ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রুম্পাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে- দাবি পরিবারের

মাহমুদুল হাসান মিলন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৮, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রুম্পাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে- দাবি পরিবারের

রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির নিহত শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে তার পরিবার।

স্বজনরা বলছেন, রুম্পার আত্মহত্যা করার কারণ থাকতে পারে না। এমনকি যেখানে লাশ পাওয়া গেছে, স্বেচ্ছায় সেখানে যাওয়ারও কথা নয়। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন এবং বিচার নিশ্চিত করতে রুম্পার পরিবার, জনপ্রতিনিধি এবং নিজ গ্রামের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

শনিবার সকালে রুম্পার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের সদর উপজেলার চরনিলক্ষীয়া ইউনিয়নের বিজয়নগরে গিয়ে কথা হয় তার স্বজনদের সঙ্গে। মেয়ের কবরের পাশে কন্যা শোকে কাতর মা নাহিদা আক্তার পারুল মূর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজনরা তাকে সান্ত্বনা দিয়েও মানাতে পারছেন না। মেয়ের কবরের অপর পাশে বসে কাঁদছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবা মো. রুকুন উদ্দিন। সন্তানহারা বাবা-মার কান্নায় সৃষ্টি হওয়া হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন অন্যরাও।

মা নাহিদা আক্তার পারুল বিলাপ করে বলতে থাকেন, ‘‘মেয়ে জরুরি কাজের কথা বলে গেল, ফিরলো লাশ হয়ে। মেয়েকে কত কষ্ট দিয়েই না ওরা মেরেছে। মরার সময় মেয়েটি কতবার জানি, মা-মা বলে চিৎকার করেছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘বুধবার সকালে ডিম ভাজি করে নিজ হাতে মেয়েকে খাইয়ে দিয়েছি। এটাই যে শেষ খাওয়া কে জানতো? সন্ধ্যায় বাইরে থেকে এসে বাসার নিচে থেকে তার ছোট ভাই (চাচাতো) শুভকে ডেকে তার কাছে ব্যাগ-মোবাইল রেখে চলে যায়। এমন কী জরুরি কাজ ছিল যেজন্য এত দ্রুত ছুটে গেল সে। মেয়ের ফেরার অপেক্ষায় দিন-রাত অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্ত শেষ পর্যন্ত মেয়ে ফিরলো লাশ হয়ে।’’

মেয়েকে হারিয়ে নির্বাক মো. রুকুন উদ্দিন কেবল কেঁদে যাচ্ছিলেন। কারো সঙ্গে তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। মাঝে মাঝে চিৎকার দিয়ে বলছেন, ‘‘আমার সব শেষ হয়ে গেল। আদরের মেয়েটাকে বাঁচতে দিলো না।’’

স্থানীয় চরনিলক্ষীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুকুল ইসলাম রতন বলেন, রুম্পার পরিবার ভালো মানুষ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তারা সব সময় এলাকার মানুষকে সহযোগিতা করে থাকে। রুম্পার এমন মৃত্যু সবাইকে কষ্ট দিয়েছে। এই মৃত্যুর সঠিক তদন্ত দাবি করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি। 

গত বুধবার রাতে রাজধানীর ইনার সার্কুলার রোড থেকে অজ্ঞাত হিসেবে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রুম্পার মা ও স্বজনরা রমনা থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে তাকে শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার রুম্পার লাশ গ্রামের বাড়ি বিজয়নগরে নিয়ে আসা হয়। সেখানে পরিবারিক গোরস্থানে দাদি রুবিলা খাতুনের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

রুম্পার বাবা মো. রুকুন উদ্দিন হবিগঞ্জে পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত। মা নাহিদা আক্তার পারুল গৃহিণী। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে রুম্পা বড়। রুম্পা রাজধানীর স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে রাজরবাগ পুলিশ লাইনস স্কুল থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি, ২০১৬ সালে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তার ছোট ভাই আশরাফুল আলম ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত।

ঢাকার শান্তিবাগে একটি ফ্ল্যাটে মায়ের সঙ্গে থেকে পড়াশোনা করতেন রুম্পা ও তার ছোট ভাই। পড়াশোনার পাশাপাশি রুম্পা টিউশনি করতেন। গত বুধবার টিউশনি শেষে বাসায় ফেরার কিছুক্ষণ পর রুম্পা আবার বাইরে কাজ আছে বলে বের হয়। কিন্তু এরপর রাতে আর বাসায় ফেরেনি।


ময়মনসিংহ/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়