ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৫ মে ২০২৫ ||  জ্যৈষ্ঠ ১ ১৪৩২

কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

ওষুধ রোগীদের না দিয়ে বিক্রির পরিকল্পনা, সরকার বদলে ওলটপালট

রফিক সরকার, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ২১ এপ্রিল ২০২৫  
ওষুধ রোগীদের না দিয়ে বিক্রির পরিকল্পনা, সরকার বদলে ওলটপালট

গাজীপুরে কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্টোরে প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পড়ে থাকার ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সরকারি খরচে বরাদ্দ পাওয়া ওষুধ বিনামূল্যে রোগীদের মাঝে বিতরণ না করে সেগুলো গোপনে স্টোরে জমা করে রাখা হয় অন্যত্র বিক্রির উদ্দেশ্যে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের ফলে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।    

প্রতিদিন কয়েকশ মানুষ কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন। বিনামূল্যে ওষুধ পাওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ সময় পাওয়া যায় না বলে রোগীদের অভিযোগ রয়েছে। অথচ রবিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে হাসপাতালের স্টোরে গিয়ে দেখা যায়, দামি এন্টিবায়োটিক, ইনজেকশন, এনেসথেশিয়া, সর্দি-কাশির ওষুধসহ গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসাসামগ্রী স্টোরে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে পড়ে রয়েছে। 

কাপাসিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় গৃহবধূ জোসনা বেগম বলেন, ‘‘আমি গত এক বছরে কয়েকবার এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছি। কিন্তু একবারও তারা ওষুধ দেয়নি। অথচ আজ শুনলাম ওষুধ গুদামে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। এটা কি আমাদের সঙ্গে মশকরা নয়?’’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে জানান, তিনি মাত্র এক মাস আগে যোগ দিয়েছেন। ফলে তার পূর্বে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া ওষুধগুলোর দায় তার নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমি যোগদানের পর সব রোগীকে সিজারিয়ানসহ সব অপারেশনের ওষুধ এখান থেকেই দিয়েছি। যেসব ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ, সেগুলো আমার যোগদানের আগেই নষ্ট হয়েছে।’’

তবে সাবেক ইউএইচএফপিও এবং বর্তমান গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রহমান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘স্টোরের দায়িত্বে যিনি ছিলেন, তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার সময় কোনো হিসাব দিয়ে যাননি। ফলে অবশিষ্ট ওষুধ কী পড়ে ছিল জানা যায়নি।’’ 

হাসপাতালের একজন কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘‘এসব ওষুধ রোগীদের না দিয়ে অন্যত্র বিক্রির পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর পরিস্থিতি বদলে যাওয়ায় পাচার করা সম্ভব হয়নি।’’

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘গরিব মানুষের প্রাপ্য ওষুধ মজুদে রেখে নষ্ট করে ফেলা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত দীর্ঘ তিন বছর কাপাসিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করেছেন ডা. মামুনুর রহমান। এ সময় অধিকাংশ ওষুধের মেয়াদ শেষ হয় এবং রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

তারা//


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়