ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বাবার কোলে শিশুকে হত্যা: প্রধান আসামির জবানবন্দি 

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:১০, ২২ এপ্রিল ২০২২  
বাবার কোলে শিশুকে হত্যা: প্রধান আসামির জবানবন্দি 

নোয়াখালীর হাজীপুর ইউনিয়নে তাসফিয়া আক্তার জান্নাত (৪) হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. রিমন ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) রাতে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. সাবজেল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,  বৃহস্পতিবার রিমনসহ ৫ আসামিকে আদালতে আনা হয়। তাদের মধ্যে মহিন উদ্দিন, সুজন, নাইমুল ইসলাম এবং আকবর হোসেনের ৭ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়। পরে আদালত রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 

এ ছাড়া প্রধান আসামি রিমন স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হওয়ায় তার জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করা হয়।

তিনি আরো বলেন, সন্ধ্যায় রিমনকে বিচারকের খাস কামরায় ডাকা হয়। সেখানে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম পিপিএম বলেন, এজাহারনামীয় ১নং আসামি মামুন উদ্দিন ওরফে রিমন (২৫)  বিজ্ঞ আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। জবানবন্দিতে বলে যে, এই মামলার ২য় আসামি বাদশা তার চাচা হয়। ভিকটিম পক্ষের লোকজনের সাথে বিবাদী পক্ষের মাটি কাটা নিয়ে বিরোধ চলে। ঘটনার দিন মহিনদের বাড়ির সামনে ১০/১২ জনে ভিকটিম পক্ষের লোকজনকে মারার জন্য জুয়েলের কাছ হতে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে অস্ত্র ভাড়া নেয়। 

বাদশা ও মহিনের নির্দেশে সে নিজেই শিশু তাসফিয়া আক্তার জান্নাত ও তার বাবাকে গুলি করে। পরবর্তীতে তাসফিয়া আক্তার জান্নাত মারা যায়। 

উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল (বুধবার) বিকালে তাসফিয়াকে নিয়ে বাড়ির পার্শ্ববর্তী দোকানে এলাকার আবদুল্লাহ আল মামুনের বন্ধু ষ্টোরে যান প্রবাসী মাওলানা আবু জাহের। ওই দোকানে গিয়ে তাসফিয়ার জন্য চকলেট, জুস ও চিপস নিয়ে দোকান থেকে বের হওয়ার সময় রিমন, মহিন, আকবর এবং নাঈমের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একদল সন্ত্রাসী মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের জের ধরে তার ওপর হামলা চালায়। 

একপর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরে, তারা দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা পেছন থেকে তাদের প্রথমে ইট নিক্ষেপ করলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাসফিয়া। মেয়েকে নিয়ে বাবা আবু জাহের বাড়ির দিকে চলে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা পেছন থেকে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে তাসফিয়া ও মাওলানা আবু জাহের গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

পরে গুলিবিদ্ধ তাসফিয়া ও মাওলানা আবু জাহেরকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে কুমিল্লায় পৌঁছলে মারা যায় তাসফিয়া। মাটি কাটার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এ বিরোধের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ততা ছিল না আবু জাহের বা তার মেয়ে তাসফিয়া। 

তবে মাটি কাটা নিয়ে বৈঠকে ছিল এমন অভিযোগে সন্ত্রাসীদের টার্গেট হয় মাওলানা আবু জাহের। আর সেই টার্গেটের শিকার হয়ে প্রাণ হারায় শিশু তাসফিয়া। আর চোখে ও মাথায় গুলিবিদ্ধ হন বাবা মাওলানা আবু জাহের।

এ ঘটনায় পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে তাসফিয়া হত্যার ঘটনায় তার খালু হুমায়ুন কবির বাদী হয়ে বাদশা ও রিমনসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় এ পর্যন্ত ৯ জন এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মওলা সুজন/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়