ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৪ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

এক পরিবারে একই দিনে সাত কবরের শোক

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৪, ৬ আগস্ট ২০২৫  
এক পরিবারে একই দিনে সাত কবরের শোক

এক পরিবারে একই দিনে খোঁড়া হয়েছে সাত কবর। তাদের দাফনের প্রস্তুতি চলছে। জানাজা শেষে ওই কবরে শুইয়ে দেওয়া হবে তাদের। এই শোকে বিমর্ষ-বিমূঢ় পরিবারটি; শোকে স্তব্ধ এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার গভীর রাতে ওমান থেকে ফেরা লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম চওপল্লী গ্রামের বাহার উদ্দিনের বাড়িতে শোকের ছায়া নেমেছে। তাকে আনতে ঢাকায় গিয়ে ফেরার পথে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আলাইয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাড়ির রাস্তার মাথায় বুধবার (৬ আগস্ট) ভোরে দুর্ঘটনায় নিহত হন তার পরিবারের সাতজন।

আরো পড়ুন:

বাহার উদ্দিন বলছেন, তাদের বহনকারী হায়েস গাড়ির চালকের ঘুমের কারণে এই দুর্ঘটনায় পড়েন তারা। গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে খালে গিয়ে পড়ে। ঘটনাস্থলেই সাতজন মারা যান।

নিহত সাতজনের পরিচয় জানিয়েছে পুলিশ। তারা হলেন: বাহার উদ্দিনের মা মোরশিদা (৫৫), স্ত্রী কবিতা (২৪), মেয়ে মিম (২), নানি ফয়জুন্নেছা (৮০), ভাবি লাবনী (৩৩), ভাতিজি রেশমী (৮) ও লামিয়া (৯)।

নিহতদের মধ্যে বাহারের নানি ফয়জুন্নেছার দাফনের প্রস্তুতি চলছে তার গ্রামের বাড়িতে। আর ছয়জনের কবর খোঁড়া হয়েছে পশ্চিম চওপল্লী গ্রামে।

হায়েস গাড়ি খালে পড়ে যাওয়ার পর এলাকাবাসীর সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মরদেহগুলো উদ্ধার করেন। 

উদ্ধারকারীরা বলেছেন, খালে পড়ে গাড়িটি পানিতে ডুবে যায়।

বাহার উদ্দিন, তার শ্বশুর ও আরো দুজন বেঁচে আছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর মধ্যে বাহার বাড়ি ফিরেছেন। অন্য তিনজনের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে।

বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন বাহার।

ঘটনার বর্ণনায় তিনি বলেন, ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের সঙ্গে দেখা হয় তার। সেখানে আগে থেকে ঠিক করে রাখা হায়েস গাড়িটি প্রস্তুত ছিল। তবে চালককে তিনি বলেছিলেন, এত রাতে না গিয়ে ভোরে রওনা দিলে ভালো হতো।

তবে চালক বাহারের কথা শোনেননি। আস্তে-ধীরে চালানোর কথা বলে রওনা হন চালক। পথের মধ্যে চালককে ঘুমে ঢলে পড়তে দেখে তাকে বিশ্রাম নিতে পরামর্শ দিলেও চালক তা উপেক্ষা করে গাড়ি চালাতে থাকেন। এই ঘুমের কারণেই দুর্ঘটনা হয়েছে বলে অভিযোগ তার।

বাহার বলেন, “তিন বছর পর দেশে ফিরলাম। পরিবারের সবাই আমাকে আনতে গিয়েছিল। এখন তারা কেউ নেই। আমি একা হয়ে গেলাম।”

ঘটনার তদন্ত চলছে বলে জানান চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানার ওসি মোবারক হোসেন। 

ঘটনাস্থল থেকে বেগমগঞ্জ মডেল থানার ওসি মো. লিটন দেওয়ান বলেন, “রেকারের সাহায্যে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়িটি খাল থেকে তোলা হয়েছে। ঘটনাস্থলে আর কোনো মরদেহ নেই।”

বাহারের স্বজনদের মাতমে ভারী হয়ে উঠেছে পশ্চিম চওপল্লী গ্রাম। একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ঢাকা/লিটন/রাসেল 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়