ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যেভাবে উত্থান রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৯, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:৪১, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১
যেভাবে উত্থান রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ (ফাইল ফটো)

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বর্তমানে একটি আলোচিত নাম মুহিবুল্লাহ। তিনি মিয়ানমারের নাগরিক হলেও বিচরণ করেছেন অনেক দেশে। সাক্ষাৎ করেছেন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে। 

বুধবার (২৯) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) এই নেতাকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত‌্যা করেছে।

মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারের মংডু এলাকার লংডাছড়া গ্রামের মৌলভি ফজল আহমদের ছেলে। তিনি কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং ক্যাম্প-১ লম্বাশিয়া ইস্ট-ওয়েস্ট ব্লকের বাসিন্দা ছিলেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র বাহিনীর রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এ প্রধান ভূমিকায় কাজ করার অভিযোগ ওঠার পর ১৯৯২ সালে মহিবুল্লাহ মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর থেকেই তিনি কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করেন। তবে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প ও ক্যাম্পটির আশপাশে বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন। 

আরও পড়ুন: ‘সন্ত্রাসীরা কোনো সুযোগ দেয়নি মুহিবুল্লাহকে’

২০০০ সালের শুরুতে ১৫ জন সদস্য নিয়ে মুহিবুল্লাহ গড়ে তোলেন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস’ নামের সংগঠন। শুধু তা নয়, কক্সবাজারের স্থানীয়দের সঙ্গেও গড়ে তোলেন সুসম্পর্ক। এর ফাঁকে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ান তিনি। তাদের জমায়েত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে ধীরে ধীরে রোহিঙ্গাদের নেতা হয়ে ওঠেন। তখন বাংলাদেশ থেকে সহজে মিয়ানমারে যেতে পারায় সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ হতো। পরে সেখানেও বসবাস করেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাদের হাত থেকে প্রাণে বাঁচতে মংডু টাউনশিপের সিকদারপাড়া গ্রাম থেকে দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন তিনি।

এরপর আবারও আশ্রয় নেন উখিয়া ক্যাম্পে। সবকিছু আগে থেকে জানা-শোনা থাকায় ওখানকার মানুষের সঙ্গে মিশতে তার বেশি সময় লাগেনি। আবারও তিনি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাংগঠনিক কাজ শুরু করেন।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কিছু সংগঠন কাজ করলেও মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে পরিচালিত এআরএসপিএইচ সংগঠনটি বেশ শক্তিশালী। মুহিবুল্লাহর সংগঠনে ৩০০ জন সক্রিয় সদস্য রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত একটি তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিলো।

রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ দেশের বাইরে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সফর করেন একাধিকবার। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ১৭ দেশের যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২৭ প্রতিনিধি সাক্ষাৎ করেন সেখানেও যোগ দেন মুহিবুল্লাহ। যুক্তরাষ্ট্রের এ সফর দেশজুড়ে আলোচনায় আসলে মুহিবুল্লাহ বেশ পরিচিতি লাভ করেন এবং রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি হিসেবে আখ্যায়িত হন।

মুহিবুল্লার মূল উত্থান হয় ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা আগমনের বর্ষপূর্তিতে। ওই দিন তিনি লাখো রোহিঙ্গার সমাবেশ ঘটিয়ে আলোচনার তুঙ্গে এনেছিলেন নিজেকে। সেদিন তার নেতৃত্বে ছিলো ৩ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গার মহাসমাবেশ।

আরও পড়ুন: সন্ত্রাসীর গুলিতে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ নিহত

এরপর তিনি উখিয়া-টেকনাফের ৩২ রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়েছিলেন। রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগে দক্ষ মুহিবুল্লাহ ধীরে ধীরে প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন।

২৫ আগস্ট মাত্র কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতিতে কীভাবে এতো বড় মহাসমাবেশের আয়োজন করলেন মুহিবুল্লাহ ও তার সংগঠন। এর উত্তরে মুহিবুল্লাহ জানিয়েছিলেন, উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে তার সংগঠনের দুই হাজার নেতা-কর্মীকে মোবাইল ফোনে নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর কর্মীরা ঘরে ঘরে গিয়ে মহাসমাবেশে উপস্থিত হওয়ার কথা জানান। 

জাতিসংঘ মহাসচিবসহ যত বিদেশি প্রতিনিধি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গেছেন তাদের প্রত্যেকের সঙ্গেই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি হিসেবে মুহিবুল্লাহ ও তার সঙ্গীদের সাক্ষাৎ হয়েছে। মুহিবুল্লাহ মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিবকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়