অফিস করেন না হাকিমপুর মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোরহান! 

জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২২ দিবসে উপস্থিত না থাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে। ৬ মাসেও অফিসে উপস্থিত থাকেন না তিনি। পিয়ন ও অফিসের হিসাব রক্ষক দিয়েই অফিসের সব কাজ করে নিতে হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলেছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। 

জানা যায়, গত শনিবার (২১ মে) সারাদেশের ন্যায় হাকিমপুর উপজেলায়ও পালিত হয়েছে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ-২০২২। এই দিবসের আয়োজক হয়ে থাকেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। কিন্তু হাকিমপুর উপজেলায় এই আয়োজনে শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন না। তিনি না থাকায় ব্যাহত হয় জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহের সব কার্যক্রম। এ ছাড়াও, পরের দিন রবিবারেও অফিসে উপস্থিত হননি তিনি।

২০১৭ সালে হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করেন এই অফিসার বোরহান উদ্দিন। যোগদানের পর থেকেই এলোমেলোভাবে অফিস করা এবং অধিকাংশ সময় অনুপস্থিত থাকেন এই শিক্ষা অফিসার। দিনের পর পর দিন ঘুরেও শিক্ষকদের মেলে না তার দেখা। পিয়ন আর অফিস সহকারীরাই করে থাকেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের সব কাজ। তবে বেশির ভাগ বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকেন তিনি।

ভুক্তভোগী বাংলাহিলি পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক সাইদুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‌‘তিনি তো একজন বাজে শিক্ষা অফিসার, তার অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ। মাসেও ঠিক মতো অফিস করেন না। পিয়ন আর অফিসের হিসাব রক্ষক দিয়ে সব কাজ করে নিতে হয়। একটা গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ দিবসেও তিনি উপস্থিত থাকেন না।'

হিলি রাউতারা মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল নুরুল আলম বলেন, ‘তার অনেক সমস্যা সবাই তা জানে, কেউ ভয়ে মুখ খুলে না। অফিসে গেলে তার দেখা কমই মেলে।’ 

হাকিমপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হিসাব রক্ষক আশরাফুল আলম বলেন, ‘মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিষয়ে গোটা হাকিমপুর উপজেলার মানুষ জানেন, আমি আর কী বলবো? তিনি অফিস ঠিকমতো করেন না। এ ছাড়াও, গত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহেও উপস্থিত ছিলেন না। তার জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আমাকে অপমানিত হতে হয়েছে।’

অফিস সহায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ছোট কর্মচারী, তার বিষয়ে কিছু বললে আমার অসুবিধা হবে।’

সোমবার (২৩ মে) দুপুর ১২টায় শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানার জন্য তার অফিসে গেলে দেখা যায়, সেদিনও তিনি অফিসে অনুপস্থিত। তার মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে এসময় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোহান উদ্দিন বলেন, ‘মোটরসাইকেলে আছি, পরে কথা বলি। পরে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।’

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ নুর-এ-আলম বলেন, ‘এর আগেও এই মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করা হয়েছে। গত জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহতে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। আমি এবিষয়ে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ করেছি। তিনারা এবিষয়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।’

হাকিমপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ হারুন বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা এমন অযোগ্য অফিসার আমাদের উপজেলায় আজও অবস্থান করছেন। বিগত দিনেও তার বিরুদ্ধ অনেক অভিযোগ এসেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।’

এবিষয়ে দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষা অফিসার বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধ অনেক অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এবারও তার অফিস না করা এবং জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহতে উপস্থিত না থাকার অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপর মহলে জানানো হবে।’