ঢাকা     রোববার   ১৬ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ২ ১৪৩১

১০১ বছরে কানাইলাল কুঞ্জমেলা

রফিক সরকার, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২০, ৬ জানুয়ারি ২০২৩  
১০১ বছরে কানাইলাল কুঞ্জমেলা

একশো পেরিয়েছে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের শ্রী কানাইলাল কুঞ্জমেলা। এবছর মেলাটি ১০১ বছরে পদার্পন করলো। দুই দিনের এই মেলা বসে ইংরেজি নতুন বছর অর্থাৎ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। তবে ইংরেজি মাস নয়, এই মেলার আয়োজন হয় মূলত পৌষ মাসকে কেন্দ্র করে। বাংলা এই মাসের শেষের দিকে মেলার আয়োজন করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের শ্রী শ্রী কানাইলাল মন্দির কমিটির উদ্যোগে হয় কুঞ্জমেলার আয়োজন। দুই দিনব্যাপী এ মেলার প্রথম দিন থাকে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী। দ্বিতীয় দিন দেশি মাছ বিক্রি হয় মেলা প্রাঙ্গণে। রাধাকৃষ্ণের লীলা কীর্ত্তন উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মেলার প্রধান আয়োজক। স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মেলা শুরুর আগের টানা ১৫দিন নিরামিষ আহার করেন। মেলার শেষ দিন পূজা শেষে তারা আমিষ গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় আনুষ্ঠানিকতা। মেলায় জামাতা ও আত্মীয়-স্বজনকে আমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করাও এ সময় স্থানীয় রেওয়াজ।

মেলা উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে বানানো হয় খই, মুড়কি, নারিকেল ও চালের নাড়ু। মেলা থেকে দই কিনে নিয়ে মুড়কি দিয়ে খাওয়ার রেওয়াজটিও ধরে রেখেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সকালে মেলা প্রাঙ্গনে গিয়ে দেখা যায়, পণ্যের পসরা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন শতাধিক ব্যবসায়ী। মিষ্টি, খেলনা, চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে ঘর গৃহস্থালির বিচিত্র জিনিস বিক্রি করছেন তারা। মেলায় নিমকি-মুড়কি, ফুচকা-চটপটি, ঝালমুড়ি-চানাচুর, মিষ্টি ও জিলাপি বিক্রি করা হচ্ছে ৫০টিরও বেশি দোকানে। 

ঢাকার ডেমরা থেকে আসা সাহেরা বেগম কুঞ্জ (৫০) মেলায় চুড়ি নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এবার আমি প্রথম কুঞ্জ মেলায় এসেছি। বিভিন্ন জনের কাছে এই কুঞ্জ মেলার কথা শুনে এখানে আসা। অনেক লোকজন এবং বেচাবেনাও ভালো। মেলায় সবচেয়ে বেশি মহিলা ও শিশুরা বিভিন্ন পণ্য কিনছে।’ 

মেলায় আসা এক শুটারম্যান জানান, এবার নিয়ে ৪ বছর ধরে তিনি মেলায় আসেন। প্রচুর মানুষ দেখে তার খুব ভাললাগে। এখানে মূলত শিশু-কিশোর ও তরুণ বয়সের লোকজন বেশি আসে। ৫ স্যুট ১০ টাকা। 

মেলায় নরসিংদী থেকে খেলনার দোকান নিয়ে এসেছেন আফজাল উদ্দিন (৫০)। তিনি বলেন, ‘আমি কয়েক বছর ধরেই এখানে আসি। পুরোনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এখানকার কুঞ্জ মেলাটি। বেচাকেনা যাই হোক একসঙ্গে এতো দর্শনার্থী দেখে ভালোই লাগে।’ 

একই কথা বলেন দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের চটপটি বিক্রেতা সুজন মিয়া, নরসিংদীর মনোহরদি থেকে নাগরদোলা নিয়ে আসা হানিফা  ও কৃষ্ণ দাস। তারা জানান, প্রতি জন ২০ টাকা করে টিকিট নিয়ে তারপর নাগর দোলায় চড়তে হয়। আর সবাইকে ১২টি রাউন্ড দেওয়া হয়। তবে শুধু তারা না। তাদের এই টিমের সাথে ৬ জন করে শ্রমিক আনতে হয়। তবে মেলার ক্রেতা নিয়ে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। 

মেলায় বাঁশ-বেতের তৈরি নানা রকম জিনিস নিয়ে আকবর আলী (৪৯) এসেছেন জামালপুর  থেকে। তার সাথে আসেন একই এলাকার ধীরেন্দ্র (৪৮)। তারা প্রতি বছর এই মেলায় আসেন। আগে বাপ-চাচারা আসতেন। তাদের বয়স হওয়ায় তারা এখন আর আসেন না। তাই বংশ পরম্পরায় তারা আসেন।

শ্রী শ্রী কানাইলাল মন্দির ও মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি মুকুল চন্দ্র দে বলেন, ১০১ বছরে পড়লো কুঞ্জ মেলা। মূলত পৌষ মাসের শেষের দিকে এই কুঞ্জ মেলা বসে। কানাইলাল মন্দির রাধা-কৃষ্ণের লিলা ১৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন ও রাতে পালা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। 

তিনি আরো বলেন, মেলা উপলক্ষে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয় না। ১০১ বছর ধরে একই সময়ে মেলাটি বসে। দূরদূরান্তের থেকে মানুষ এখনে আসছে মেলায় যোগ দিতে। আমরা সব সুবিধা নিশ্চিত করতে প্রায় এক মাস আগে থেকে সব প্রস্তুতি নিয়ে থাকে। এবারও সে রকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মেলার নিরাপত্তার জন্য মেলা আয়োজকরা স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন রেখেছেন।

তুমলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুবকর বাক্কু মিয়া বলেন, ‘গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মেলার ইতিহাস ধরে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছে শ্রী শ্রী কানাইলাল মন্দির কমিটির সদস্যরা। প্রতি বছর তারা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে অব্যাহত রেখেছেন এই মেলার আয়োজন।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ