ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা 

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ১৭ জুলাই ২০২২   আপডেট: ০৮:৪০, ১৭ জুলাই ২০২২
রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা 

প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আকার বড় হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ছে। তবে কোনো অর্থবছরেই মূল বাজেটের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এনবিআর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সেই অনুযায়ী প্রতি মাসে গড়ে রাজস্ব আদায়ের কথা ২৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসেবে ১১ মাসে (জুলাই-মে) রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা তিন লাখ দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময় এনবিআর পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হয়েছে দুই লাখ ৫২ হাজার ৯২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ফলে ১১ মাসে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪৯ হাজার ৫৭৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। তবে এ রাজস্ব গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। এর আগের অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২০ হাজার ৭২ কোটি টাকা।

জানা গেছে, ১২ মাসে রাজস্ব আদায় দুই লাখ ৮০ হাজার থেকে দুই লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। কিন্তু  নতুন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এনবিআর খাতে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তিন লাখ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার হবে ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এই হার পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং এনবিআর কাঠামোতে  অর্জন করা সম্ভব নয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। 

তবে অর্থমন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গেল অর্থবছরের ৯ মাসে এনবিআর, নন-এনবিআর, কর বহির্ভূত খাতে রাজস্ব আদায়ের হার ছিল ৭০ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির হার গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ছিল ২০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এ সময়ে নন-এনবিআর ও কর বহির্ভূত খাতে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল যথাক্রমে ৭০ দশমিক ৯ এবং ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ।

সূত্র জানায়, খাতভিত্তিক রাজস্ব আয়ের হিসাব অনুযায়ী ১১ মাসে আমদানি ও রপ্তানি শুল্ক খাত থেকে আয় হয়েছে ৮০ হাজার ৪৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। স্থানীয় পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) থেকে ৯৫ হাজার ১৪ কোটি ৬৬ লাখ এবং আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৭৭ হাজার ২৮ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বাজেটে নির্ধারিত ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হবে না মনে করে সংশোধিত বাজেটে লক্ষ্য কমিয়ে এনবিআরকে টার্গেট দেওয়া হয় তিন লাখ ১ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত টার্গেট অনুযায়ীও ১১ মাসে রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি। অর্থবছরের বাকি এক মাসে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করা যাবে না।

সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের চেয়ে এবার রাজস্ব আদায় খুব বেশি খারাপ বলা যাবে না। একদিকে করোনা পরিস্থিতি চলমান, অন্যদিকে দেশে জিনিসপত্রের দাম কমানোর জন্য বিভিন্নখাতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। এতে রাজস্ব আদায় কমে গেছে।

গত ১১ মাসে রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি হয়েছে ভ্রমণ করে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ১৪৯ শতাংশ। করোনার কারণে গত অর্থবছরে বিদেশ ভ্রমণ প্রায় বন্ধ থাকায় এ খাতে রাজস্ব আদায় কমে গিয়েছিল। ২০২০-২০২১ অর্থবছরের ১১ মাসে ভ্রমণ কর খাতে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৩০৭ কোটি টাকা। সেখানে এবার একই সময়ে আদায় হয়েছে ৭৬৪ কোটি টাকা। এবার আমদানি শুল্ক প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আমদানি পর্যায়ে মূসক প্রবৃদ্ধি ১৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আমদানি পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। একই সময়ে আয়কর খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। মূসক খাতে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়