা। ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ৬টি স্বর্ণের চেইন। ৮৫ হাজার টাকার তিন জোড়া কানের দুল। ২৫ হাজার টাকার একটি আংটি, ১০ হাজার টাকার দুটি লকেট। 

মামুন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ