ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

গাজীপুর-৩ আসন

সবুজকে ছাড় দিতে নারাজ ভাই-বোন

রফিক সরকার, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ২৪ নভেম্বর ২০২৩  
সবুজকে ছাড় দিতে নারাজ ভাই-বোন

এটি জাতীয় সংসদের ১৯৬ নম্বর আসন। জেলার শ্রীপুর ও গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়াল গড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে অনুষ্ঠিত বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনের ছয়টিতেই জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। বাকি দুই বার বিএনপি ও দুইবার জাতীয় পার্টি। আগে এ আসনটি শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল। ২০০৮ সালে আসন বিন্যাস ও সীমানা পূর্নগঠনে বাদ পড়ে কালিয়াকৈর উপজেলা। সংসদীয় এ আসনে শ্রীপুর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হয় গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়াল গড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন। এ আসনে জয়-পরাজয়ের হিসাব করতে গেলে ২০০৮ সালের পর গাজীপুর-৩ আসন আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এই আসনে সুবিধা করতে পারেনি। প্রয়াত রহমত আলী আওয়ামী লীগের হয়ে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এমপি হন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে এমপি হয়েছেন সবুজ। এবারও তিনি দলের হেভিওয়েট প্রার্থী। গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ইকবাল হোসেন সবুজ নির্বাচনী প্রচারনায় উঠান বৈঠকের রূপকার।

এ আসনে বর্তমানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বড় দুটি দলই বেশ তৎপর। দলের মনোনয়নও চান বিভিন্ন দলের একাধিক প্রার্থী। সাংগঠনিকভাবে তৎপরতা না থাকলেও প্রার্থী রয়েছে জাতীয় পার্টিরও। তবে নির্বাচনের আগে ভোটার ও তৃণমূলের নেতাদের মাঝে এখন আলোচ্য বিষয় দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব।

প্রয়াত এমপি রহমত আলীর আসনে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ মনোনয়ন চাওয়ার পর থেকে শুরু হয় বিরোধ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবুজ মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এই বিরোধ আরও তীব্র হয়। রহমত আলী মৃত্যুবরণ করলেও বর্তমানে সেই বিরোধ চলছে। বর্তমানে শ্রীপুরে প্রয়াত রহমত আলীর অনুসারী অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার ছেলে জামিল হাসান দুর্জয় ও  মেয়ে অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি। দুর্জয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক বাণিজ্যবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক। আর রুমানা সংরক্ষিত আসনের এমপি। বর্তমানে নির্বাচন ঘিরে তিনজনই চালিয়ে যাচ্ছেন জোর প্রচারণা।

মনোনয়ন প্রসঙ্গে ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, ‘আমি দলকে সংগঠিত করেছি। গত নির্বাচনের আগে এলাকায় উঠান বেঠক করে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এমপি হওয়ার পর এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছি। তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত সকল নেতা-কর্মী একটি পরিবারের মতো আছি। আশা করি, নেত্রী আমার পক্ষে থাকবেন।’

এ ছাড়া এ আসনে ৫ বারের সংসদ সদস্য প্রয়াত রহমত আলীর ছেলে জামিল হাসান দুর্জয় এ আসনে একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। রহমত আলীর ছেলে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জামিল হাসান দুর্জয় বলেন, ‘আমাদের বেড়ে উঠা রাজনীতি পরিবারে, রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। বাবার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের একমাত্র অভিভাবক।’ 

তিনি বলেন, এখন হতাশার খবর হলো নির্বাচন সামনে রেখে দেশ বিরোধী নানা চক্রান্ত হচ্ছে। এ সব চক্রান্ত মোকাবিলায় তিনি বিপুল সংখ্যক কর্মী সমর্থক ও এলাকার তরুণ সম্প্রদায়কে সংগঠিত করে জবাব দিতে প্রস্তুত আছেন।

এ নেতা আরও দাবী করেন, তিনি একজন রাজনীতিবিদ, গত নির্বাচনেও দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, এবারের নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে এ নিয়ে তার বোনের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব বা মতবিরোধ নেই। সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ও রহমত আলীর কন্যা অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি এবং শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী।

এ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. এসএম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান ফকির, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, বিএনপি নেতা নাহিন আহাম্মেদ মমতাজী, উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আক্তারুল আলম মাস্টার, ব্যবসায়ী আতিকুল্লাহ বাবুলের নাম বিএনপির সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, বিএনপির চরম দুঃসময়ে সব আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করছি। দল নির্বাচনে অংশ নিলে আমাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করি। আর আমাকে মনোনয়ন দিলে এই অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর জন্য সাধারণ মানুষ আমাকেই নির্বাচিত করবে ইনশাআল্লাহ।

এই আসনে সাংগঠনিকভাবে জাতীয় পার্টির তেমন তৎপরতা নেই। তবে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান মন্ডল তার সমর্থনে এলাকায় পোস্টার ও বিলবোর্ড সাটিয়েছেন। মনোনয়ন প্রসঙ্গে কামরুজ্জামান মন্ডল বলেন, ‘আমি দল থেকে মনোনয়ন পেতে শতভাগ আশাবাদী। দল আলাদাভাবে নির্বাচন করলে আমি প্রার্থী হবো।’

এই আসনে জাকের পার্টিও পিছিয়ে নেই। এই দলটি মাঠে তৎপর না থাকলেও নেতাকর্মীদের মুখে প্রার্থীর আলোচনা ঠিকই শোনা যাচ্ছে। এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন নাসির উদ্দীন পালোয়ান।

এই আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১৭ হাজার ৪৪ জন এবং নারী ভোটার ২ লাখ ১৯ হাজার ৫৯৯ জন। 

২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের রহমত আলী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী ছিলেন বিএনপির এম এ মান্নান। তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ৯১৫ ভোট। এর পর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান রহমত আলী। সেবার তিনি এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হন। তবে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ইকবাল হোসেন সবুজ। ওই নির্বাচনে তিনি ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইকবাল সিদ্দিকী পান ৩৭ হাজার ৭৮৬ ভোট।
 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

ঘটনাপ্রবাহ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়