ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

রাজশাহী-৬

৩৪ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নৌকার পক্ষে প্রচারণার অভিযোগ 

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২৯, ৪ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২১:৫৫, ৪ জানুয়ারি ২০২৪
৩৪ প্রিসাইডিং কর্মকর্তার নৌকার পক্ষে প্রচারণার অভিযোগ 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত ৩৪ জন শিক্ষক রাজশাহীর বাঘা ও চারঘাট উপজেলায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করেছেন।

বাঘা ও চারঘাট উপজেলা নিয়ে রাজশাহী-৬ আসন গঠিত। এখানে নৌকার প্রার্থী টানা তিনবারের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাঁর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে লড়াই জমিয়েছেন দলেরই প্রবীণ নেতা রাহেনুল হক। এ আসনের সাবেক এমপি রাহেনুলের প্রতীক কাঁচি। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা নৌকার প্রচার-প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এরমধ্যে বাঘার ১৮ জনের ব্যাপারে অভিযোগ করা হয় গত সোমবার (১ জানুয়ারি)। আর চারঘাটের ১৬ জনের ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি)। 

অভিযোগে চারঘাটের যে ১৬ জনের নাম দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, রাওথা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নাদের হোসেন, প্রভাষক রেজাউল হক মোল্লা, সরদহ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক সাইদুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক একরামুল হক,  প্রভাষক রেজা হাসান, প্রভাষক আতিকুল ইসলাম, চারঘাট মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম, প্রভাষক এখলাক হোসেন লাভলু, প্রভাষক শরিফুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, নন্দনগাছি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ওয়াহেদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম, এমএ হাদী কলেজের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ইউসুফপুর মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী হিরণ আলী, শলুয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রুহুল আমিন ও ডাকরা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক আলতাব হোসেন।

বাঘা উপজেলার ১৮ জন হলেন, মীরগঞ্জ কলেজের প্রভাষক আবুর কালাম আজাদ, শাহদৌলা সরকারী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আহমেদ বেলাল, প্রভাষক রেজাউল করিম, আবদুল গনি কলেজের প্রভাষক মহিউল হাসান, প্রভাষক মো. নুরুজ্জামান, সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, আড়ানী ফুলমন নেসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম, দিঘা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক নূরোল ইসলাম, আড়ানী ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক লিটন উদ্দিন, বাঘা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী দেওয়ান, মোজাহার হোসেন ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক শরিফুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক সিদ্দিক আলী, সবেরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম, দিঘা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক বাবর আলী, অমরপুর ধন্দহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম এবং কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম।

অভিযোগে বলা হয়েছে, মীরগঞ্জ কলেজের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি নৌকার প্রতীকের কর্মী। অভিযোগের সঙ্গে তার নৌকার প্রচার চালানোর ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। দিঘা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক নূরোল ইসলাম নিজ বাড়িতে নৌকার অফিস করেছেন। চারঘাটের নন্দনগাছি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ওয়াহেদুল ইসলাম শলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। সরাসরি নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।
সরদহ সরকারি মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক রেজা হাসান ও আতিকুল ইসলামের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা ২০২১ সালে সরদহ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মতিউর রহমান তপন দ্বারা ভোট কারচুপির মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন। তারা এবার নৌকারও প্রচার চালাচ্ছেন। অন্য প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ব্যাপারেও নৌকার প্রচারে অংশ নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। রাওথা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নাদের হোসেন নৌকার লিফলেট দিয়ে ভোট চাইছেন এমন ছবিও দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য অধ্যক্ষ নাদের হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। 

মীরগঞ্জ কলেজের প্রভাষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘‘আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক, এটা সত্য। আগে নৌকার প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। তিন দিন আগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। তারা (নির্বাচন কমিশন) বলে দিয়েছে, ‘আগে যা করেছেন করেছেন, এখন থেকে আর না। এখন আপনারা আমাদের। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে’। এরপর থেকে আমি আর প্রচারণায় যাইনি।’

স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট মেরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা সরাসরি নৌকার প্রার্থীর প্রচারণা চালাচ্ছেন। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তারা অনিয়ম করতে পারেন। এ জন্য আমরা অভিযোগ করেছি। শুনছি, বাঘা উপজেলার শিক্ষকদের চারঘাটে, আর চারঘাটের শিক্ষকদের বাঘায় দায়িত্ব দেওয়া হবে। এটা করলেও তো তারা এই আসনের নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারেন। তাই এই শিক্ষকদের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা না করার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি।’

জানতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, ‘প্রশিক্ষণ হয়েছে, শিক্ষকেরা প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তবে কে কোথায় দায়িত্ব পালন করবেন, তা তারা নিজেরাও জানেন না। সুতরাং, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। আমরা যখন দায়িত্ব দেব, তখন সবকিছুই বিবেচনা করা হবে। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট থেকে সবকিছুই দেখা হবে। কাউকে নিয়ে কোনো এলাকায় আপত্তি থাকলে তাকে ওই এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হবে না।’
 

কেয়া/বকুল 

ঘটনাপ্রবাহ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়