ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

বাবার কথা স্মরণ করে কাঁদলেন এটিএম শামসুজ্জামানের মেয়ে

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ১৫ মে ২০২১   আপডেট: ০৮:০৯, ১৬ মে ২০২১
বাবার কথা স্মরণ করে কাঁদলেন এটিএম শামসুজ্জামানের মেয়ে

‘বাসায় বসে বসে ভাবছি— বাবার বাসায় যাব কিন্তু তাকে দেখব না। প্রতিবারের মতো এবার বাবার কাছে সালামি পাব না। বাবা ছাড়া প্রত্যেকটা দিনই আমাদের কেমন কাটে তা আমরা ছাড়া কেউ বুঝবে না। আম্মা খুবই একা হয়ে গেছেন। সারাটা দিনই বাবার কথা ভাবেন। এবার ঈদ মায়ের কেমন লাগবে!’ কথাগুলো বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদেন কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের মেয়ে কোয়েল।

চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান এই বরেণ্য অভিনেতা। এবার তাকে ছাড়া প্রথম ঈদ করতে হচ্ছে তার স্ত্রী সন্তানদের। প্রতিদিন নামাজে বসে বাবার জন্য দোয়া করেন মেয়ে কোয়েল। তিনি বলেন, ‘নামাজ পড়ে দোয়া করছি। আমরা আমাদের বাবাকে কিছু দিতে পারিনি। আল্লাহ আমাদের দোয়ার অসিলায় বাবাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।’

বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “ঈদের দিন বাসায় যে যাব বাবাকেতো আর দেখব না। প্রতি বছর আমরা সকালেই বাবার বাসায় চলে যেতাম। বাবা প্রত্যাশা করতেন কখন যাব। বার বার মাকে বলত— কখন আসবে? ঈদের দিন সকালে গিয়ে আব্বার সঙ্গে দুইদিন থাকতাম। আব্বা অসুস্থ হওয়ার পর আগেই জিজ্ঞেস করত, ‘কয়দিন থাকবা?’ একদিনতো রাগই হয়ে বলেন, ‘আমি যেদিন থাকব না ওইদিন তোমরা আর আইসো না। ওইদিন আর বলব না আসার জন্য।”

তিনি আরো বলেন, ‘আমি আব্বার নখ কেটে দিতাম। আমি কেটে দিলে আব্বা সবাইকে দেখাতেন। নখ বড় হলে কারো কাছে কাটাতেন না। আমার জন্য অপেক্ষা করতেন। আমার নখ কাটা নাকি সুন্দর হয়।'

বাবার কাছ থেকে সালামি নেওয়ার আনন্দ আর বাবাকে কাছে না পাওয়ার আক্ষেপও কম নয়। এ প্রসঙ্গে কোয়েল বলেন, ‘আব্বার কাছে সবসময়ই সালামির দাবি থাকত। বিশেষ করে আমাদের ছেলে মেয়েরা বেশি দাবি করত। ছোটবেলায় আব্বাকে খুব একটা পেতাম না। সিনেমার শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। আমার চাচ্চুর সঙ্গে কেনাকাটা করতাম। আমার ছোট চাচা ও আম্মার সঙ্গে মার্কেটে গিয়েছি।'

বাংলা চলচ্চিত্রে বিশেষ করে খল চরিত্রে অভিনয় করে খ্যাতি পেয়েছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। গ্রামের মন্দ মোড়লের চরিত্রে তার অনবদ্য অভিনয় আজও বহু দর্শকের চোখে ভাসে। এছাড়া দীর্ঘ অভিনয় জীবনে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। হয়েছেন প্রশংসীত। পেয়েছেন একুশে পদক ও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার। খল চরিত্রের সঙ্গে  কমেডি মিশিয়ে তৈরি করেন নতুন এক ধারা। টেলিভিশনের পর্দাতেও তিনি ছিলেন সফল। 

নন্দিত এই অভিনেতা গত দুই বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন। যে কারণে শুটিং ছিল না। বাসা ও হাসপাতালেই কেটেছে তার। এ প্রসঙ্গে কোয়েল বলেন ‘আব্বা অসুস্থ হওয়ার পরে গত দুই বছর তাকে আমরা বেশি পেয়েছি। গত কোরবানির ঈদে হাসপাতালে কাটিয়েছিলেন। তখন হঠাৎ করেই মনে হয়েছেন উনি কোরবানির মাংস খাবেন। গতবার আমরা বাসায় কোরবানি করিনি৷ নারিন্দা খানকায়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরে আমাদের কোরবানির মাংস জোগাড় করতে হয়েছে। আমার এক মামির বাসা থেকে মাংস নিয়ে আসি। আব্বা হুটহাট করে বলতেন। গত দুই বছর আব্বার খুব কাছাকাছি ছিলাম। এগুলো এখন মনে হলে খুব খারাপ লাগে। মনে হচ্ছে আর একটু বেশি কাছাকাছি থাকতে পারতাম।’

১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন এটিএম শামসুজ্জামান। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। এ পর্যন্ত শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন। প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র পর্দায় তার আগমন ১৯৬৫ সালে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি।

ঢাকা/রাহাত সাইফুল/মারুফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়