ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নদীতে ভাসছে কোরবানির পশুর চামড়া, হুমকিতে হাকালুকি হাওর

সাইফুল্লাহ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১১, ৩ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
নদীতে ভাসছে কোরবানির পশুর চামড়া, হুমকিতে হাকালুকি হাওর

জুড়ী নদীতে ভাসছে কোরবানির পশুর চামড়া

ক্রেতা না থাকা এবং ভালো দাম না পাওয়ায় কোরবানি পশুর চামড়া মৌলভীবাজারের জুড়ী নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছে অনেক বিক্রেতা। আর এ নদীর পানি গিয়ে পড়ে হাকালুকি হাওরে। ফলে সেখানকার পানি নষ্ট হওয়ার শঙ্কার পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও হুমকিতে পড়তে পারে।  

'নদীতে চামড়া ভাসছে'- মূলত এমন খবর পেয়ে সরেজমিন রোববার (২ আগস্ট) বিকেলে মৌলভীবাজারের জুড়ী নদীতে গিয়ে সত্যতা পাওয়া যায়। কেউ উন্মুক্ত ফেলে রেখেছে, কেউ আবার বস্তাবন্দি করে। 

কথা হয় বেলাগাঁও এলাকার বাসিন্দা হাবিব চৌধূরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা দুই দিন অপেক্ষা করেছি, কেউ চামড়া নিতে আসেনি। ধীরে ধীরে চামড়া থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে, সেজন্য নদীতে ফেলে দেই। আমাদের এখানে আবার পুঁতে রাখার মতোও অবস্থা নেই। কারণ এলাকা বা বাড়ির পাশেপাশে শুধু পানি আর পানি।
 
স্থানীয় বাসিন্দা রায়হান আহমদ বলেন, নদীতে ফেলে দেওয়ার কারণে পানি দূষিত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের যে অন্য কোনো উপায় নেই। প্রশাসন থেকেও বর্জ্য অপসারণের কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

পাতিলাসাঙ্গন এলাকার হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতিবছরই আমাদের এলাকায় চামড়া কিনতে কেউ না কেউ আসতো। কিন্তু এবার কেউ আসেননি। আমরা বাধ্য হয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলেছি। এ এলাকার সব মানুষই এমন করেছেন। 

জুড়ী শহরের স্থায়ী বাসিন্দা মেহেদী হাসান মারুফ বলেন, প্রতিবছর দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার খরচ যোগাতে বিভিন্ন এতিমখানা, মাদরাসা ও সংগঠন চামড়া সংগ্রহ করে নিয়ে যেত। এবার কেউ নেয়নি। কোনো ক্রেতাও নিতে আসেনি। তাই আমাদের কোরবানির পশুর চামড়া মাটিতে পুতে ফেলেছি। 

উপজেলার ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী শিমুল আহমদ জানান, এবার আমি ৩৪টি বড় গরুর চামড়া কিনে মাত্র ৫ হাজার ৫শ’ টাকায় বিক্রি করেছি। আগে যেখানে প্রতিটি বড় গরুর চামড়া ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা বিক্রি করা যেত, সেই একই চামড়া বর্তমানে ১শ’ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি করা যায় না। এরকম চলতে থাকলে আমরা আগামী ঈদে আর চামড়া কিনবো না।

উপজেলার স্থানীয় সংগঠক আশরাফুজ্জামান রিশাদ রাইজিংবিডিকে বলেন, দাম না পেয়ে ক্ষোভে ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা কোরবানির পশুর চামড়া জুড়ী নদীতে ফেলে দিয়েছেন। যা জুড়ী নদী ও হাকালুকি হাওরের জীববৈচিত্র্য নষ্ট এবং মাছের জন্য হুমকি। এ ব্যাপারে স্থানীর প্রশাসনকে তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই। 

জুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল-ইমরান রুহুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, নদীতে কেউ চামড়া ফেলে দিলে তো আমরা তাদের আটকাতে পারবো না। তাদের বলা হয়েছে এবং সরকারের নির্দেশ ছিল যে কেউ চামড়া বিক্রি করতে না পারলে সেটা স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বরের মাধ্যমে আমরা ক্রয় করবো। সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে চামড়া সঠিক স্থানে পাঠিয়ে ন্যায্যমূল্য পরিশোধ করে দেওয়া হবে।

 

এসএম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়