ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

তিন বছরেও হয়নি ব্রিজ, বিপাকে স্থানীয় ও পর্যটকরা

নোয়াখালী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩  
তিন বছরেও হয়নি ব্রিজ, বিপাকে স্থানীয় ও পর্যটকরা

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপে জোয়ারের প্রভাবে গত তিন বছর আগে ছোয়াখালী ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা। সেই সঙ্গে বিপাকে পড়েছেন নিঝুম দ্বীপ ঘুরতে আসা পর্যটকরা। তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনো সংস্কার বা নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি।

সাময়িক চলাচলের জন্য ভাঙা ব্রিজের পাশ দিয়ে অস্থায়ী কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এখন এই সেতুটিও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রতিদিন চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটক, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয়রা জানান, নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ছোয়াখালী বাজার সংলগ্ন সেতুটি ৪নং ওয়ার্ড ও ৫নং ওয়ার্ডের সংযোগস্থল। নিঝুম দ্বীপের প্রধান সড়কের সেতু হওয়ায় প্রতিদিন কয়েক হাজার বাসিন্দার পারাপার হয়ে উপজেলা সদরে যেতে হয়। কিন্তু ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনো সংস্কার বা নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করায় ভোগান্তির শেষ নেই। বিকল্প কাঠের সেতু নির্মাণ করলেও সেটিও এখন ঝুঁকিপূর্ণ। নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটকরা পড়ছেন নানা ভোগান্তিতে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের সুদৃষ্টির অভাব আর অবহেলার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিজটি সংস্কার করা যেমন হয়নি, নতুন ব্রিজ নির্মাণেও নেওয়া হয়নি উদ্যোগ।

তছলিম নামে স্থানীয় একজন বলেন, ৩ বছর আগে ব্রিজটি ভেঙে গেছে। এখনো নির্মাণ করা হয়নি। এপাশ থেকে ওপাশ যাতায়াত করা কঠিন। মালামাল আনা নেওয়া করা যায় না। বিকল্প কাঠের সেতুও ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

আফসার নামে একজন সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, ব্রিজ নেই তিন বছর। বিকল্প কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যাত্রী নিয়ে অটোরিকশা পার হওয়া যায় না। যাত্রী নামিয়ে দিয়ে খালি গাড়ি পার করতে হয়। তারপরও ভয় কাজ করে। কখন গাড়িসহ নিচে পড়ে যাই। কিছু দিন আগে দুর্ঘটনা ঘটেছে। আল্লাহ রক্ষা করেছেন বলে কোনো প্রাণহানি হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দা শামীম বলেন, বিকল্প কাঠের সেতু নির্মাণ করা হলেও ভারি মালামাল আনা নেওয়া করা যায় না। পর্যটক আসুক বা অন্য যেই আসুক সেতুর গোড়ায় নেমে যেতে হয়। শুনেছি ব্রিজটি হবে কিন্তু এখনো হচ্ছেনা। পর্যটকরা একবার আসলে দ্বিতীয়বার আর আসবে না।

নিঝুম দ্বীপে ঘুরতে আসা পর্যটক আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পরের বার আসবো কিনা বলা যায় না। ব্রিজ নেই, সড়কের বেহাল অবস্থা। দ্বীপের যোগাযোগের যে অবস্থা, তাতে কেউ একবার আসলে পরের বার আর আসবে না।

নিঝুমদ্বীপ স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ব্রিজ না থাকায় আমাদের আসা যাওয়া করতে অসুবিধা হয়। ব্রিজটি দ্রæত নির্মাণ হলে উপকার হবে।

মাজাহার  নামে আরেক পর্যটক বলেন, মেঘনা নদী বেষ্টীত নিঝুম দ্বীপ প্রাকৃতিকভাবে খুবই সুন্দর। ঘুরতে আসার মতো চমৎকার জায়গা। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। দ্বীপকে আর্কষণীয় করতে রাস্তাঘাট, ব্রিজের দিকে করতে নজর দিতে হবে।  

নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আফছার দিনাজ বলেন, নিঝুম দ্বীপ ছোয়াখালী ব্রিজ অতিরিক্ত স্রোতের কারণে ভেঙে গেছে। আমাদের এমপির মাধ্যমে এখানে ব্রিজ নির্মাণের অনুমতি নেওয়া হয়েছে। অতিদ্রুত এটির টেন্ডার হবে। ব্রিজ নির্মাণ হলে নিঝুমদ্বীবাসীর যেমন ভালো হবে, তেমনি পর্যটকদেরও ভোগান্তি কম হবে।

উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন বলেন, নিঝুম দ্বীপের চারদিকে মেঘনা নদী। বেড়িবাঁধ না থাকায় যে কোনো জোয়ারে পানি প্রবেশ করে রাস্তাঘাটের ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়। গত তিন বছর আগে ছোয়াখালী ব্রিজ ভেঙে গেছে। মানুষ আপাতত কাঠের সেতুতে চলাচল করছে। আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছি। আমাদের এমপি মহোদয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।

হাতিয়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, ৩৯ মিটার দৈর্ঘ্যের ব্রিজটি নির্মাণের জন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। ছোয়াখালী ব্রিজটি টেন্ডার পর্যায়ে আছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই আমরা ওয়ার্ক অর্ডার পাবো।
 

সুজন/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়