ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ: বাগেরহাটে বিপর্যন্ত জনজীবন 

বাগেরহাট প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৫, ৬ ডিসেম্বর ২০২১  
ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ: বাগেরহাটে বিপর্যন্ত জনজীবন 

ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ এর প্রভাবে টানা বর্ষণে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দুই দিনের অবিরাম বর্ষনে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ঝড়ের খবরে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরেছে বঙ্গোপসাগর ও গভীর সমুদ্রে থাকা নৌযানগুলো। এমনকি সুন্দরবনের মধ্যেও আশ্রয় নিয়েছে বেশ কিছু নৌযান। এদিকে ঝড়ের প্রভাবে বাগেরহাটের কোন বাঁধের ক্ষতি হয়নি। নদ-নদীর পানিও স্বাভাবিক আছে বলে জানিয়েছেন জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী দিববেন্দু বিকাশ সরকার।

জানা গেছে, টানা বৃষ্টির কারণে বাগেরহাটের অনেক এলাকার মাঠে থাকা পাক ধান ঝড়ে পড়েছে। বৃষ্টির স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পেলে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  

রোববার (০৫ ডিসেম্বর) ভোর থেকে একটানা বৃষ্টিতে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে। তবে মোংলা সমুদ্র বন্দরের পন্য খালাস ও বোঝাই স্বাভাবিক রয়েছে।

বাগেরহাট শহরের ভৈরব নদীর পাশে সরকারি জমিতে ঝুপড়ি ঘরে বসবাসকারী রাজিয়া বেগম বলেন, ‘শীত পড়েছে তারপরে সারাদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ের কথা শুনতেছি। কি হবে আল্লাহই ভালো জানে।’

রামপাল উপজেলার মৎস্য চাষী নাজমুল শেখ জানান, ‘নিচু এলাকায় আমাদের ঘের। দুই দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে ঘের ভরাট হয়ে গেছে। বৃষ্টি হতে থাকলে ঘের তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করছি। এতে আমাদের অনেক টাকার ক্ষতি হবে।’ 

চিতলমারী উপজেলার শ্রীরামপুর বিলে ধান লাগানো কৃষক রত্না বৈরাগী বলেন, ‘অনেক টাকা ধার নিয়ে ধান লাগিয়েছি। বৃষ্টি না থামলে আমার বিশাল ক্ষতি হয়ে যাবে।’

জেলে রিপন শিকদার বলেন, ‘ঝড়ের খবর শুনে এলাকায় আসছি। ভালভাবেই ফিরেছি আল্লাহর রহমতে। তবে আবহাওয়া ভাল হলে আবার যেতে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে, এই একটা বড় সমস্যা আমাদের। যদি বঙ্গোসাগর সংলগ্ন চরে আমাদের জন্য কোন আশ্রয়কেন্দ্র থাকত তাহলে এই অতিরিক্ত ব্যয় করতে হত না।’

বাগেরহাট শহরের রিকশা চালক কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘বৃষ্টিতে রোববার বের হয়নি। কিন্তু সকালে পরিবারের চাপে বের হয়েছি। রেইনকোট গায়েও থাকলেও বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে। সকাল থেকে কয়েকটি ট্রিপ মেরেছি। কিন্তু অন্য দিনের তুলনায় লোকজন কম হওয়ায়, আয়ও কম।’

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘মোংলা বন্দরের সব কাজ স্বাভাবিক রয়েছে। জাহাজ আসছে, যাচ্ছে। পণ্য বোঝাই ও খালাসও চলমান রয়েছে।’

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, ‘জাওয়াদ’ এর জন্য জন প্রতিনিধি ও প্রশাসনের সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অতি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ যাতে খাবারের কষ্টে না ভোগে এ জন্যও আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। 

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’ উপকূলে আসার আগেই দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপ হিসেবে এটি সোমবার মধ্যরাতে ভারতের ওড়িশ্যা উপকূল অতিক্রম করতে পারে। নিম্নচাপের প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) থেকে দেশের বেশিরভাগ এলাকার আকাশ পরিষ্কার হতে থাকবে। এছাড়া তাপমাত্রা কমে গিয়ে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে।

টুটুল/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়