ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সন্তানের কল্যাণে সৎপথে ফেরা

জুবায়ের আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১৯ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
সন্তানের কল্যাণে সৎপথে ফেরা

আব্দুল করিম মিয়া এলাকায় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের একজন। বাজারে নিজ মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি দোকান আছে। দোকানের ভাড়া দিয়েই ভালোভাবে সংসার চলে, সন্তানদের লেখাপড়া করানোসহ মাসে বেশ মোটা অংকের টাকা সঞ্চয়ও করেন তিনি।

করিম মিয়া নিজে কোনো কাজ না করলেও এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যানের সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে রাজনীতি করেন। অঢেল সম্পত্তির মালিক হলেও প্রতারণায় পরিপক্ক করিম। সুযোগ পেলেই নিজের লোভী মানসিকতাকে জাগিয়ে তোলে স্বার্থসিদ্ধি করেন।

চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মেম্বারের সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলায় সরকারি সহায়তা সুযোগ পেলেই কুক্ষিগত করেন তিনি। নগদ টাকা কিংবা ত্রাণসামগ্রী যাই হোক ঘরে বৌয়ের কাছে দিলে বউও খুশি হয়ে যায়। বাবা মায়ের কথা শুনতে পায় করিম মিয়ার ৭ম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে ও ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে। দুজনেই বইয়ে পড়েছে গরীবের হক তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়াতে হয়। ছোট্ট দুই ভাই-বোনের কৌতূহল জাগে। আমাদের এত থাকতেও বাবা দরিদ্র মানু্ষের হক বাড়িতে নিয়ে আসে কেনো। বাবাকে জিজ্ঞেস করবে করবে করেও সাহস করতে পারে না দুই ভাই-বোন।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে এলাকায় বহু দরিদ্র মানুষ কর্মহীন হয়ে মানবেতন জীবনযাপন করছেন। সরকারি সহায়তা চেয়ারম্যানের হাত ধরে মেম্বারদের কাছে পৌঁছায়। মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছের লোক হওয়ায় সহায়তা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পায় করিম মিয়াও।

বিশ্বব্যাপী মানুষের কঠিন দুর্দিন চললেও মানবিক হতে পারেনি করিম মিয়া। চেয়ারম্যান কর্তৃক সরকার প্রদত্ত সহায়তা থেকে ৫ ঘরের সহায়তার প্যাকেট নিজ ঘরে নিয়ে যান তিনি। বিষয়টি খেয়াল করে তার ছেলে সুমন ও মেয়ে সালমা। দুইদিন দেখার পর এক সন্ধ্যায় বাবাকে প্রশ্ন করে।

আচ্ছা বাবা, আপনি দরিদ্র মানুষদের সহায়তা তাদের না দিয়ে ঘরে আনেন কেন? আমরা আগেও দেখেছি আপনি চেয়ারম্যান-মেম্বার আঙ্কেলদের থেকে অনেক কিছু ঘরে আনেন। আমরা বইয়ে পড়েছি, গরীব মানুষের হক থেকে তাদের বঞ্চিত করা অনেক বড় অপরাধ। এটা ভালো কাজ নয়।

করিম মিয়া মেজাজ গরম করেন সন্তানদের কথা শুনে। তিনি উত্তর দেন, ‘তোদের এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। নিজেদের কাজ কর।’

বাবার কথায় সন্তুষ্ট হয় না দুই-ভাইবোন। বাবাকে আবার বলে, আমাদের অনেক সম্পদ আছে। দোকান ভাড়া থেকেও অনেক টাকা পান আপনি। তাহলে এভাবে সরকারি সহায়তা ঘরে আনা ঠিক নয় আব্বা। এখন অনেক মানুষের ত্রাণ চুরির বিষয় প্রকাশ হচ্ছে। আপনি যা করছেন এসব সবাই জেনে গেলে আমাদের মান-সম্মান থাকবে না। আপনি নিজেও তখন সমাজে মুখ দেখাতে পারবেন না। তাছাড়া আমাদের তো কোনো অভাব নেই। আমরা চাইলেও অনেক মানু্ষকে সহায়তা করতে পারি। আপনি এসব বন্ধ না করলে আমরা লেখাপড়া করবো না, আমাদের কাজে লাগিয়ে দিন, লেখাপড়া করলেই তো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে।

সন্তানদের থামিয়ে দেন করিম মিয়া। এবার সত্যিই লজ্জায় পড়ে যান তিনি। পাশে থাকা করিম মিয়ার স্ত্রী জাহেদা বেগমও লজ্জিত হন সন্তানদের কথা শুনে।

করিম দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘আমাকে ক্ষমা কর তোরা। আমি এভাবে ভাবিনি কখনো। নিজের লোভকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। সুযোগ পেলেই অপরের হক নষ্ট করেছি। অথচ আমার সম্পদের অভাব নেই।’

সুমন ও সালমা বাবার কাছে ক্ষমা চায়, এভাবে মুখের উপর কথা বলার জন্য। বাবাকে পরামর্শ দেয়, আপনার তো অনেক টাকা আছে। আমাদের দোকানগুলোর ছোট ব্যবসায়ী ভাড়াটিয়াদের ১/২ মাসের ভাড়া মওকুফ করে দেন এবং আমাদের আশেপাশের সব দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের আপনি সাধ্যমতো সহায়তা করেন। এত দিন ঘরে যা এনেছেন, তা সবার মাঝে বণ্টন করে দেন। দেখবেন সবাই আপনার কত প্রশংসা করে, কত দোয়া করে। তখন আমাদেরও অনেক ভালো লাগবে।

সন্তানদের কথামতো সবকিছু করেন করিম মিয়া। এলাকার সবাই খুশি হয়। স্বয়ং চেয়ারম্যান-মেম্বারও প্রশংসা করেন করিম মিয়ার সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের। মানুষের ভালোবাসা পেয়ে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেন করিম মিয়া।

লেখক: শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)।

 

বিজেম/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়