ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

এজেন্ট নির্যাতনের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৪, ২৫ জুলাই ২০২৫  
এজেন্ট নির্যাতনের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

নির্যাতনের শিকার সাইফুল্লাহ হাজেরী

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের ৪০ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসলামী ব্যাংক খুলনার ফুলতলা শাখায় সাইফুল্লাহ হাজেরী (৩৫) নামে এক ব্যক্তিকে চোখ-মুখ বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি প্লায়ার্স দিয়ে তার হাতের নখও ওঠানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় সংশ্লিষ্ট শাখার তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার সাইফুল্লাহ হাজেরী ইসলামী ব্যাংকের একটি এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি ফুলতলা উপজেলার বেলেপুকুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আশিক, মিজান এবং মামুন। তারা ইসলামী ব্যাংক ফুলতলা শাখার কর্মকর্তা। তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জেল্লাল হোসেন।

অভিযোগে জানা গেছে, নগরীর খানজাহান আলী থানাধীন ইস্টার্ন গেট এলাকায় ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের মালিক মেসার্স হাজেরী এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী এ এইচ এম শফিউল্লাহ হাজেরীর ছেলে সাইফুল্লাহ হাজেরী। চলতি মাসে ওই এজেন্ট ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যায় এজেন্ট ব্যাংকের ক্যাশ ইনচার্জ কাগজি মাহবুবুর রহমান এবং মার্কেটিং অফিসার মনিরুল গাজী।

এই ঘটনার পর ব্যাংকটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একটি টিম সেখানে যায়। পাশাপাশি দু’জন প্রিন্সিপাল অফিসার দিয়ে একটি তদন্ত কমিটিও করা হয়।

অন্যদিকে গ্রাহকদের তাগেদা এবং ব্যাংকটির ভাবমূর্তি রক্ষায় ফুলতলার ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারা এজেন্ট ব্যাংকটির মালিক শফিউল্লাহ হাজেরীর নিকট থেকে একাধিক ব্ল্যাঙ্ক চেকসহ স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়।

এজেন্ট সাইফুল্লাহ হাজেরী অভিযোগ করে বলেন, “মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ফুলতলার ইসলামী ব্যাংক শাখায় আমাকে যেতে বলা হয়। আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে আমি ব্যাংকে যাই। ঐ সময় আমার বাবাও ব্যাংকে ছিলেন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা আমাকে এজেন্ট ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের বিষয়ে বিভিন্নভাবে দোষারোপ করার চেষ্টা করেন। আমি তাদের বলি, আমরা যদি টাকা আত্মসাৎ করতাম তাহলে এভাবে চলাফেরা করতাম না। তাছাড়া আমার বাবা জমি বিক্রি করে খুব দ্রুতই এই ক্ষতিপূরণ দিবে। ইতিমধ্যে আপনারা ব্ল্যাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন।” 

‘তখন ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, দ্রুত টাকা পরিশোধ করতে হবে, না হলে সমস্যা। পাশাপাশি আমাকে ব্লাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর করতে বলে। আমি তখন আমার বাবাকে চেকবই আনার জন্য বাড়িতে পাঠাই। সেসময় ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার আশিক আমার হাত ধরে ব্যাংকে স্টোর রুমে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার সাথে সাথে আমার চোখ ও মুখ বেঁধে ফেলে ৪/৫ জন। এরপর তারা হাতুড়ি দিয়ে আমার পায়ের তালু এবং হাঁটুতে পেটাতে থাকেন। পাশাপাশি প্লায়ার্স দিয়ে আমার নখ উঠানোর চেষ্টা করেন। এরপর তারা স্ট্যাম্প, চেকসহ সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর করিয়ে নেন।”

সাইফুল্লাহ হাজেরীর বাবা এ এইচ এম শফিউল্লাহ হাজেরী বলেন, “গ্রাহকের টাকা পরিশোধের জন্য আমরা জমি বিক্রির কাজ শুরু করেছি। ব্যাংকের কথা অনুযায়ী চেক ও স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর করেছি। তারপরও আমার ছেলেকে এইভাবে ব্যাংকের ভিতর নির্যাতন করলো। আমি এই ঘটনার বিচার চাই।”

ফুলতলা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জেল্লাল হোসেন বলেন, “ইস্টার্ন গেট এলাকায় ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকের মালিক মেসার্স হাজেরী এন্টারপ্রাইজ। ওই এজেন্ট ব্যাংকটি পরিচালনা করতেন হাজেরীর ছেলে সাইফুল্লাহ হাজেরী। এজেন্ট ব্যাংকের দুজন কর্মচারী বিশাল অংকের টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। এ ঘটনায় তাকে ব্যাংকে ডেকে নিয়ে মারধর করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। পরে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার থানায় দায়েরকৃত মামলা তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

ইসলামী ব্যাংকের ফুলতলা শাখা ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান জানান, ঘটনার সময় তিনি ব্যাংকে ছিলেন না। কী হয়েছে, কেন হয়েছে তাও তিনি জানেন না। তবে ঘটনার সাথে জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক খুলনা জোনের জেনারেল ম্যানেজার ইমামুল বারী বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা জানার পরই হাসপাতালে এবং সংশ্লিষ্ট শাখায় আমাদের লোক পাঠিয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।”

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়