ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘ছেলে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতো, সবই আজ স্তব্ধ’

আরিফুল ইসলাম সাব্বির, সাভার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:০২, ৬ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১১:০৪, ৬ আগস্ট ২০২৫
‘ছেলে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতো, সবই আজ স্তব্ধ’

ছেলের স্মৃতি জড়িয়ে কাঁদছেন আলিফ আহমেদ সিয়ামের মা তানিয়া আক্তার।

ঘরের দেয়ালে টানানো মেডেল আর পুরস্কারের সারি, টেবিল জুড়ে সাজানো বই-খাতা আর ইতিহাস-ভূগোলের নানা বিচিত্র কাহিনি- সবই আছে আগের মতো। নেই শুধু আলিফ আহমেদ সিয়াম। সাভারের ইসলামনগরে ভাড়া বাসায় ছেলে সিয়ামের ঘরটি ঠিক যেমন ছিল, তেমনই গুছিয়ে রেখেছেন মা তানিয়া আক্তার।

১৫ বছরের এই কিশোরটি এক সময় বলত, বড় হয়ে পাইলট হবে। বাবা-মাকে হজ করাবে, আর আকাশ ছুঁয়ে ঘুরবে দেশ-বিদেশ। সেই স্বপ্ন আজ স্তব্ধ।

২০২৫ সালের ৫ আগস্ট রাজধানীমুখী ছাত্রদের ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নেয় আলিফ। সেদিন শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে সাভার থানা স্ট্যান্ড এলাকায় আনন্দ মিছিল চলছিল। সেই সময় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। 

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “পুলিশ ও আওয়ামী লীগের লোকজন নির্বিচারে গুলি চালায়।” সেখানেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় আলিফ।

আন্দোলনকারীরা প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যান, পরে এনাম মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় ৭ আগস্ট বিকেলে তার মৃত্যু হয়।

সিয়াম সাভারের ডেইরি ফার্ম হাই স্কুলের দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিল। এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের বড় বাঁশবাড়িয়া গ্রামে। বাবা বুলবুল কবীর, মা তানিয়া আক্তার—দুজনেই পেশাগত কারণে ঢাকায় থাকেন।

ছেলের মৃত্যুতে তানিয়া আক্তার বললেন, “আমার ছেলে বড় স্বপ্ন দেখত। কিন্তু সেই স্বপ্ন কোনো দিন আর পূরণ হবে না। হাসিনা সরকারের নিষ্ঠুরতায় সে শহীদ হয়েছে। এক বছর ধরে অপেক্ষা করছি, যদি একবার এসে ‘মা’ বলে ডাকে!”

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “যাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের সন্তানেরা প্রাণ দিয়েছে, তারা এখন ক্ষমতায় ব্যস্ত। শহীদদের জন্য বিপ্লবী খেতাব দাবি জানানো হলেও, কেউ কর্ণপাত করছে না।”

আলিফের বাবা বুলবুল কবীর বলেন, “আমরা চাই, শহীদদের হত্যাকারীদের বিচার হোক। আর আমার ছেলের নামে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা সড়কের নামকরণ হোক। বিচার পেলে কিছুটা হলেও শান্তি পাব।”

তানিয়া আক্তারের আরও প্রশ্ন, “আর কতকাল আমাদের সন্তানেরা এইভাবে প্রাণ দেবে? আর কতকাল মায়েদের চোখের পানি ঝরবে?”

একজন মায়ের শোক, এক পরিবারের না-ফেরা সন্তানের গল্প-শুধু আলিফ নয়, এই দেশের বহু তরুণ আজ রক্ত দিয়ে ইতিহাস লিখছে। সেই ইতিহাস কি রাষ্ট্র মনে রাখবে?

ঢাকা/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়