ঢাকা     মঙ্গলবার   ১০ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৫ ১৪৩১

জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পরাজয় রাঙ্গার 

আমিরুল ইসলাম, রংপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:২৫, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২০:৫৯, ১৬ জানুয়ারি ২০২৪
জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পরাজয় রাঙ্গার 

মশিউর রহমান রাঙ্গা

রংপুর-১ আসনের তিন বারের সংসদ সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে। হেভিওয়েট এ প্রার্থী এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল না পেয়ে স্বতন্ত্র হয়ে ভোটের মাঠে জয়লাভের জন্য প্রাণপণ চেষ্টাও করেছেন। এরপরও ট্রাক প্রতীকে তিনি সংগৃহীত মোট বৈধ ভোটের ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ অর্থাৎ ২৪ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। 

গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভরাডুবির জন্য স্থানীয় জনগণ থেকে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হওয়া, দলের মূলস্রোতের বিরোধিতা, দলীয় প্রতীক না পাওয়া, অবস্থান ডিগবাজি, ভোটের মাঠে পুনরায় বিজয়ের আগাম বার্তা ও এমপি-মন্ত্রিত্বের আমলের ১৫ বছরের কার্যকলাপকেই দায়ী করেছেন রংপুর-১ আসনবাসীসহ জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়াও নিজ দলের মধ্যে দুই জন প্রার্থী থাকায় সুবিধা করতে পারেননি রাঙ্গা।

এ সব কারণে রংপুর-১ আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মশিউর রহমান (রাঙ্গা) কে বিপুল ভোটে হারিয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কেটলি প্রতীকের ৩৮ বছর বয়সী আসাদুজ্জামান বাবলু। বিজয়ী এই সংসদ সদস্য গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান।

আরো পড়ুন:

১৯৮৬ সাল থেকে জাতীয় পার্টির দখলে থাকা রংপুর-১ আসনে এবার জামানত হারিয়েছে দলটি। লাঙ্গল মার্কা পেয়েছে মাত্র ১০ হাজার ৮৯২ ভোট। রওশনপন্থি নেতা, তিনবারের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গার ভোটও ছিল না প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া আসনে বাজিমাত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী।

কেটলি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান ৭৩ হাজার ৯২৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মশিউর রহমান ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ২৪ হাজার ৩৩২ ভোট। আসনে ভোটার ৩ লাখ ৩২ হাজার ২২২ জন।

আসনে তিন বারের সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গার শোচনীয় হারের কারণ খুঁজতে বেশ কিছু ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। কথা বলে জানা যায়, মশিউর রহমান ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ২৬ জুলাই পর্যন্ত জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তবে গত বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর রওশন এরশাদ ইস্যুতে পক্ষ নেওয়ায় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ দলের সব পদ-পদবি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় তাকে। ফলে জাপার ঘাঁটিখ্যাত আসনটিতে দলীয় প্রতীক পাননি তিনি। যা এবারের ভোটে নেতিবাচক বড় প্রভাব পড়েছে তার।

এ ছাড়া সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছোট ভাই বর্তমান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের নামে কারণে-অকারণে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে জাতীয় পার্টিকে বিতর্কিত করে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে।

তিস্তা নদীবেষ্টিত গঙ্গাচড়া উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের ভোটাররা তাকে ভোট দেয়নি। অন্যদিকে, রংপুর সিটি করপোরেশনের ১ থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটাররা রাঙ্গাকে আশানুরূপ ভোট দেননি।

সাধারণ ভোটাররা বলেছেন, যারা রাঙ্গাকে ঘিরে রাখতেন গত ১০ বছরে তাদের পকেট ভারি হয়েছে। তারা কমিশন বাণিজ্য করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজেদের ভাগ্যের উন্নয়ন করেছেন। এ সব কারণে রাঙ্গার বিজয়রথ এবার থমকে গেছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু গঙ্গাচড়ার বাসিন্দা হওয়ায় ‘বহিরাগত হঠাও, এলাকাবাসীকে ভোট দাও’ স্লোগান তুলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আবেদন তৈরি করতে সক্ষম হন। তাছাড়া রংপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান দলীয় নেতা হিসেবে পুরো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করেছেন। আর যারা রাঙ্গার পক্ষে ছিলেন, তারাও আসাদুজ্জামান বাবলুর আচরণে খুশি হয়ে কেটলি প্রতীকের জন্য কাজ করেছেন।

জাপার কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, রাঙ্গা দলের স্থানীয় ত্যাগী নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন ও মূলস্রোতের বিপরীতে নির্বাচন করেছেন। এছাড়া তিনি স্থানীয় মানুষের বাহিরে থাকতেন সব সময়। এলাকায় আসলে তার কতিপয় ব্যক্তির কারণে মানুষরা ভিড়তে পারতো না, বিধায় রাঙ্গার এমন পরাজয় হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, গঙ্গাচড়াবাসীর দীর্ঘ দিনের আশা ছিল স্থানীয় ব্যক্তিকে এমপি করার। তাই এবার তারা লাঙ্গলের আসিফ শাহরিয়ার ও জাপার বহিষ্কৃত নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গাকে বাদ দিয়ে বাবলুকে বিজয়ী করেছে। এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে দুইভাগ করে নির্বাচনে স্বতন্ত্র হয়ে রাঙ্গার এমন পরাজয় হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেয়া তিস্তা বেস্টিত রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনে এবারের সংসদ নির্বাচনে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আর এতে ছিটকে পড়েন সাবেক পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা।
 

/বকুল/

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়