ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শীতে ষাট গম্বুজ মসজিদে বাড়ছে দর্শনার্থী 

আলী আকবর টুটুল, বাগেরহাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৭:১০, ২৬ ডিসেম্বর ২০২১
শীতে ষাট গম্বুজ মসজিদে বাড়ছে দর্শনার্থী 

শীত মৌসুমে পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য ষাট গম্বুজ মসজিদে। মুসলিম স্থাপত্যের এই অনন্য নিদর্শন দেখতে প্রতিদিনই  অসংখ্য দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী আসছেন বাগেরহাটে। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের চেয়ে ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। 

গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই স্থাপনায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। কেউ এসেছেন বন্ধু-বান্ধবের সাথে, কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে, কেউ বা একা এসেছেন। প্রায় সাড়ে ৬‘শ বছর আগে নির্মিত মসজিদ, চত্বরে থাকা যাদুঘর, বিভিন্ন রাইডস, প্রশস্ত সড়ক, নানা জাতের ফুল এবং মসজিদের পশ্চিম পাশের বিশালাকৃতির ঘোড়াদিঘি দেখে মুগ্ধ সবাই। তবে সংখ্যা বেশি হওয়ায় দর্শনার্থীদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় প্রত্মতত্ব অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে।

প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শীত আসার আগ মুহূর্ত থেকেই ষাট গম্বুজ মসজিদে দর্শনার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। শীতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রচুর দর্শনার্থী আসেন এই স্থানে। এছাড়া সারাবছরই কমবেশি দর্শনার্থী ভ্রমণে আসেন। এবছর ১৯ আগস্ট থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮০ জন বিদেশিসহ এক লাখ ১০ হাজার ৫৩০ জন দর্শনার্থী ষাট গম্বুজ ভ্রমণ করেছেন। এর মাধ্যমে ১৯ লাখ ৫২ হাজার ৬০৫ টাকা রাজস্ব আয় করেছে সরকার। বিপুল পরিমাণ এই দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা ও সার্বিক সহযোগিতায় প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশও দায়িত্ব পালন করছেন। 

ঘুরতে আসা সিরাজগঞ্জের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী লিলা আক্তার বলেন, এই প্রথম ষাট গম্বুজ আসলাম। ভাইয়া, বড় আপুসহ মোট ৪ জন আসছি আমরা। এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর সাথে ছবি তুলতে আমার খুব ভালো লাগছে।

ঢাকা ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী কারিশা নাদিয়া পুনম বলেন, ষাট গম্বুজ মসজিদ কমপ্লেক্সের মধ্যেই রয়েছে বাগেরহাট জাদুঘর। ফলে এখানে আসলে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখার পাশাপাশি বাগেরহাটের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কেও জানা যায়। জাদুঘর ঘুরে, খানজাহান আমলের কুমিরের চামড়া দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। সুযোগ পেলে আবারও আসতে চাই এখানে।

টাঙ্গাইল জেলার আয়নাপুর এলাকা থেকে আসা রবিউল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, বইয়ে ষাট গম্বুজ সম্পর্কে পড়েছি, টাকায় এই মসজিদের ছবি দেখেছি। এখন সামনাসামনি দেখে খুব ভালো লাগছে। বইয়ে যেটা পড়েছি, সেই শিক্ষাটাকে ঝালাই করেও নিতে পারলাম।

তিন বছরের শিশু সন্তান নিয়ে আসা হাফিজুর রহমান ও ময়না আক্তার দম্পতি বলেন, ষাট গম্বুজ এসে অনেক ভালো লেগেছে। তবে এই কমপ্লেক্সের মধ্যে শিশুদের জন্য আরও কিছু রাইডস এবং খাওয়া দাওয়ার জন্য কোনো বিশেষ জায়গা থাকলে খুব ভালো হতো।

ঢাকা থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা ব্যবসায়ী খালিদ হোসেন বলেন, ষাট গম্বুজের আশপাশে উন্নত মানের কোনো আবাসিক হোটেল-মোটেল নেই। ভালো মানের খাবার হোটেলও নেই এখানে। সুপেয় পানিরও সংকট রয়েছে কমপ্লেক্সের মধ্যে। এসব সংকট সমাধান করতে পারলে আরও স্বাচ্ছন্দে বেড়ানো যেত ষাট গম্বুজে। 

আইনজীবী তুষার কান্তি বসু বলেন, ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছি এখানে। ষাট গম্বুজ মসজিদ দেখে আমাদের সবার খুবই ভালো লেগেছে। তবে বাগেরহাট জাদুঘরটিকে আরও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন। 

ট্যুরিস্ট পুলিশ, বাগেরহাট জোনের ওয়ালিউর রহমান বলেন, বাগেরহাটের দর্শনীয় স্থানগুলোতে দর্শনার্থীরা যাতে নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন, সেজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কেউ যাতে কোনো রকম হেনস্থা বা হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা। 

বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, ষাটগম্বুজ মসজিদ একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন স্থাপনা। এই স্থাপনার প্রতি দেশি-বিদেশি দর্শনার্থী ও গবেষকদের আগ্রহের কমতি নেই। ফলে প্রতিনিয়ত এখানে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের জনবল অনেক কম। দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে আমাদের কিছুটা হিমশিম খেতে হয়। তারপরও আমরা সবসময় চেষ্টা করি দর্শনার্থীদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে।

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়