ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে শিশুদের চিকিৎসা হচ্ছে গাছতলায়

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৮, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ২০:৩৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১
ঠাকুরগাঁওয়ে শিশুদের চিকিৎসা হচ্ছে গাছতলায়

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে শিশুদের চিকিৎসা হচ্ছে গাছতলায়। এক বেডে একাধিক শিশু রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের মেঝেতে রেখে হলেও অন্য অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের চিকিৎসা করানোর চেষ্টা করছেন। তারপরও মেঝেতে  স্থানসংকুলান না হওয়ায় শিশু ওয়ার্ডের বাহিরের গাছতলায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে শিশুদের।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর ও তার বাহিরে গাছতলায় শিশুদের চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে। হাসপাতালের মূল ফটকের পাশে খানিকটা জায়গাজুড়ে যেসব গাছ রয়েছে তার নিচেই বিছানার চাদর পেতে শুয়ে-বসে অসুস্থ শিশুদের চিকিৎসা করাচ্ছেন অভিভাবকেরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানাযার, কিছুদিন থেকে শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়া জনিত রোগ বৃদ্ধি পায়। এতে রোগীর সামালদিতে ও জায়গার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে কতৃপক্ষকে।

হাসপাতালের ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডটিতে গত বুধবার ভর্তি ছিল ২০৩ শিশু। বৃহস্পতিবার ভর্তি আছে ২৩৫ শিশু। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ শিশুই শ্বাসকষ্ট, জ্বর, সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় ভুগছে।

সরেজমিন দেখা যায়, জায়গা না হওয়ায় এক শয্যায় দুই থেকে তিনজন শিশুকে রাখা হচ্ছে। ওয়ার্ডের মেঝে, বারান্দা ও অভিভাবকদের বসার জায়গায় রেখেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে শিশুদের। যাঁরা ওই সব জায়গায়ও স্থান পাননি তাঁরা আশপাশের ভবন, এমনকি গাছতলায় বিছানা পেতে শিশুদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। আর রাতে তাঁরা জায়গা নেন হাসপাতালের অন্য ফাঁকা জায়গায়।

ওয়ার্ডের বারান্দায় মেয়ে সুমাইয়াকে (৩) নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মোহাম্মদ ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগম। সদর উপজেলার জামালপুর থেকে এসেছেন তাঁরা।  খানিকটা সময় পর মেয়ের হাতে ক্যানুলা পরানো হলে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন তাঁরা। পরে তাঁদের দেখা মিলল হাসপাতালের ভেষজ বাগানের একটি অর্জুন গাছের নিচে।

ওয়ার্ডের একটি বিছানায় শিশুদের কোলে নিয়ে বসে আছেন চারজন নারী। তাঁদের একজন সবেদা খাতুন।

সাবেদা খাতুন জানান, তাঁরা চারজন বিছানা ভাগাভাগি করে শিশুদের চিকিৎসা নিচ্ছেন। দিনের বেলা এদিক-ওদিক গিয়ে সময় কেটে যায়। কিন্তু রাতে সমস্যায় পড়তে হয়। জায়গা না থাকায় শিশুদের নিয়ে পালা করে ঘুমাতে হচ্ছে।

মেয়ের চিকিৎসা নিতে আসা আছমা জানান, রোববার (১৯ সেপ্টেম্বর) মেয়ের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। চিকিৎসক মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন।  হাসপাতালে এসে দেখেন, কোথাও জায়গা নেই। উপায় না দেখে হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের সামনে রাত কাটান।

তিনি বলেন, ‘রাতে এখানে থাকি, দিনের বেলায় চলে আসি গাছের তলায়। আমার মতো অনেকেই শিশুদের নিয়ে গাছতলায় চিকিৎসা করাচ্ছেন।’

পঞ্চগড়ের বোদা থেকে এসেছেন মোমেনা বেগম তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ডের থেকে গাছতলাতেই ভালো আছি। যেখানে ২০ জনের মানুষ থাকার কথা, সেখানে ১০০ জন থাকেন। গরমে টেকাও যায় না।’

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের নবজাতক ও শিশু বিভাগের চিকিৎসক শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, ‘হাসপাতালে শিশু রোগীর চাপ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। তাদের বেশির ভাগই শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, সর্দি, জ্বর ও পেটের ব্যথায় আক্রান্ত। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে। এ সময় অভিভাবকদের বেশি সতর্ক থাকতে হবে। শিশুদের প্রচুর তরল ও ভিটামিন সি-জাতীয় খাবার দিতে হবে। শিশু ঘেমে গেলে জামাকাপড় পরিবর্তন ও ঘাম মুছে দিতে হবে।’

তিনি আরো জানান, ‘স্বাভাবিক সময়ে ৬০ থেকে ৭০ শিশু ভর্তি থাকে। এখন ১৭০ থেকে ১৮০ শিশু ভর্তি থাকছে হাসপাতালে। গতকাল ৪৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ১৯৩ শিশু রোগী। বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা আরো বেড়েছে। এর মধ্যে নবজাতক ৩৬। সবচেয়ে বেশি ৯৩ শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছে।’

ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার বলেন, ‘হাসপাতালে শিশু রোগীর সেবা মানসম্মত হওয়ায় আশপাশের জেলার অনেক এলাকার অভিভাবক তাঁদের শিশুদের এখানে এনে চিকিৎসা করান। এ কারণে এই হাসপাতালে সব সময় শিশু রোগীর চাপ থাকে। শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় অতিরিক্ত রোগীদের শয্যায় গাদাগাদি করে, মেঝেতে ও বারান্দায় বা বাহিরে থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে।’

হিমেল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়