ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঈদে মহাসড়ক, মাঠ ও সেতুতে ভ্রমণ পিপাসুদের ঢল

গাজীপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০২, ১৬ মে ২০২১   আপডেট: ১১:০৩, ১৬ মে ২০২১
ঈদে মহাসড়ক, মাঠ ও সেতুতে ভ্রমণ পিপাসুদের ঢল

করোনা মহামারির কারণে বন্ধ সকল পর্যটন কেন্দ্র ও পার্ক।  তাই ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মহাসড়কের পাশে, বড় গাছের ছায়ায়, নদীর ওপর নির্মিত সেতু কিংবা কোনো বড় ব্রিজকেই বেড়ানোর জায়গা হিসাবে বেছে নিয়েছেন গাজীপুরের ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। 

ঈদের দিন নামাজের পর থেকেই রাস্তাঘাটে মানুষ যে যার মতো করে ঘুরছেন, কাটিয়েছেন নিজের মতো সময়। অনেকে পরিবার নিয়ে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আশপাশের মনোরম পরিবেশ ও দর্শনীয় স্থান দেখতে ঘর থেকে বের হন। 

উপচে পড়া ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই।  সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে ঈদ আনন্দে মেতে উঠতে দেখা গেছে দর্শণার্থীদের।

দেখা যায়, কালীগঞ্জ উপজেলার পৌরসভার দেওপাড়া এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিত শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু, একই এলাকার ঘোড়াশাল রেলওয়ে সেতু, আড়িখোলা রেলওয়ে স্টেশন, নাগরী ইউনিয়নের তেরমুখ এলাকায় বালু নদীর উপর ব্রিজ, মোক্তারপুর ইউনিয়নের একুতা এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিত চরসিন্দুর ব্রিজ, কাপাসিয়া উপজেলায় বানার নদীর ওপর নির্মিত ফকির মজনু শাহ সেতু এবং শ্রীপুর উপজেলার বরমীর বরামা ব্রিজের ওপর মানুষ এসেছেন বিনোদনের জন্য।  সেতু ও ব্রিজে আগতদের অর্ধেকই তরুণ-তরুণী। অন্যরা এসেছেন স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে।

স্কুলছাত্র রবিউল, সুজন, ইস্রাফিল, বায়েজীদসহ ১০ বন্ধু সেতুতে বেড়াতে এসেছেন কাওরাইদ থেকে।  তারা জানালেন, টানা এক বছর ধরে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ঘুরতে যাওয়ার তো আর জায়গা নেই। সবসময় বাসায় থাকা হয়। তাই ঈদের পরদিন কয়েকজন বন্ধু মিলে আমরা একটু ঘুরতে এসেছি এবং ঈদের আনন্দটা উপভোগ করতে পেরে ভালই লাগছে।

উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নের মাওনা থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এসেছেন আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি। বাড়িতে না থাকার কারণে স্ত্রী-সন্তান অনেক দিন যাবত ঘরবন্দি। ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসায় স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। তবে বরামা ব্রিজে মানুষের এতো ভিড় আগে জানলে আসতাম না।

এভাবে ফকির মজনু শাহ সেতু, বরামা ব্রিজ, শহীদ ময়েজউদ্দিন সেতু, চরসিন্দুর ব্রিজ, ঘোড়াশাল রেলওয়ে সেতু, বালু নদীর উপর ব্রিজ সবখানেই ঈদকে কেন্দ্র করে লোকারণ্য। সুযোগ বুঝে স্থানগুলোর পাশে ফুচকা ও খেলনা বিক্রেতারা দোকান খুলে বসেছেন। আর তাতে বেচাকেনাও হচ্ছে বেশ। 

গাজীপুরের টঙ্গীতে নোমান গ্রুপের পোশাক কারখানায় চাকরি করেন ফজলুল হক। 

তিনি বলেন, গার্মেন্টসে চাকরি করি।  রাত-দিন ডিউটি করতে হয়।  সময় পাইনা একটু ঘোরার জন্য।  এদিকে, করোনার কারণে বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ।  ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে সহপাঠি বন্ধুদের নিয়ে একটু বিনোদনের খোঁজে বরমীর বরামা ব্রিজে এসেছি।  এসে খুবই ভাল লাগছে।

কালীগঞ্জ পৌর এলাকার ভাদার্ত্তী গ্রামের বাসিন্দা ত্রিশোর্ধ তিন বন্ধু নুরুল ইসলাম, শহিদুল সরকার, সাইফুর রহমান মাসুম। শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিত চরসিন্দুর সেতুতে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে আসেন। তারা ভেবেছিলেন এই করোনাকালে লোকজনের ভিড় খুব কম হবে।  কিন্তু এসে দেখলেন পা ফেলার জায়গা নেই।

ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, স্ত্রী-সন্তান অনেকদিন যাবত ঘরে বন্দি। তাই, আমিও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। 

ঠিক একই চিত্র শ্রীপুর উপজেলার ওয়ায়েদ্দা দিঘির পাড় ফাঁকা মাঠেও। দীর্ঘ দুই কিলোমিটার লম্বা মাঠের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছে। কেউ ছবি তুলে সময় পার করছেন। আবার কেউ মাঠের মধ্যে বসে গল্প করে সময় পার করছেন।

স্থানীয় পোশাক কারখানার প্রশাসন বিভাগের কর্মী সাকিবুল হাসান সানি বলেন, দিঘির পাড়ে ঘুরতে এসে লোকজনের সমাগম দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি।

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছেন কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষক আবু জাকারিয়া পিন্টু। পরিবার নিয়ে এসেছেন রাজাবাড়ী ইউনিয়নের কোড়লপাড়া গ্রামের বেসরকারি চাকরিজীবি সারোয়ার জাহান শামীম। তারা এখানে ঘুরতে এসেও দারুণ মুগ্ধ।

এ ব্যাপারে শ্রীপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান মন্ডল দারা বলেন, ফাঁকা মাঠে কখনো এমন জমায়েত দেখা যায়নি। সরকারি বিধি-নিষেধে সবকিছু বন্ধ থাকায় ভ্রমণ পিপাসুরা এ ফাঁকা জায়গাটিতে এসে ভিড় জমিয়েছে।

বরামা ব্রিজ এলাকায় এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নয়ন ভূঁইয়া।

তিনি বলেন, মাস্ক পড়ার জন্য বলা হলেও তারা এটাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। জোর করে কি মানুষকে বোঝানো যায়।

একই কথা বললেন কালীগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিত শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মিত চরসিন্দুর ব্রিজে  ও কাপাসিয়ার ফকির মজনু শাহ সেতুতে দায়িত্ব পালনরত পুলিশ কর্মকর্তারা।

রফিক সরকার/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়