ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শ্রমিক আন্দোলনে রেশম কারখানায় অচলাবস্থা

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৫:০৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
শ্রমিক আন্দোলনে রেশম কারখানায় অচলাবস্থা

রাজশাহী রেশম কারখানার শ্রমিকরা গত ছয় মাস বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ অবস্থায় তারা টানা কর্মবিরতি শুরু করেছেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারী থেকে রাজশাহী রেশম কারখানার প্রধান ফটকের সামনে বসে শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে কারখানায় অচালবস্থা তৈরি হয়েছে। এই সাতদিন কারখানাটিতে এক গজ কাপড়ও উৎপাদন হয়নি বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে আবারো আন্দোলন শুরু করেন কারখানার শ্রমিকরা। 

শ্রমিকদের অভিযোগ, বর্তমানে কারখানায় বিভিন্ন পদের ৪০ জন শ্রমিক রয়েছেন। এরমধ্যে ১০ জন দক্ষ উইভার কাপড় বোনেন। ২০০২ সালে কারখানা বন্ধ হওয়ার আগেই ২০ থেকে ২৬ বছর কাজ করেছিলেন তারা। ২০১৮ সালে নতুন করে কারখানা চালু হলে তাদের আবারও আনা হয়েছে। এখন প্রতি গজ কাপড় বুননের জন্য তারা ৫০ টাকা পান। দিনে সর্বোচ্চ ৫ গজ কাপড় হয়। ছুটির দিনে কোনো কাজ হয় না। মজুরিও পান না। মাসে মজুরি হয় বড়জোর সাত হাজার টাকা।

অন্য ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি ভিত্তিতে। ছুটির দিনে কারখানা বন্ধ থাকে বলে তারাও সেদিন মজুরি পান না। এরা মাসে বড়জোর সাড়ে ৭ হাজার টাকা পান। কিন্তু গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে শ্রমিকরা মজুরির কোনো টাকা না পেয়ে বেকায়দায় পড়েছেন।

শ্রমিকেরা জানান, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে বিভাগীয় শহর এলাকার দক্ষ শ্রমিকদের মজুরি ৬০০ টাকা এবং অনিয়মিত অদক্ষ শ্রমিকের মজুরি ৫৫০ টাকা নির্ধারন করে। কিন্তু এই চিঠির কথা তাদের জানতেই দেননি রেশম বোর্ডের কর্মকর্তারা। ছয়মাস আগে তারা এ চিঠি সংগ্রহ করেছেন। এখন তারা ওই চিঠি ইস্যুর সময় থেকে বাড়তি মজুরি চান।

কারখানার এক নারী শ্রমিক বলেন, আমি অসহায় বিধবা নারী। আমার মাথার উপর আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই। এখানে ইনকাম করে খাই। আমার মেয়েকে এখনো কলেজে ভর্তি করিনি। ঘর ভাড়াসহ খাওয়া দাওয়ায় চরম অসুবিধা হচ্ছে। আমরা চাই আমাদের ৬ মাসের বেতন দেওয়া হোক। আমরা মেয়ে মানুষ হয়ে গত এক সপ্তাহ থেকে মেইন রাস্তায় আছি। মেয়ে বলে লজ্জাজনক হলেও বাধ্য হয়ে আমরা এই আন্দোলনে নেমেছি।

শ্রমিক শিল্পী রহমান বলেন, মজুরি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫৫০টাকা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখানকার কর্মকর্তারা সেই বাড়তি টাকা আমাদের দেননি। বাড়তি মজুরি চাওয়ার পর থেকে ছয়মাস এক টাকাও দেওয়া হয়নি আমাদের। এই হবে, হচ্ছে করে ছয়মাস পার হয়ে গেছে। এখন আমরা চলতে পারছি না। আমরা ছয় মাসের বকেয়া টাকা এবং যতদিন চিঠি লুকিয়ে রাখা হয়েছিল সেই সময়ের প্রাপ্য টাকাও আমরা একসঙ্গে চাই। তা না হলে আমরা কাজে ফিরবো না।’

জানতে চাইলে আঞ্চলিক রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক ও রেশম কারখানার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক কাজী মাসুদ রেজা বলেন, ‘আগে রেশম কারখানার নিজস্ব টাকা থেকে শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হতো। পরে মন্ত্রণালয় মজুরি বৃদ্ধির চিঠি দিলেও সেটি আবার মন্ত্রণালয় থেকেই অনুমোদন নিতে বলা হয়েছে। এই অনুমোদন প্রক্রিয়া আটকে থাকার কারণে শ্রমিকেরা বেতন পাচ্ছেন না।’

রাজশাহী রেশম কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬১ সালে। লোকসানের কারণ দেখিয়ে ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের জুলাইয়ে কারখানাটি চালু করা হয়। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আবার কারখানায় ফেরেন পুরনো কিছু দক্ষ শ্রমিক। আরও কিছু নতুন শ্রমিককে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়।

কেয়া/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ