ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পিটিএ স্বাক্ষর

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:০৪, ৬ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৮:২৫, ৬ ডিসেম্বর ২০২০
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে পিটিএ স্বাক্ষর

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্বে নতুন মাইলফলক স্থাপিত হলো।

রোববার (৬ ডিসেম্বর) রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এবং ভুটানের পক্ষে দেশটির ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার লোকনাথ শর্মা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ড. লোটে সেরিং ভার্চুয়ালি পিটিএ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. টান্ডি দর্জি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমসহ দুই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী এবং সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন।

চুক্তি স্বাক্ষরের পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যেকার সম্পর্কের আরও উন্নতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন। তারা দুই দেশের ঐতিহাসিক ও বিদ্যমান সুসম্পর্কের কথা তুলে ধরেন।

উল্লেখ‌্য, ১৯৭১ সালের ৬ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয়ের আগেই ভুটান প্রথম বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রথম দ্বিপাক্ষিক অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি বা প্রিফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (পিটিএ) চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর বাংলাদেশ ভুটানের বাজারে সামগ্রিকভাবে ১০০টি পণ্যে এবং ভুটান বাংলাদেশে ৩৪ টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাবে। পরবর্তী সময়ে আলোচনার মাধ্যমে আরও পণ্য তালিকায় সংযুক্ত করা হবে। এ চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক পিটিএ/এফটিএ স্বাক্ষরের যাত্রা শুরু হলো।

অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। ফলে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে প্রাপ‌্য কিছু বাণিজ্য সুবিধা হারাতে হবে। এ প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের অঙ্গীকার ও নির্দেশনার ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশ্ববাণিজ্যে বাংলাদেশের অংশীদারত্ব বাড়ানোর কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে আছে—বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তিগুলো সময়োপযোগী করা, পিটিএ এবং এফটিএ সস্পাদন করা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সদস্য। ডব্লিউটিওর বিধি-বিধান মেনে বাংলাদেশ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক পিটিএ করতে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালের ২২-২৩ আগস্ট ভুটানের সঙ্গে পিটিএ নেগোসিয়েশন কমিটির প্রথম সভা হয়। গত ১৬ জুন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সভায় খসড়া পিটিএ ও এর সঙ্গে সংযুক্ত রুলস অব ডিটারমিনেশন অব ওরিজিন নিজ নিজ দেশের অনুমোদনের পর স্বাক্ষরের জন্য চূড়ান্ত করা হয়। বিধি অনুযায়ী চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর ডব্লিটিওতে নোটিফাই করা হবে।

গত ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে মোট বাণিজ্য ছিল ১২.৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ০.৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে এবং একই সময়ে আমদানি করে ১২.১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দুই দেশের বাণিজ্য ৫৭.৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়। এ সময় বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৭.৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য। একই সময়ে ভুটান থেকে আমদানি হয় ৪৯.৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভুটান বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম স্বীকৃতি দেয়। এরপর থেকে সুদীর্ঘ ৫০ বছর ধরে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে। দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখার জন্য এদিন ভুটানের সঙ্গে পিটিএ স্বাক্ষরিত হলো।’

বাংলাদেশ ভুটানে যেসব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে, সেসব হলো—তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী (জুস, কনডেন্সড মিল্ক, বিস্কুট, পাউরুটি) কৃষিজাত পণ্য (যেমন: আলু) প্রসাধন সামগ্রী, টয়লেট্রিজ পণ্য (যেমন: সাবান ও শ্যাম্পু) শুঁটকি মাছ, সিমেন্ট, চা, প্লাইউড, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য প্রভৃতি। ভুটানের বোল্ডার, জিপসাম, ডোলোমাইট, ফল ও জুস, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য (যেমন: জ্যাম ও জেলি) মসলা, ফার্নিচার প্রভৃতি পণ্য বাংলাদেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে।

ঢাকা/হাসনাত/রফিক

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়