ঢাকা     রোববার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৬ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

গোমস্তাপুরে ২ শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ১৭ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ০৯:৩৫, ১৭ আগস্ট ২০২৫
গোমস্তাপুরে ২ শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন

নিহত দুই শিশু- তানিয়া ও জামিলা

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে একটি মহিলা হাফেজিয়া মাদ্রাসার দুজন আবাসিক শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে শিশু দুটির মৃত্যু হয়। তারা দুজনই উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ‘ডুবার মোড় শেফালী বেগম মহিলা নূরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা’র শিক্ষার্থী। 

এ ঘটনায় পুলিশ কোনো মন্তব্য না করলেও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও নিহতের পরিবারের দাবি, বিষাক্ত পোকামাকড় বা সাপের কামড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে ওই দুজন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। তবে রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।

নিহতরা গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লেবুডাঙ্গার তরিকুল ইসলামের মেয়ে তানিয়া খাতুন (১২) এবং ওই ইউনিয়নেরই বেগপুর গ্রামের সৈবুর রহমানের মেয়ে মোসা. জামিলা খাতুন (১০)। এ দুজনেরই বাবা কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকেন।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বরাতে পুলিশ জানায়, প্রতিদিনের মতো শুক্রবার দিবাগত রাতে ওই মাদ্রাসার আসাবিকের শিক্ষার্থীরা ঘুমিয়ে যায়। গভীর রাতে আকস্মিকভাবে তানিয়া ও জামিলা অসুস্থ অনুভব করলে কান্নাকাটি শুরু করে। তাদের সহপাঠীরা সেখানে থাকা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষিকা সাহিদা খাতুনকে জানান। 

সাহিদা খাতুন ওই দুজন শিক্ষার্থীর কাছে গিয়ে দেখতে পান তারা বমি করছে। তাদের একজনের বমির সঙ্গে রক্তও আসছিল। তড়িঘড়ি করে ওই শিক্ষিকা মাদ্রাসার পরিচালককে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত ছুটে আসেন পরিচালক আশরাফ আলী। অবস্থা আরও খারাপ হলে ওই দুজন শিক্ষার্থীর পরিবারকে ডেকে পাঠানো হয়। এরইমধ্যে ওই দুজন শিক্ষার্থীকে গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। পথিমধ্যে মারা যায় জামিলা আর হাসপাতালে নেওয়ার পর তানিয়ার মৃত্যু হয়।

তানিয়া ও জামিলার মৃত্যু নিয়ে পুলিশ এখনো খোলাসা করে কিছু বলছে না। তাদের দাবি, মৃত্যুর আসল কারণ জানতে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট খুবই জরুরি। শিশু দুটির মৃত্যু নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়নাতদন্তে নারাজ ওই শিক্ষার্থীদের পরিবার। তবে মৃত্যুর আসল রহস্য উদঘাটনে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে বলে দাবি করছে পুলিশ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী তানিয়ার ডান পায়ের গোড়ালিতে পোকার কামড়ের দাগের চিহ্ন দেখতে পাওয়া গেছে কিন্তু জামিলার শরীরে কোন দাগই ছিল না। অথচ জামিলাও মারা গেছে হাসপাতালে নেওয়ার পথে।

এদিকে শিশু দুটির মৃত্যু নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টির হয়েছে। সেখানকার একাংশ বলছেন, শুক্রবার রাতের খাবার খেয়ে বিষক্রিয়ায় মারা যেতে পারে তারা। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে, একই খাবার খেয়েছে আবাসিকে থাকা আরও ১১জন শিক্ষার্থী। তাদের শরীরে বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ কিংবা উপসর্গ টের পাওয়া যায়নি। 

আরেক পক্ষ দাবি করছেন, হয়তো ওই দুজন শিক্ষার্থী মাদ্রাসার খাবার খাওয়ার আগে বাইরের খাবার খেয়েছিল। সেখান থেকেই বিষক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু ওই দুজন শিক্ষার্থীর পরিবারের দাবি, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বাইরের দোকানে গিয়ে কিনে কোন খাবার খাওয়ার নিয়ম নেই।

‘ডুবার মোড় শেফালী বেগম মহিলা নূরানী ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা’টি প্রতিষ্ঠা হয় ২০২৩ সালে। শুক্রবার রাতে ওই প্রতিষ্ঠানটির আবাসিকে ১৩জন শিক্ষার্থী ছিল উল্লেখ করে পরিচালক আশরাফ আলী বলেন, “শুক্রবার রাতে খাবার খেয়ে ছাত্রীরা সবাই ঘুমিয়ে যায়। গভীর রাতে তানিয়া ও জামিলা অসুস্থ হয়। তাদের দুজনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে জামিলা ও সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তানিয়ার মৃত্যু হয়।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা ধারণা করছি বিষাক্ত পোকামাকড়েরর কামড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে। একজনের পায়ে দাগও দেখেছি। কিন্তু আরেক জনের শরীরে কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি।”

নিহত তানিয়ার চাচা মশিউর রহমান বলেন, “খবর পেয়ে আমরা মাদ্রাসার পৌঁছার আগেই শিক্ষকরা তাদের দুজনকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। একজন রাস্তায় মারা যায়। আমার ভাতিজি তানিয়ার পায়ের গোড়ালির কাছে ক্ষত চিহ্ন দেখতে পেয়েছি। পরে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।” 

তিনি আরো বলেন, “মাদ্রাসাটির আশপাশে বাগান ও ঝোপঝাড় রয়েছে। সাপ আসার মতোই জায়গা। শিশুদের নিরাপত্তার বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত ছিল প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের।” তবে এসব বলার পরেও তানিয়ার চাচা বলেন, “আমরা কোন আইনি ব্যবস্থা নিব না।”

নিহত জামিলার চাচা রুবেল বলেন, “আমরা নিশ্চিত, সাপের কামড়েই মারা গেছে তারা দুজন। আমাদের কোন অভিযোগ নাই।”

গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আবদুল আলিম বলেন, “নিহতদের মধ্যে একজনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। অপরজন হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা গেছে। প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএনএম ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, “মাদ্রাসার দুজন বাচ্চা একসঙ্গে মারা গেছে, বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখছে পুলিশ। আমরা এখনো নিশ্চিত নই বাচ্চাগুলো কীভাবে মারা গেলো। সেজন্য মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, “একজনের পায়ে বিষাক্ত কিছুর কামড়ের ক্ষত চিহ্ন রয়েছে। তবে আরেক জনের শরীরে কোন চিহ্ন নেই। এটি সন্দেহজনক। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছাড়া কোনো মন্তব্য করা যাবে না। আমরা সরাসরি সাপের কামড় বলতেও চাচ্ছি না। কারণ এ ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে সে সুবিধা পেয়ে যাবে। আমরা এ বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি।”

ঢাকা/শিয়াম/এস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়