ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

১২০ টাকায় চাকরি পেলেন ১২৯ জন

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ২০ মার্চ ২০২৩  
১২০ টাকায় চাকরি পেলেন ১২৯ জন

বগুড়ায় ১২০ টাকা খরচ করে ১২৯ জন তরুণ-তরুণী পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পেয়েছেন। চাকরি পাওয়াদের মধ্যে ১১০ জন পুরুষ ও ১৯ জন নারী।  

রোববার (১৯ মার্চ) রাত সাড়ে ১১টার দিকে জেলা পুলিশ লাইন্স অডিটরিয়ামে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী এতথ্য জানান। 

এসময় সদ্য নিয়োগ পাওয়া তরুণ-তরুণীদের অভিনন্দন জানিয়ে ফুলের শুভেচ্ছা জানানো হয়।

বগুড়ায় ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ ছাত্র আহসান কবির সোনাতলা উপজেলার পূর্বতেকানি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আশরাফুল ইসলামের ছেলে। তিনি বলেন, ‘বাবা পুলিশ সদস্য ছিলেন। এজন্য ছোট থেকেই বাবার মতো পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। পরিবারের হাল ধরা খুব জরুরি ছিল। বাবা অনেকদিন আগেই অবসরে গেছেন। বাবা পুলিশ থাকলেও আমি নিজে কখনও বিশ্বাস করতাম না মাত্র ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি সম্ভব।’

সোনাতলার চরপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি শফিকুল ইসলামের ছেলে বোরহান উদ্দিন (১৯) বলেন, ‘একটা চাকরির খুব দরকার ছিল। কিন্তু এত সহজে ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেয়ে যাব, তা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। তবে মনে আশা ছিল, একদিন পুলিশ হব। চাকরি করে বাবাকে সহযোগিতা করব। সংসার সামলাতে বাবার কষ্ট খুব কাছ থেকে দেখেছি। এখন পুলিশে চাকরি পেয়েছি, বাবাকে আর কষ্ট করতে হবে না।’

কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া নারী সদস্য বগুড়া শহরের মালগ্রাম জিলাদার পাড়ার দিন মজুর লিটন জিলাদারের মেয়ে লীজা আকতার বলেন, ‘দুই বোন আর মা-বাবা নিয়ে আমাদের সংসার। দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতির বাজারে বাবা দিন মজুরের কাজ করে সংসার চালান। আমাদের সংসারে সবসময় অভাব অনটন লেগেই থাকে। এর মধ্যেই উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে সরকারি শাহ সুলতান কলেজে স্নাতক (পাস) কোর্সে ভর্তি হই। ছোট বোন ফাতেমা পড়াশোনা করে শহরের একটি স্কুলে দশম শ্রেণিতে। দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে মা নাসরিন বেগম কাজ করেন এলাকার বিভিন্ন বাসা বাড়িতে। পাশাপাশি  আমি টিউশনি করাই গত দুই বছর ধরে। আমাদের এমন সংগ্রামী জীবনে এই চাকরিটা আশীর্বাদ হয়ে এলো।’

বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধকারী বাহিনী বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি অব্যাহত রাখতে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখে শুধু মেধা এবং প্রয়োজনীয় যোগ্যতার ভিত্তিতেই এবারে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে কোথাও যাতে কোনো আর্থিক লেনদেন বা অন্য কোনও অনিয়ম না হয় সে ব্যাপারে গোপন তৎপরতা অব্যাহত রেখেই কনস্টেবল নিয়োগে সুষ্ঠুভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের প্রায় কয়েক মাস আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ এবং জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যানার টাঙানো হয়েছে। এবার আর্থিক লেনদেনসহ সব অনিয়ম ও সুপারিশ পরিহার করে সুষ্ঠুভাবে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগের বিষয়টি সম্পন্ন করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১২৯ জন নিয়োগপ্রাপ্ত কনস্টেবলের মধ্যে অধিকাংশ অতিদরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। এরমধ্যে ১১০ জন পুরুষ সদস্য ও ১৯ জন নারী সদস্য নিয়োগ পেয়েছেন।

ফলাফল ঘোষণার সময় অন্যানদের মধ্যে নওগাঁ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গাজিউর রহমান, নাটোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়ইগ্রাম সার্কেল) মো. রাজীব, বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শরাফত ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) হেলেনা আকতার, সহকারী পুলিশ সুপার (শিবগঞ্জ-সোনাতলা) তানভীর হাসান উপস্থিত ছিলেন।

এনাম/ মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়