ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফেরার কথা ছিল নতুন বউ নিয়ে, ফিরল নিথর দেহ

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ২ আগস্ট ২০২৫  
ফেরার কথা ছিল নতুন বউ নিয়ে, ফিরল নিথর দেহ

বিয়ের সাজে বাবা-মার কাছ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন অমিত কিন্তু বৌ নিয়ে আর ফেরা হয়নি

সানাইয়ের সুর, ঢাকঢোলের বাজনা আর আনন্দ-উচ্ছ্বাসে সময় যাচ্ছিল। যুবকের পরণে ছিল শেরওয়ানি, মাথায় ছিল বিয়ের পাগড়ি, কপালে চন্দনের ফোঁটা। কথা ছিল নতুন বউ নিয়ে ফিরে আসবে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সব আনন্দ মুহূর্তে থেমে গেল। 

কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার ডুমুরিয়া গ্রামের অমিত কুমার সরকার (৩৫) ছিলেন ব্যবসায়ী। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। ছোট ভাই আশিক সরকার ঘুমের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তিন বছর আগে। সেই শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতে মা-বাবা আরেক সন্তানকে হারালেন। 

আরো পড়ুন:

তিন দশক প্রবাসে কাটিয়ে বাবা দিলীপ সরকার দেশে ফিরেছেন। সংসার আর ব্যবসার হাল ধরেন। ছেলে অমিতের বিয়ে ঠিক করেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভিংরাব গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ের সঙ্গে। দিনক্ষণ ঠিক হয় বাংলা পঞ্জিকার ১৫ শ্রাবণ, অর্থাৎ ৩১ জুলাই।

পরিকল্পনা অনুযায়ী বিয়ের আগের দিন বুধবার (৩০ জুলাই) গ্রামের বাড়িতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়। পর দিন বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকাল থেকে শুরু হয় বরযাত্রার প্রস্তুতি। বিকেলে মঙ্গলঘট স্থাপন শেষে শেরওয়ানি-পাগড়ি পরে বরবেশে বের হন অমিত। বাদ্যযন্ত্র আর স্বজনদের আনন্দ উল্লাসে শুরু হয় বরযাত্রা। নতুন বউ আনতে কনে বাড়িতে ছুটে চলে গাড়িবহর।

পথে ঘটে অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়। রাত ১০টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকায় হঠাৎ বুকে তীব্র ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন বর অমিত। সঙ্গে সঙ্গে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেয়া হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে দ্রুত রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে রাত আনুমানিক ২টার দিকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন অমিত।

কনের বাড়িতে তখনো বিয়ের প্রস্তুতি চলছিল। সবাই অপেক্ষায়, কখন এসে পৌঁছাবে বর আর বরযাত্রীরা। রাত বাড়ে, কোনো খবর আসে না। দুশ্চিন্তা বাড়ে কনের পরিবারের। একের পর এক ফোন যেতে থাকে বরের স্বজনদের কাছে। উত্তর আসে না। হঠাৎ খবর আসে— বর আর আসছেন না। বর চলে গেছেন না-ফেরার দেশে।

যেখানে শুক্রবার (১ আগস্ট) ভোরে সুসজ্জিত প্রাইভেটকারে নতুন বউকে নিয়ে ঘরে ফেরার কথা ছিল, সেই সময়ে একাই ফিরলেন অমিত— সাদা কাফনের কাপড়ে মোড়ানো নিথর দেহে। কপালে তখনো লেগে ছিল চন্দনের সেই ফোঁটা, মাথায় পাগড়ির দাগ।

শোকে বাকরুদ্ধ মা রাধারাণী ছুটে গিয়ে ছেলের নিথর দেহ জড়িয়ে ধরেন। বিলাপ করে কেঁদে ওঠেন, “বাবা তোরা আমাকে কোথায় রেখে গেলি? আর কাকে নিয়ে বাঁচব?”
 

ঢাকা/রুবেল/বকুল

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়