ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধার ঘরে তালা দিলো সুদ কারবারীরা

শাহীন রহমান,পাবনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১৮ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১১:৩৬, ১৮ অক্টোবর ২০২৩
সুদের টাকা আদায়ে বৃদ্ধার ঘরে তালা দিলো সুদ কারবারীরা

ছবি: রাইজিংবিডি

তাঁত ব্যবসায় সুদ কারবারীদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা সুদে ধার নেন ইদ্রিস মল্লিক (৫৫)। সুদের টাকা দিতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। আর সেই টাকা আদায়ে ইদ্রিসের ঘরে থাকা তার বৃদ্ধা মা রমেছা বেগম (৯০) কে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয় সুদ কারবারীরা।

এমনই এক অমানবিক ঘটনা ঘটেছে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের তারাবাড়িয়া কারিগরপাড়া গ্রামে। মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তালা ভেঙে ওই বৃদ্ধাকে তার ঘরে তুলে দেন।

মঙ্গলবার বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বাসিন্দা মৃত রায়হান মল্লিকের স্ত্রী বৃদ্ধা রমেছা বেগম তার ছেলে ইদ্রিসের ঘরের দরজার সামনে বসে আছেন। টিনের ঘরটিতে তিনটি কক্ষ। দুটি কক্ষ তার ছেলের। আর একটি কক্ষে থাকেন বৃদ্ধা রমেছা। তিনটি কক্ষে তালা ঝুলানো। ছেলে ইদ্রিস বা তার স্ত্রী-সন্তান কেউ বাড়িতে নেই।

জানতে চাইলে বৃদ্ধা রমেছা বেগম অভিযোগ করে বলেন, তার ছেলে ইদ্রিস তিনজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছিল। সেই টাকা দেয় না। ছেলে কোথায় পালাইছে আমি জানি না। এদিকে খলিল, রইচ আর দুলাল গত সোমবার (১৬ অক্টোবর) সকালে বাড়িতে এসে টাকা চায়। আমি বলছি ছেলেকে টাকা দিছ তার কাছে যাও। টাকা যখন দিছ তখনতো আমার কাছে আস নাই। এখন আমার কাছে টাকা চাও কেন। পরে ওরা বলে ঘর থেকে বের হও, ঘরে তালা দেব। এই বলে আমাক জোর করে ঘরের থেকে বের করে দিয়ে তালা দেয়। পরে আমি চেয়ারম্যানকে বলছি।

এদিকে বিকেলে চরতারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান তার পরিষদের অন্য দুই ইউপি সদস্যসহ বৃদ্ধার বাড়িতে যান। এ সময় স্বজন প্রতিবেশিসহ অন্যান্য মানুষের উপস্থিতিতে তালা ভেঙে বৃদ্ধা রমেছা বেগমকে ঘরে তুলে দেন। তাকে বাড়িতে বসবাসে আশ্বস্ত করেন। এ সময় তিনি বৃদ্ধাকে কিছু নগদ আর্থিক সহায়তাও দেন।

সেখানে উপস্থিত রমেছা খাতুনের ছোট ছেলে গোলাম মোস্তফা জানান, তারা চার ভাই, দুই বোন। ইদ্রিস আলী মেঝো ভাই। তাঁত ব্যবসার করেন। চারটি তাঁতের কারখানা আছে তার। বছর খানেক আগে ব্যবসার কারণে একই গ্রামের মাদরাসা পাড়ার বাসিন্দা খলিল হোসেন, রইচ উদ্দিন ও দুলাল হোসেনের কাছ থেকে অনেক টাকা সুদে ধার নেন। এখন সুদের টাকা দিতে পারেন না। সুদ কারবারীরা তাদের টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। সেই ভয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কোথায় গেছে জানি না। সোমবার সকালে ওই তিনজন এসে ঘরে তালা মেরে দিয়ে গেছে। আমরা বাধা দেই নাই যদি মারধর করে।

স্থানীয় দুই নাম্বার ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আব্দুল আলীম বলেন, সুদের টাকার জন্য ছেলেকে না পেয়ে তার বৃদ্ধা মাকে ঘর থেকে বের করে তালা দেওয়ার ঘটনাটি একটি অমানবিক ঘটনা। সুদের কারবারীদের কারণে অনেক সংসারে অশান্তি বিরাজ করছে। তাদের আমরা বিভিন্ন সময়ে সুদের ব্যবসা করতে নিষেধ করি। কিন্তু তারা গোপনে এ কাজগুলো করে। যারা সুদে টাকা নেয় তাদের সচেতন হওয়া দরকার।

চরতারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, বিকেলে পরিষদ থেকে বাড়ি যাবার সময় ওই বৃদ্ধা আমাকে ঘটনাটি জানায়। তখনই আমি ওই বাড়িতে গিয়ে ঘটনার সত্যতা পাই। সুদের টাকার জন্য এমন কাজ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি দ্রুত তালা ভেঙে ঘরে তুলে দিয়েছি। কোনো সমস্যা হলে জানাতে বলেছি। সুদের ব্যবসা গ্রামগঞ্জে এমনভাবে ঢুকেছে তাদের প্রতিহত করা এখন সময়ের দাবি। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের সহযোগিতা চাই, যাতে সুদের ব্যবসা বন্ধ করতে পারি।

এ বিষয়ে কথা হয় সুদে কারবারী তিনজন তারাবাড়িয়া মাদরাসা পাড়ার বাসিন্দা খলিল হোসেন, রইচ উদ্দিন ও দুলাল হোসেনের সঙ্গে। তারা সুদে টাকা ধার দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, তাদের তিনজনের কাছ থেকে জমি বন্ধক রাখা বাবদ মোট ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন ইদ্রিস মল্লিক। তিনি টাকাও ফেরত দেন না, জমিও দেন না। এখন আমাদের তো টাকা লাগবে। কে দিবে টাকা। সে তো বাড়ি থেকে পলাতক। তাই বাধ্য হয়ে ইদ্রিসের বাড়িতে গিয়ে তার ঘরে তালা দিয়েছি।

তাই বলে বৃদ্ধা মাকে ঘর থেকে বের করে তার কক্ষে তালা দেওয়া কি ঠিক কাজ হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, কাজটা ঠিক হয় নাই। আমরা জানি ঘরটা ইদ্রিসের। যাহোক চেয়ারম্যান তালা ভেঙে দিছেন, ভালো করেছেন।

এ বিষয়ে তাঁত ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। পলাতক থাকায় ও তার মুঠোফোন নাম্বার বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

/এসবি/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়