ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

টায়ার পোড়া ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত পরিবেশ

ফেনী সংবাদদাতা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ৩ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ০৯:৪৫, ৩ ডিসেম্বর ২০২১
টায়ার পোড়া ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত পরিবেশ

দু’টি অবৈধ টায়ার পোড়ানোর কারখানা গড়ে উঠেছে ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নে কাশিমপুরে লঙ্কা পাওয়ারের দুই পাশে। এর একটি জায়লস্কর বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিম পাশে।

এ সব কারখানায় গাড়ি পরিত্যক্ত টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরি করা হচ্ছে। এতে বাতাসে ছড়াচ্ছে কার্বন মনো অক্সাইড, নাইট্রোজেন ও মিথেনসহ ১৬ ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক গ্যাস। 

গত তিন বছর ধরেই এই অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে আসছেন চারপাশের মানুষ। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে বারবার জানিয়েও কোনো ফল পাননি। 

এদিকে কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরাও। পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, তিনটি কারখানাই অবৈধ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আইনগত কোন ব্যবস্থা নেননি। অদৃশ্য কারণে নিশ্চুপ এই অধিদপ্তর। অথচ পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই তিনটি কারখানা গড়ে উঠেছে। তিন কারখানায় অবাধে টায়ার পুড়িয়ে জ্বালানি তেল তৈরির রমরমা ব্যবসা চলছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে গাছপালা ও জীব বৈচিত্র।

এদিকে পরিবেশ দূষণ নিয়ে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ পর্যন্ত ৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত পরিবেশ অধিদপ্তরকে  তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ প্রদান করলেও নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।  আদালত পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকান্ডে অসন্তুষ্ট। পরিবেশ অধিদপ্তর আদালত থেকে সময় প্রার্থণা করেছেন উপ-পরিচালক সাইদুর রহমান। 

চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর দাগনভূঞা দাদনা খাল দূষণে বিষয়ে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথম মামলা হয়। ৪ অক্টোবরের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালককে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন আদালত। ২ মাস পার হলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি পরিবেশ অধিদপ্তর। এভাবে একে একে পরিবেশ দূষণ নিয়ে ৬টি মামলা হয়। তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে গড়িমসি করে। 

জায়লস্কর বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিম পাশে একটি অবৈধ কারখানাটি জনবসতিপূর্ন এলাকার মধ্যে গড়ে উঠেছে। এই কারখানায় প্রতিদিন অবাধে  টায়ার পোড়ানো হচ্ছে। পাশে ফসলী জমিতে কোনো ফসল নেই। দূষিত গন্ধে কৃষকদের জমিতে আসতে কষ্ট হয়।

স্থানীয় আঞ্জুমান আক্তার জানান, প্রতিবাদ করায় ঘর-বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকি দেন কারখানার মালিক সিব্বির আহম্মেদ। বাড়ি ছাড় না হলে ভাড়া দিয়ে অন্যত্র চলে যাও। এছাড়াও বাড়ি না ছাড়লে চুরি করার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি ফেনী মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।  তিনি ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে তিনি বাড়ীটি নির্মাণ করেন। তার বাড়ীতে ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। 

স্থানীয় এলাকাবাসী হাছিনা আক্তার, গিয়াস উদ্দিন ও দাউদুল ইসলাম রুবেলের অভিযোগ- উম্মুক্ত স্থানে টায়ার পোড়ানোর ফলে তৈরি হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস। বাতাসের সাথে মিশে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে এই বিষাক্ত গ্যাস। উৎপন্ন বিষাক্ত গ্যাসে আশ পাশের ঘর-বাড়ি গাছপালা বিবর্ণ হয়ে গেছে। গাছের ফলগুলো অকালে ঝরে যাচ্ছে।  কারখানার পোড়া তেলে কৃষি জমিতে করে ফসল উৎপাদন হচ্ছে না।  টায়ার পোড়ানোর গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। 

মিয়াজি বাড়ির কামাল উদ্দিন জানায়, শতাধিক লোক স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ফেনীর পরিবেশ অধিদপ্তর- সব অফিসে দিয়েছি।  কোন ফল মিলেনি। এলাকায় বসবাস করতে চরম কষ্ট হচ্ছে।

দক্ষিণ কাশিমপুরের গ্রামের অধিবাসী কামরুল হাসান বলেন, কারখানার পাশে আমাদের বাড়ি। বিষাক্ত দুর্গন্ধের কারণে এলাকাবাসীর প্রতিবাদে তারা এখন রাতে কারখানা চালায়। শুরু হয় রাতভর অসহ্য গন্ধ দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকতে হয়।

মো. কুতুব উদ্দিন বলেন এলাকার প্রভাবশালী শিব্বির আহম্মদ, মহিপালের হোসেন মাহমুদ সবুজ ও লক্ষ্মীয়ারার জোবায়ের একই এলাকায় দুইটি কারখানা স্থাপন করে তিন বছর ধরে পরিবেশের ক্ষতি করছে।

এ ব্যাপারে এক কারখানা পরিচালক শিব্বির আহম্মদ জানান, কিছুদিনের মধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র পেয়ে যাচ্ছি। তখন কারখানাটি বৈধ হয়ে যাবে। এ কারখানা দিয়ে দেশের উন্নতি হচ্ছে। তাছাড়া রাতে মেশিন চালানোয় এলাবাসীর ক্ষতি হচ্ছে না। কারখানাটি পরিবেশবান্ধব করার প্রক্রিয়া চলছে।

ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফয়জুল কবির জানান, বুধবার (১ ডিসেম্বর) গ্রামবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে শুনানি হয়েছে। শুনানিতে কারখানার মালিক শিব্বির আহম্মদকে ২ মাসের সময় দিয়েছি। দুই মাসের মধ্যে কারখানা পরিবেশবান্ধব করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৬টি মামলার তদন্ত রিপোর্ট এখনও জমা দেওয়া হয়নি। মহামান্য আদালতকে সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।

সৌরভ পাটোয়ারী/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়