ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

হিটশকে চিটা হয়ে যাচ্ছে ধান: শঙ্কায় কৃষক

পাবনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ১৪ এপ্রিল ২০২১  
হিটশকে চিটা হয়ে যাচ্ছে ধান: শঙ্কায় কৃষক

গত ৪ এপ্রিল মৌসুমের প্রথম ঝড়ো বাতাসের সঙ্গ গরম হাওয়ায় পাবনার চাটমোহর ও ঈশ্বরদী উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জমির ধান। এই গরম হাওয়াকে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন হিটশক। এতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। 

ধানের ফলন নিয়ে যখন আশায় বুক বেধেছিলেন কৃষক, ঠিক তখন হঠাৎ কয়েক মিনিটের গরম হাওয়া কেড়ে নিলো তাদের স্বপ্ন। বেশিরভাগ জমির ধান গরম হাওয়ায় চিটা হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে কী করবেন ভেবে পাচ্ছেন না তারা। তবে, কৃষি বিভাগ বলছে- এসব জমির ধান ৮০ ভাগ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।

গতকাল মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) বিকেলে চাটমোহর উপজেলার বিলকুড়ালিয়া মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বাতাসে দোল খাচ্ছে মাঠ ভরা সবুজ ধান। এ দোলা লেগেছিল কৃষকের মনেও। ধান গাছের বুক চিরে কেবলই বের হয়েছিল শীষ। ধানের ফলন নিয়ে আশার স্বপ্ন দেখেছিলেন কৃষকরা। 

দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ ধানের সমারোহ দেখে বোঝার উপায় নেই ধানের কী অবস্থা। হঠাৎ করেই গরম ঝড়ো হাওয়ায় পুড়ে গেছে ধানের শীষ। এতে জমির ধানের শীষে দেখা দিয়েছে চিটা। 

গত ৪ এপ্রিলের গরম ঝড়ো বাতাসের পর মাঠে তেমন কিছু দেখা না গেলেও, কয়েকদিন পর জমিতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। জমির বেশিরভাগ ধান কালো হয়ে চিটা হয়ে যাচ্ছে। তাই লোকসানের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

কাতুলী গ্রামের কৃষক মানু শেখ বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করেছিলাম। আগাছা পরিষ্কার, সেচ দেওয়া, সার, কীটনাশক খরচ, বীজসহ সবকিছু মিলিয়ে বিঘা প্রতি এই ধান রোপনে খরচ হয়েছে সাড়ে ১১ হাজার টাকা। কিন্তু গরম বাতাসে জমির ধান যেভাবে চিটা হয়ে গেছে, তাতে অর্ধেক খরচ উঠবে কিনা সন্দেহ।’

একই গ্রামের কৃষক দিলবার হোসেন, আব্দুর রশিদ, রবিউল ইসলাম রবি কমবেশি সবাই ৩ থেকে ৭ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপন করেছেন। তাদের কণ্ঠেও একই হতাশার সুর। ধান লাগাতে যে খরচ হয়েছে তাতে কীভাবে কী হবে বুঝতে পারছেন না তারা। করোনার মাঝে এই ধান নিয়ে আশায় বুক বেধেছিলেন তারা।

ঈশ্বরদী উপজেলার বাঘইল গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘গরম বাতাসে ধান নষ্ট হয়ে চিটা হওয়ার মতো ঘটনা এর আগে ঘটেনি।’ 

গোপালপুর গ্রামের কৃষক তৌফিকুল আলম, জয়নগর গ্রামের কৃষক আবুল ফজলসহ অন্যরা বলেন, ‘কয়েকদিন আগ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। জমিতে সবুজ ধান দেখে মন ভরে গিয়েছিল। কিন্তু গতকাল জমিতে গিয়ে ধানের অবস্থা দেখে তো মাথায় হাত। মনে হচ্ছে জমির ধানের ‘বাইল’ পুড়ে কালো হয়ে গেছে। তারপর চিটা হয়ে যাচ্ছে ধানগুলো।’

তবে আশার কথা জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এম মাসুম বিল্লাহ জানান, মূলত ৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপামাত্রার বাতাসের কারণে এমন পরিস্থিতি। তবে, জমিতে ৩ ইঞ্চি পরিমাণ পানি জমিয়ে রাখা ও পরিমাণ মতো পটাশ সার স্প্রে করলে উপকার পাবেন কৃষকরা। এতে করে যেসব জমির ধানে চিটা মনে করছেন কৃষকরা, সেই জমির ধান শতকরা ৮০ ভাগ ধান পুনরুদ্ধার হবে বলে আশা করি।’

এ বছর চাটমোহর উপজেলায় আট হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আবাদের বিপরীতে বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিকটন। অপরদিকে ঈশ্বরদী উপজেলায় বোরো ধান আবাদ হয়েছে দুই হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

শাহীন রহমান/সনি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়